Road Safety

প্রতিশ্রুতি-হীন

শুধুমাত্র লালবাজারের তথ্য জানাচ্ছে, ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩-এর বড়দিনে হেলমেটহীন বাইকচালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা করার সংখ্যা তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:৪২
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

পুরনোকে পিছনে ফেলে নতুনকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্ববাসী। নতুন বছর, নতুন শপথ, নতুন প্রতিশ্রুতি— পুরনো ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নব উদ্যমে আগামী দিনে
এগিয়ে চলা, এমনটাই হওয়া কাম্য। কিন্তু কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গ ঠিক করেছে, শিক্ষা নেওয়ার দরকার নেই, পুরনো ভুলকে নতুন বোতলে চালান করাই যথেষ্ট। গত কয়েক বছর যাবৎ কলকাতার বড়দিন ও ইংরেজি বর্ষবরণ-উৎসবের অভিজ্ঞতা দেখে সেটাই মনে হল। কলকাতা শহর সেই সহজ, স্বাভাবিক নিয়মে চালিয়ে গেছে তার উৎসব-কেন্দ্রিক বিশৃঙ্খলা এবং অ-নিয়ম। জানতে ইচ্ছা করে, নাগরিকরা যখন নতুন বছরে তাঁদের প্রতিশ্রুতি ইত্যাদি এক বার ঝালিয়ে নেন, তার মধ্যে নিজেদের ব্যবহারের বিষয়টি থাকে না কেন— বিশেষ করে পরিবেশ এবং সামাজিক অবক্ষয়ের এই চরম পরিস্থিতিতে? না কি উৎসবের দিনগুলিতে একই রকম নিয়মহারা, শৃঙ্খলাহীন যাপনেই তাঁরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ? এমনই ভয়ঙ্কর সে প্রতিজ্ঞা, কোনও অঘটন, কোনও বিপদ-সম্ভবনাতেও তার এতটুকু নড়চড় ঘটানো যাবে না?

Advertisement

শুধুমাত্র লালবাজারের তথ্য জানাচ্ছে, ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩-এর বড়দিনে হেলমেটহীন বাইকচালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা করার সংখ্যা তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ধরা পড়া মত্ত গাড়িচালকের সংখ্যাটিও উপেক্ষা করার নয়। ধরেই নেওয়া চলে, পুলিশের হিসাবের বাইরেও কত জনের অপরাধ চোখ এড়িয়ে গেল, আর কত জন পুলিশের নাকের ডগায় অপরাধ করেও পার পেয়ে গেলেন। সেই সংখ্যাটি এর কয়েক গুণ বেশি হবেই। বস্তুত, সাম্প্রতিক কালে উৎসব পালন আর স্বেচ্ছাচার নগরবাসীর একাংশের কাছে সমার্থক। অনুমান, পুলিশ-প্রশাসনের উদাসীনতা আর উৎসব পালনের রাজনৈতিক আতিশয্য এই স্বেচ্ছাচারে ইন্ধন জোগাচ্ছে। নয়তো পুলিশের সামনে কী ভাবে বাইকের পিছনে হেলমেটহীন একাধিক জনকে বসিয়ে গতির তুফান তোলা যেতে পারে? মধ্যরাতে সাউন্ড বক্সের দাপটে ‘অন্য’দের স্বস্তিকে তছনছ করার লাইসেন্স পাওয়া যায়? মাস দুয়েক আগে কালীপুজোতেও দেখা গিয়েছে, শব্দবাজির শব্দসীমা সংক্রান্ত প্রশাসনিক শিথিল নিয়মের ফাঁক গলে বিভিন্ন এলাকায় শব্দের দাপট মাত্রা ছাড়িয়েছে। দীর্ঘ দিন যাবৎ আতশবাজির দূষণ, শব্দবাজির তাণ্ডব সংক্রান্ত বিষয়ে পরিবেশ সচেতন মানুষের উদ্যোগ বিফলে দিয়ে কলকাতা থেকে গিয়েছে কলকাতাতেই। বরং ৯০ ডেসিবেলের এ-যাবৎ কালের ব্যতিক্রমী তকমাটুকুও প্রশাসনিক সৌজন্যে ঘুচিয়ে ‘সর্বভারতীয়’ উচ্ছৃঙ্খলতাকে কলকাতা সাগ্রহে আলিঙ্গন করে নিয়েছে।

যে শহর দূষণক্লান্ত, সেখানে বছর শুরুর সন্ধিক্ষণে দেদার আতশবাজি ফেটেছে। বিভিন্ন জায়গায় শব্দদৈত্যও বোতলবন্দি থাকেনি। উপরি পাওনা, কোভিডের নতুন উপরূপটি আরও একটি ঢেউয়ের আশঙ্কা জাগাচ্ছে। অথচ, এ সবের মুখে দাঁড়িয়েও কলকাতাবাসী একই রকম নিরুত্তাপ, বল্গাহীন, ঠিক অতিমারির আগের বছরগুলোর মতোই। চিকিৎসকেরা আতঙ্কগ্রস্ত না হয়ে ব্যক্তিগত সুরক্ষাবিধি মেনে চলার উপরেই অধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন। অথচ শহরবাসী অন্যের সুরক্ষা তো দূর, নিজের সুরক্ষাটুকুও নিশ্চিত করতে অনিচ্ছুক। তাই এক সুশৃঙ্খল, পরিচ্ছন্ন উৎসব-যাপনের প্রতিশ্রুতি এ শহরে দূরাশা হয়েই থেকে যাবে। নতুন বছরেও। আগামী অনেক বছরেও।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement