Central Vista Project

বিলম্ব

কোনও একটি বিশেষ মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাকে সুবিধা করিয়া দেওয়ার জন্যই কি এত দিন অবধি আইনটি লইয়া নীরব ছিল সরকার?

Advertisement
শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২১ ০৬:১৭
Share:

ফাইল চিত্র।

সাত বৎসর দুই মাস। কেন্দ্রে এনডিএ সরকারের ক্ষমতায় আসিবার পর এত দিন সময় কাটিয়া গিয়াছে। এই সময়কালে কোন কাজটি কেন্দ্রীয় সরকার সর্বাধিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখিয়া করিয়াছে, সেই প্রশ্নের একটিই উত্তর হয়— কংগ্রেস আমলের চিহ্নগুলিকে মুছিয়াছে। যোজনা কমিশনকে বিদায় করিয়া নীতি আয়োগ প্রতিষ্ঠাই হউক, বা খেলরত্ন সম্মান হইতে রাজীব গাঁধীর নাম মুছিয়া দেওয়া, অথবা বহু স্মৃতি বিজড়িত সংসদ ভবনের পরিবর্তে সেন্ট্রাল ভিস্টা গড়িবার ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত— কংগ্রেস আমলের চিহ্ন রাখিতে নরেন্দ্র মোদী নারাজ। অথচ, ইউপিএ সরকারের সর্বাপেক্ষা বড় ভুলটি সংশোধন করিতে এনডিএ-র সময় লাগিল সাত বৎসর দুই মাস কয়েক দিন। ২০১২ সালে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় রেট্রোস্পেকটিভ করের ব্যবস্থা করিয়াছিলেন— এই আইনবলে সরকার চাহিলে ১৯৬২ সালের পর ভারতে যে কোনও বিদেশি পুঁজির লেনদেনের উপর কর আরোপ করিতে পারিবে। প্রণববাবুর সিদ্ধান্তটি ভয়াবহ ছিল। অর্থশাস্ত্রের কোনও যুক্তিতেই এই গোত্রের করব্যবস্থাকে সমর্থন করা মুশকিল। তখন বিরোধী আসনে আসীন বিজেপি নেতারা তারস্বরে এই আইনের বিরোধিতা করিতেন। উচিত কাজই করিতেন। অরুণ জেটলি, যিনি পরবর্তী কালে নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভায় অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করিয়াছেন, এই রেট্রোস্পেকটিভ করকে বলিয়াছিলেন ‘কর সন্ত্রাস’। অতএব প্রত্যাশিত ছিল যে, বিজেপি ক্ষমতায় আসিলে এই অযৌক্তিক করব্যবস্থাটিকে বিদায় করিবে। ইলাহাবাদের নাম পাল্টাইয়া প্রয়াগরাজ হইল, মোগলসরাই হইল দীনদয়াল উপাধ্যায়— দুর্জনে বলে, এই আমলে অনেকের মনে জাতির জনকের নামটিও পাল্টাইয়া নাথুরাম গডসে হইয়া গেল— শুধু রেট্রোস্পেকটিভ কর আইনটি পাল্টাইতে সময় লাগিল সাত বৎসর দুই মাস কয়েক দিন।

Advertisement

বিলম্বে হইলেও শুভবুদ্ধির উদয় হইয়াছে, ইহা কি সুসংবাদ নহে? দুর্জনে বলিবে, অন্যায্য করব্যবস্থা পাল্টাইবার আন্তরিক তাগিদ নহে, দ্য হেগ শহরের পার্মানেন্ট কোর্ট অব আর্বিট্রেশন ভারতের কানটি মুলিয়া দেওয়ায়, এবং অদূর ভবিষ্যতে নাকটি ঘষিয়া দেওয়ার সম্ভাবনা তীব্র হইয়া উঠায় সরকার তড়িঘড়ি ট্যাক্সেশন ল’জ় (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল পেশ করিল। প্রকৃত সদিচ্ছা থাকিলে এত সময় লাগিত না। কেহ প্রশ্ন করিতে পারেন, কোনও একটি বিশেষ মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাকে সুবিধা করিয়া দেওয়ার জন্যই কি এত দিন অবধি আইনটি লইয়া নীরব ছিল সরকার? ভোডাফোনের স্বাস্থ্যভঙ্গ সম্পূর্ণ হওয়াতেই কি এখন আইন পাল্টাইবার উদ্যোগ হইল? ভারতের দুর্ভাগ্য, কেন্দ্রীয় সরকারের কার্যত প্রতিটি সিদ্ধান্তই এমন সংশয়যোগ্য।

প্রণব মুখোপাধ্যায়-আরোপিত করটির অন্যায্যতা যে শুধু ভুক্তভোগী সংস্থাগুলিকেই বিপাকে ফেলিয়াছে, তাহাই নহে— বিদেশি লগ্নিকারীদের মনে ভারত সম্বন্ধে সাধারণ ভাবে একটি ভীতি সৃষ্টি করিয়াছিল। আন্তর্জাতিক স্তরে যে করটি সম্বন্ধে কোনও ইতিবাচক মনোভাব জন্মায় নাই, তাহার মোক্ষম প্রমাণ আন্তর্জাতিক আদালতের রায় ভারতের বিপক্ষে যাওয়া। অর্থমন্ত্রী যতই দাবি করুন যে, সেই রায় তাঁহারা মানেন না, এবং দেশে কী ভাবে কর আদায় করা হইবে, সেই সিদ্ধান্ত একান্তই ভারতের নিজস্ব— অর্থমন্ত্রী বিলক্ষণ জানেন যে, আন্তর্জাতিক মহলের আস্থা হারাইয়া বিশ্বায়িত অর্থব্যবস্থার যুগে টিকিয়া থাকা মুশকিল। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে, এই কর বিলোপের সিদ্ধান্তটি লইতে সরকার যে বিলম্ব করিল, তাহাতে আস্থার অনপনেয় ক্ষতি হইল তো বটেই, নূতনতর সংশয়ও সৃষ্টি হইল যে, সাঙাততন্ত্রের স্বার্থরক্ষায় পুঁজির স্বার্থের কথাও এই সরকার বিস্মৃত হইতে পারে। এই সংশয় দূর করিবার সাধ্য সরকারের হইবে কি?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement