Coronavirus

বিপদসঙ্কেত

চিনের বিপর্যয় গত বছর ডেল্টা সংক্রমণ কালে ভারতের পরিস্থিতিকে মনে করায়। বিজেপি সরকার সেই সময় চিনের মতোই পরিস্থিতির ভয়াবহতা স্বীকারে সম্মত হয়নি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২২ ০৫:৫৮
Share:

ফের বেজেছে বিপদঘণ্টি। সম্প্রতি চিনে কোভিড সংক্রমণকে ‘সুনামি’ আখ্যা দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সেখানে পরিস্থিতি ভয়াবহ। প্রশাসনিক লৌহকপাটের ফাঁক গলে যে খবরগুলি মিলেছে, তাতে স্পষ্ট— দশ লক্ষের অধিক দৈনিক সংক্রমণ এবং হাজার হাজার মৃত্যু নিয়ে ধুঁকছে চিন। সম্প্রতি কোভিডজনিত বিধিনিষেধ শিথিল করার পথে হেঁটেছিল চিন প্রশাসন। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে, ‘সুনামি’ ঘটেছে ঠিক তার পরেই। আশঙ্কা, আগামী ৯০ দিনে চিনে ৬০ শতাংশের বেশি এবং বিশ্বের প্রায় দশ শতাংশ নাগরিক সংক্রমিত হতে পারেন। মৃত্যু হতে পারে কয়েক লক্ষের। ইতিমধ্যেই জাপান, আমেরিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রাজিলে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং, স্বস্তিতে নেই বিশ্বও।

Advertisement

বস্তুত, চিনের বিপর্যয় গত বছর ডেল্টা সংক্রমণ কালে ভারতের পরিস্থিতিকে মনে করায়। বিজেপি সরকার সেই সময় চিনের মতোই পরিস্থিতির ভয়াবহতা স্বীকারে সম্মত হয়নি। মৃত এবং আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা গোপনের অভিযোগ তার বিরুদ্ধেও উঠেছিল। ফের সেই দুর্দিন যেন ফিরে না আসে, তার জন্য অবিলম্বে সতর্কতা জরুরি। ইতিমধ্যেই রাজ্যগুলিকে যাবতীয় প্রস্তুতি সেরে রাখার কথা জানিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। মাস্ক পরা, ভিড় এড়িয়ে চলা এবং প্রবীণদের বুস্টার ডোজ় নেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। সতর্কতামূলক পদক্ষেপ করা হয়েছে বিমানবন্দরগুলিতে। কোভিডবিধি মানতে না পারলে রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রা বন্ধ রাখার আর্জিও জানানো হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে তৎপরতায় খামতি নেই, কিন্তু তা কার্যকর ও নিশ্ছিদ্র কি না, ভবিষ্যৎ বলবে। দেশে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা গড়ে ১৫৩-য় বেঁধে রাখা সম্ভব হলেও আত্মতুষ্ট হওয়ার জায়গা নেই। বরং রাজ্যগুলির কাছে পর্যাপ্ত বুস্টার ডোজ় মজুত আছে কি না, পর্যালোচনা জরুরি। এবং শিক্ষা নিতে হবে চিনের উদাহরণ থেকেও। ২০২০ সালে সংক্রমণের প্রথম ঢেউ মোকাবিলায় যে নৈপুণ্য দেখিয়েছিল চিন, তা বহুল প্রশংসিত হয়। তিন বছর পর আজ যে জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে সে দেশ, তার জন্য অনমনীয় মনোভাব, ভ্রান্ত নীতি এবং বাস্তবোচিত পদক্ষেপ না করার প্রবণতা দায়ী। সেই ভুল যেন ভারতের প্রশাসকরাও না করেন, তা দেখতে হবে বইকি।

তবে, নাগরিক দায়িত্ববোধ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেল। কোভিড-শূন্য হয়েছে দেশ, এমন বার্তা কখনও মেলেনি। তা সত্ত্বেও যাবতীয় বিধিনিষেধ শিকেয় তুলেছেন তাঁরা। বুস্টার ডোজ় নিয়েছেন মাত্র ২৭ শতাংশ। অথচ, সংক্রমণ এবং ফের লকডাউনের জোড়া আক্রমণ ঠেকাতে এখনও বুস্টারেই আস্থা রাখছে প্রশাসন। মনে রাখা জরুরি, কোভিড শুধুমাত্র জনস্বাস্থ্য বিপর্যয় নয়, আর্থিক বিপর্যয়েরও সূচক। বিশ্ব-অর্থনীতিতে মন্দার চিহ্ন স্পষ্ট হওয়ার পর্যায়ে ফের তালাবন্দি দশা কাম্য নয়। কাম্য নয় ফের পড়ুয়াদের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সামনে দাঁড় করানো। পশ্চিমবঙ্গে বর্ষশেষের উৎসব এবং গঙ্গাসাগরের ভিড়ে রাশ টানার কোনও সদিচ্ছা এখনও দেখায়নি রাজ্য প্রশাসন। বেলাগাম জনসমাগম শেষ পর্যন্ত সুপারস্প্রেডার হয়ে উঠবে কি না, প্রশ্ন সেখানেও। কোভিডের নতুন প্রজাতিটি কত ভয়ঙ্কর, তা সময় বলবে। কিন্তু সঙ্কটকালে নিজ দায়িত্বটুকু যেন প্রশাসন এবং নাগরিক উভয়ে বিস্মৃত না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে সর্বাগ্রে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement