Law

দণ্ডনীয়

উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে গোষ্ঠী সংঘর্ষের আগে বিজেপি নেতা অনুরাগ ঠাকুর প্রকাশ্যে দেশের ‘গদ্দার’ তথা বিশ্বাসঘাতকদের গুলি করতে বলেছিলেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২২ ০৫:২২
Share:

প্রতীকী ছবি।

আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে যে কথা বললে তা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে, হাসিমুখে বললে সে কথাই অপরাধ নয়— দিল্লি হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ। উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে গোষ্ঠী সংঘর্ষের আগে বিজেপি নেতা অনুরাগ ঠাকুর প্রকাশ্যে দেশের ‘গদ্দার’ তথা বিশ্বাসঘাতকদের গুলি করতে বলেছিলেন, সেই ঘৃণাভাষণের অভিযোগ এবং এফআইআর সংক্রান্ত মামলার সাম্প্রতিক শুনানিতেই হাই কোর্টের মন্তব্য: নির্বাচন-আবহে বক্তৃতা আর অন্য সময়ের বক্তৃতা, আক্রমণাত্মক ভাবে বলা আর হাসিমুখে বলা— এই দুইয়ের মধ্যে ফারাক করতে না পারলে, ভারসাম্য বজায় রাখতে না পারলে সব রাজনীতিকের বিরুদ্ধে হাজার হাজার এফআইআর দায়ের হবে।

Advertisement

আদালতের বক্তব্যের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই প্রশ্ন করা বিধেয় যে, এই বক্তব্যে রাজনীতিকরা অন্যায় প্রশ্রয় পাবেন না তো? বিজেপি শাসনামলে এমনিতেই রাজ্যে রাজ্যে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-মন্ত্রীদের অকথা-কুকথাস্রোতের বিরাম নেই, দল ও উপরমহলের ছত্রছায়ার অপব্যবহার করে তাঁরা এমন এমন কথা বলেন যা সমর্থকদের উত্তেজিত করে, এমনকি হিংসাতেও প্ররোচনা দেয়। গিরিরাজ সিংহ থেকে অনুরাগ ঠাকুর একটি-দু’টি দৃষ্টান্ত মাত্র— তালিকাটি দীর্ঘ, এবং প্রবণতাটি পরিষ্কার: প্রকাশ্যে প্ররোচনামূলক কুবাক্য বলার অভ্যাসটি রাজনীতিকদের ক্ষেত্রে নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিল্লির বিধানসভা নির্বাচন-পূর্ব জনসভায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর সিএএ-বিরোধী ‘দেশের বিশ্বাসঘাতক’দের শুধু ‘গোলি মারো’ বলেই ক্ষান্ত হননি, উপস্থিত জনতাকেও তাঁর সঙ্গে সেই স্লোগান দিতে প্ররোচিত করেছেন। নরেন্দ্র মোদীকে যাঁরা ভোট দেননি তাঁদের স্থান হবে পাকিস্তানে, বলেছিলেন বিহারের বিজেপি নেতা গিরিরাজ সিংহ। তাঁর বিরুদ্ধে অবশ্য এফআইআর হয়েছিল, গ্রেফতারি পরোয়ানাও বেরিয়েছিল। আশঙ্কা এখানেই, হাই কোর্টের সাম্প্রতিক বক্তব্য থেকে ‘শিক্ষা’ নিয়ে এ বার হয়তো রাজনীতিকরা হাসিমুখে কুকথা বলা অভ্যাস করবেন। কেউ প্রতিবাদ করলে বা আদালতে গেলে বলবেন, ও তো ভোটের আগে বা হালকা চালে বলা, ও কিছু নয়!

এ সব ক্ষেত্রে বরং তীব্র ভর্ৎসনা, কঠোর দণ্ডবিধানই বাঞ্ছনীয়। এমন নয় যে বিচারপ্রক্রিয়ায় সে ব্যবস্থা নেই— ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩এ, ২৯৮-এর মতো ধারা বা ‘পিপল’স রিপ্রেজ়েন্টেশন অ্যাক্ট’-এর বলে এর আগে রাজনীতিকরা অভিযুক্তও হয়েছেন। তবু সেগুলি বিরল ব্যতিক্রম হয়েই থেকে যায়, নেতাদের বেপরোয়া অকথা-কুকথার ধারা অব্যাহত থাকে। প্রশাসন ও আইনের নিয়ন্ত্রণ রাজনীতিকদেরই হাতে, এই পরিস্থিতিতে বিচারব্যবস্থাও নেতা-মন্ত্রীদের কুবাক্যকে হালকা চালে বা নির্বাচনের আগে বলার কারণে বেকসুর খালাস দিলে ক্ষমতাসীন নেতা-মন্ত্রীদের ঔদ্ধত্য সীমা ছাড়াবে, হাসিমুখে বলা কথার জেরেও হিংসার আগুন জ্বলা আটকাবে না। উগ্র হিন্দুত্ববাদী জাতীয়তাবাদের রাজনীতিতে এই কুভাষা একটি তাৎপর্যপূর্ণ অস্ত্র। আদালতের রায়ে সেই অস্ত্রে শাণ পড়লে তা দুর্ভাগ্যজনক। রাজনীতিকদের যথেচ্ছাচারে প্রশাসন যখন ব্যর্থ, আইন লঙ্ঘিত, ভারতের বিচারব্যবস্থা আগে এমন বহু ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের সর্বোচ্চ রক্ষক হয়ে দাঁড়িয়েছে। উচ্চ আদালতের সেই দৃঢ়চিত্ত কঠোরতাই এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement