Narendra Modi

কেন গুরুত্বপূর্ণ

শাসক দল বিশেষ ভাবে নির্ভর করছে, তার নাম বিরোধী ভোটের বিভাজন। দ্বিদলীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দীর্ঘকাল অভ্যস্ত গুজরাতে এ বার তৃতীয় শক্তি হিসাবে সাড়া ফেলেছে আম আদমি পার্টি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:৪১
Share:

মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধী থেকে নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী— ভারতীয় রাজনীতির ইতিহাসে গুজরাতের অবদানকে অ-তুলনীয় বললে ভুল হয় না। তবে প্রধানমন্ত্রী মোদীর পক্ষে এই বিধানসভা নির্বাচন যে বিশেষ গুরুত্ব অর্জন করেছে, তা কোনও ইতিহাসের কারণে নয়। তাঁর প্রকৃত লক্ষ্য ভবিষ্যৎ, যে ভবিষ্যতের নাম ২০২৪। ঘরের মাঠে ধাক্কা খেলে তাঁর ভাবমূর্তিতে বড় রকমের চোট লাগতে বাধ্য। তা জানেন বলেই তিনি এই নির্বাচনের প্রচারপর্বে সর্বশক্তিতে আত্মনিয়োগ করেছেন। কেবল প্রকল্পের পর প্রকল্প ঘোষণার বাঁধাধরা কৌশল নয়, কেবল মেরুকরণের অনিবার্য ছক নয়, তিনি রাজ্যবাসীকে সরাসরি জানিয়েছেন, দিল্লিতে তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন, কিন্তু এই রাজ্যে ঘরের লোক। অর্থাৎ, দলের ঊর্ধ্বে, রাজ্য সরকারের সাফল্য বা ব্যর্থতার ঊর্ধ্বে ভোটদাতারা যেন তাঁকে বিমুখ না করেন। লোকসভা নির্বাচনকে ব্যক্তি-সর্বস্ব প্রতিযোগিতায় রূপান্তরিত করবার কৌশল প্রয়োগে তিনি সফল। পর পর দু’বার। গুজরাতেও সেই একই মডেল। এই নির্বাচনে অন্য সমস্ত হিসাবনিকাশের বাইরে যে ‘এক্স ফ্যাক্টর’টি সক্রিয়, তার নাম নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement

এই বাস্তব আকস্মিক নয়, প্রধানমন্ত্রীর উপর তাঁর দলের বিশেষ নির্ভরশীলতার অভিজ্ঞান। নির্ভরশীলতা কেবল এই কারণে নয় যে, গুজরাত তাঁর স্বভূমি। তার পাশাপাশি আছে এই সত্যও যে, রাজ্য সরকার তথা শাসক দলের ‘নিজের জোর’-এ সাফল্যের যথেষ্ট ভরসা নেই। ২০০২ সালের ‘যুগান্তকারী’ নির্বাচন থেকে দু’দশকে রাজ্য বিধানসভায় বিজেপির সদস্যসংখ্যা ক্রমাগত কমেছে। ২০১৭ সালের ফলাফলে যখন দেখা যায় কংগ্রেস তার ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছে, তখনই দলনেতারা রীতিমতো উদ্বিগ্ন বোধ করেছিলেন। গত পাঁচ বছরে সেই উদ্বেগ দূর হয়নি, এক অর্থে তীব্রতর হয়েছে, যার মোকাবিলা করতে গিয়ে মাঝ পথে মুখ্যমন্ত্রী পরিবর্তিত হয়। এক দিকে সেই পরিবর্তন এবং অন্য দিকে হার্দিক পটেলের গোত্রান্তর, এই দুই ঘটনা বা কৌশল পটেল-ভোটে ভাঙন রোধে কতটা সক্ষম হবে, তা জানার জন্য আরও এক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে, তবে এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে শাসক দল হয়তো কিছুটা ঘর সামলাতে পেরেছে। কিন্তু রাজ্য অর্থনীতির সমস্যা, পরিকাঠামোর দুর্বলতা, বিশেষত জলাভাব এবং কৃষকদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ নিয়ে দু’দশকের শাসকের চিন্তা স্বাভাবিক। প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্প-ঘোষণা, প্রতিশ্রুতি এবং ভূমিপুত্র-নির্ভর আবেগ দলের পক্ষে অপরিহার্য ছিল।

অন্য যে বিষয়টির উপর শাসক দল বিশেষ ভাবে নির্ভর করছে, তার নাম বিরোধী ভোটের বিভাজন। দ্বিদলীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দীর্ঘকাল অভ্যস্ত গুজরাতে এ বার তৃতীয় শক্তি হিসাবে সাড়া ফেলেছে আম আদমি পার্টি। গত নির্বাচনে এই দল কিছুই করতে পারেনি, কিন্তু এ বারের পরিস্থিতি অন্য রকম। তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ, বিজেপির নেতারা প্রকাশ্যে আপ-কে গ্রাহ্যই করতে চাইছেন না, বারংবার জোর গলায় বলছেন যে, কংগ্রেসই তাঁদের প্রতিপক্ষ। যে কংগ্রেসকে সর্বপ্রকারে নস্যাৎ করতে তাঁদের ক্লান্তি নেই, তাকে এই গুরুত্ব দেওয়ার অন্তরালে আপ সম্পর্কে হিসাবনিকাশ অবশ্যই সক্রিয়। বিরোধী ভোট ভাগ হলে শাসকের লাভ— এই সহজ ও বহুলপরিচিত অঙ্কটির দিকে বিজেপির নায়করা অধীর আগ্রহে তাকিয়ে থাকলে বিস্ময়ের কিছু নেই। বস্তুত, রাজ্যের বিরোধী পরিসরটিতে বড় রকমের কোনও পরিবর্তন ঘটবে কি না, এই নির্বাচনে সেটিও বড় প্রশ্ন। আপ-এর উদয় এবং কংগ্রেসের অস্ত— গুজরাতের রাজনীতি যদি এমন একটি পরিণামের দিকে অগ্রসর হয়, তার প্রভাব সর্বভারতীয় রাজনীতিতে পড়তে পারে। সেখান থেকে শুরু হতে পারে ভারতীয় রাজনীতির পরিসরে গুজরাতের অবদানের এক নতুন ইতিহাস।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement