Jagdeep Dhankar

শাসকের আইন?

রাজ্যপাল জানাইয়াছেন, তাঁহার সম্মতি ব্যতিরেকে অদ্যাবধি ২৫ জন উপাচার্য নিয়োগ করিয়াছে সরকার।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২২ ০৮:১৩
Share:

ফাইল চিত্র।

রাজ্যে আইনের শাসন নাই, শাসকের আইন বলবৎ— এই বার অনুযোগ করিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। রাজ্য সরকারের সহিত তাঁহার সাম্প্রতিক সংঘর্ষবিন্দু: ডায়মন্ড হারবার মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়। গত সপ্তাহে উচ্চশিক্ষা দফতর রাজ্য বি এড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী উপাচার্য ও সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্যের অতিরিক্ত দায়িত্ব দিবার প্রস্তাব আনিলে আচার্য টুইট করিয়া তাহা খারিজ করেন, এবং কলা শাখার ডিন তপন মণ্ডলকে সেই পদে নিয়োগ করেন। তপনবাবু যদিও শিক্ষাসচিবকে অপারগতার কথা জানান, এবং উচ্চশিক্ষা দফতর পূর্বসিদ্ধান্ত বজায় রাখে। অপর পক্ষে, মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান স্থায়ী উপাচার্য অনুরাধা মুখোপাধ্যায়কে সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হইয়াছে। সুখের কথা, এই রাজ্যে শিক্ষা প্রশাসকেরা আইনানুসারে সার্চ কমিটি মারফত নিযুক্ত হইতেছেন, কাহারও খেয়ালখুশিমতো নহে। মনোনীত আচার্য যখনই নির্বাচিত সরকারকে টপকাইয়া এক্তিয়ার-বহির্ভূত দায়িত্ব লইয়াছেন, আইন পথের কাঁটা হইয়াছে।

Advertisement

রাজ্যপাল জানাইয়াছেন, তাঁহার সম্মতি ব্যতিরেকে অদ্যাবধি ২৫ জন উপাচার্য নিয়োগ করিয়াছে সরকার। আইন কিন্তু বলিবে, উপাচার্য সন্ধানের পর প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য তাহা আচার্য-রাজ্যপালের নিকট প্রেরণ করে সার্চ কমিটি, কিন্তু তাহা না মিলিলেও উচ্চশিক্ষা দফতর তাঁহাদের নিয়োগ করিতে পারে। অর্থাৎ আচার্য কেবলমাত্র অনুমোদনেরই কর্তৃপক্ষ— যাহাও আবার, আইন অনুযায়ী, শেষ কথা নহে। অতএব এই কারণে যদি কেহ পশ্চিমবঙ্গে আইনের শাসনের অনস্তিত্বের কথা বলেন, তবে বুঝিতে হয় যে, তাঁহার মন্তব্যের উদ্দেশ্য ভিন্নতর। যেন তেন প্রকারেণ রাজ্যের ‘আইনহীনতা’ প্রচার করাই তাঁহার অভীষ্ট। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল নিজের অধিকারের সীমাটি না জানিয়া এক্তিয়ারের বাইরে কথা বলিতেছেন ও কাজ করিতেছেন, এমন মনে করা অসম্ভব। তিনি সম্ভবত স্থির করিয়াছেন, অধিকারের সেই সীমা তিনি মানিবেন না! তাই পদে আসীন হওয়া ইস্তক ধনখড় খুচরাস্য খুচরা বিষয়ে রাজ্য সরকারকে বিব্রত করিবার দায়িত্বটি গ্রহণ করিয়াছেন। রাজ্যকে ‘অস্থিরতাপ্রবণ’ দেখাইতে পারিলে কাহার লাভ, ব্যাখ্যা নিষ্প্রয়োজন।

‘শাসকের আইন’ সংক্রান্ত অভিযোগটির ধারাবাহিকতা দেখিলে এই রাজনীতির বৃহত্তর প্রেক্ষিতটি বুঝিয়া লওয়া যায়। ইতিপূর্বে রাজ্যে ভোট-পরবর্তী হিংসার তদন্তে এই মন্তব্য করিয়াছিল জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। হিংসার ঘটনা বহুলাংশে সত্য, কিন্তু তাহাতে সমগ্র রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ভাঙিয়া পড়ে নাই, রাজনৈতিক হিংসা পশ্চিমবঙ্গ-নির্দিষ্টও নহে। তৎসত্ত্বেও এ-হেন প্রচার চালু হইয়াছে, এবং রাজ্যপালের কণ্ঠে তাহার অনুরণন শোনা যাইতেছে। এই মুহূর্তে পাঁচ রাজ্যের আসন্ন নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সরকারের রণহুঙ্কারে ‘ডবল এঞ্জিন’ ধ্বনি শুনা যাইতেছে— পশ্চিমবঙ্গ বিষয়ক প্রচার সেই চিন্তাকাঠামোরই একটি অংশ। রাজ্যপাল নামক শীর্ষ পদটি যে রাজনীতির সেই ক্লিন্ন লক্ষ্যে ব্যবহৃত হইতেছে, তাহাকে আর কেবল দুর্ভাগ্য বলা যায় না, তাহা বিপজ্জনক। গণতান্ত্রিক দেশের পক্ষে বিপজ্জনক। রাজনৈতিক স্থিতির জন্য বিপজ্জনক।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement