financial crisis

অপচয়

পশ্চিমবঙ্গে কৃষকরা পিএম-কিসান এবং কৃষকবন্ধু, কেন্দ্র ও রাজ্যের এই দু’টি প্রকল্প থেকেই টাকা পাচ্ছেন, যা কখনওই একটি সুসংহত নীতি হতে পারে না। 

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২২ ০৭:০০
Share:

একেবারে না হওয়ার চাইতে বরং দেরিতে হওয়া ভাল, এই বিলেতি প্রবাদ মনে পড়ে যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক প্রস্তাবে। শ্রম দফতরকে তিনি বলেছেন, সরকারি খরচে মেলা আয়োজন না করে সেই টাকা খরচ হোক শ্রমজীবীদের কাজ দেওয়ার প্রকল্পে। মেলা-খেলায় সরকারি টাকা ব্যয় করা অনর্থক, বহু দিন ধরেই এমন দাবি করে আসছেন বিরোধীরা। এমনকি সরকারি আধিকারিকরাও ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন, সরকারের ভাঁড়ারে যখন টানাটানি চলছে, তখন বাজেট-বহির্ভূত প্রকল্পে খরচ না করাই ভাল। বিলম্বে হলেও মুখ্যমন্ত্রীর বোধোদয় হল। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের বিপুল কর্মহীনতা ও দারিদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী যে রোজগারের নিশ্চয়তাকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন, এতে আশা জাগাই স্বাভাবিক। কিন্তু সে আশার ফুলকি অচিরেই নিবে যেতে চায় যখন মনে পড়ে, ২০২২ সালের দুর্গাপুজো উপলক্ষে মমতা ক্লাবগুলির অনুদানের অঙ্ক বাড়িয়েছেন। উন্নয়নের সঙ্গে সম্পর্কহীন খাতে ২৪০ কোটি টাকা খরচের পরে মমতার মিতব্যয়ী ভাবমূর্তি নির্মাণ করা কিছু কঠিন। বিভিন্ন প্রকল্পে ভাতা-অনুদানের অঙ্ক বাড়ানো, অথবা শর্ত শিথিল করে সেগুলির বিস্তার বাড়ানোও ব্যয় সঙ্কোচনের চেষ্টার সপক্ষে সাক্ষ্য দেয় না। অপচয় হয়েছে নানাবিধ অপরিকল্পিত প্রকল্পেও— ‘দুয়ারে রেশন’ রূপায়ণ করতে গিয়ে কয়েকশো কোটি টাকা গুনাগার গুনেছে রাজ্য, অবশেষে সেই প্রকল্প স্থগিতও করতে হয়েছে আদালতের নির্দেশে।

Advertisement

আজ শ্রমিক মেলা স্থগিত করতে চাইছে সরকার। কিন্তু প্রশ্ন উঠবে, গত কয়েক বছর জেলায় জেলায় শ্রমিক মেলা করে কতটুকু লাভ হয়েছে? শ্রমজীবীরা তাঁদের প্রাপ্য সম্পর্কে আরও সচেতন হয়েছেন কি না, অথবা আরও বেশি করে তাঁরা সরকারি প্রকল্পগুলির সুবিধার নাগাল পেয়েছেন কি না, তার পরিমাপ কে করছে, কী ভাবে? সেই সংক্রান্ত তথ্যই বা কোথায়? রাজকোষের প্রতিটি টাকার হিসাব দিতে সরকার দায়বদ্ধ। অথচ তৃণমূল সরকার কী উদ্দেশ্যে, কোন খাতে, কত টাকা খরচ করছে, তা বাজেটেও স্পষ্ট করা হয় না। যে কোনও সঙ্কটের মুখে পড়লে তৃণমূল সরকার একটি নতুন প্রকল্পের সূচনা করে, যেন সদিচ্ছার ঘোষণাই সরকারের কাজ। কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গের একশো দিনের কাজের প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন করেনি, তাই রাজ্য সরকার নিজের খরচে শ্রমিকদের কাজ দিতে চাইছে।

এই সিদ্ধান্ত আপত্তিকর। প্রথমত, কেন বার বার কেন্দ্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে সমান্তরাল প্রকল্প ঘোষণা করছে রাজ্য? এর আগে স্বাস্থ্য বিমা কিংবা কৃষক অনুদান নিয়ে এমন পদক্ষেপই করেছে রাজ্য। রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক, কোনও দিক থেকেই তার ফল তৃণমূল সরকারের জন্য বিশেষ সুবিধাজনক হয়নি, বরং বিপুল ক্ষয় হয়েছে রাজকোষে। আজ পশ্চিমবঙ্গে কৃষকরা পিএম-কিসান এবং কৃষকবন্ধু, কেন্দ্র ও রাজ্যের এই দু’টি প্রকল্প থেকেই টাকা পাচ্ছেন, যা কখনওই একটি সুসংহত নীতি হতে পারে না। অথচ, কৃষি বা শিল্পের পরিকাঠামোর উন্নতি, যা সরকারের প্রধান কর্তব্য, তার জন্য কোনও সরকারই যথেষ্ট ব্যয় করছে না। দ্বিতীয়ত, কেন্দ্র যে টাকা দিতে দায়বদ্ধ, রাজ্য সরকার তা আদায় করতে পারছে না কেন? একশো দিনের কাজের মতো সুবৃহৎ প্রকল্প রাজ্য নিজের টাকায় চালাবার পরিকল্পনা নেওয়াই তো অপরিণামদর্শিতা। ঠিকাদার-নিযুক্ত শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি মেটানোকে আদৌ এনআরইজিএ-র বিকল্প বলা যায় কি না, সে প্রশ্নও উঠেছে। অন্যান্য বিরোধী রাজ্য কেন্দ্রের তহবিল থেকে ওই প্রকল্পের টাকা পাচ্ছে, সেখানে পশ্চিমবঙ্গই কেবল ব্যর্থ হচ্ছে কেন? এ রাজ্যে যখন সরকারি কর্মীদের পেনশন, ডিএ আটকে রয়েছে, তখন বাড়তি খরচের অঙ্গীকার করা অনর্থক। খরচে রাশ টানতে গেলে রাজ্য সরকারকে দক্ষ এবং স্বচ্ছ হতে হবে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement