ফাইল চিত্র।
বিভিন্ন জেলা হইতে শিশুদের ‘অজানা জ্বর’-এ আক্রান্ত হইবার খবর আসিতেছে। বিশেষত উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি গুরুতর। এই মরসুমে সর্দি-কাশি-জ্বর অস্বাভাবিক নহে। ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ার ন্যায় অসুখেরও ইহাই আদর্শ সময়। এই বৎসরও অন্যথা হয় নাই। ডেঙ্গি তো বটেই, ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যাও এই বৎসর উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পাইয়াছে। এবং অনেক ক্ষেত্রেই চেনা উপসর্গ অনুপস্থিত থাকিবার কারণে রোগনির্ণয়ে বিলম্ব হইতেছে। অতিমারি-ক্লিষ্ট রাজ্যে ইহা ঘোর আশঙ্কার। কলিকাতা ও সংলগ্ন জেলাগুলিতে ধীরে হইলেও আক্রান্তের সংখ্যা ফের বৃদ্ধি পাইতেছে। উৎসব-অন্তে তাহা আরও বৃদ্ধির সম্ভাবনা। এমতাবস্থায় অন্য অসুখও সমান তালে বৃদ্ধি পাইলে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ভাঙিয়া পড়িতে সময় লাগিবে না।
জ্বরের কারণ অনুসন্ধানে ব্রতী হইয়াছে রাজ্য সরকার; বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করিয়াছে। জ্বরে আক্রান্তদের নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত নির্দেশিকাও জারি হইয়াছে। মরসুমি জ্বরের ক্ষেত্রে এই ধরনের আপৎকালীন ব্যবস্থা জরুরি। কিন্তু প্রশ্ন, ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার ন্যায় অসুখ, যাহা প্রতি বর্ষায় হাজির হয়, তাহা প্রতিরোধে সময়মতো ব্যবস্থা করা হইয়াছিল কি? আপৎকালীন ব্যবস্থায় তো এই রোগ কমিবার নহে। মশাবাহিত রোগ রুখিতে সম্বৎসর মশার লার্ভা ধ্বংসের কাজটি করিবার কথা। সমস্যা হইল, এই রাজ্যে প্রতি বৎসরই দেখা যায়, বর্ষার জল না পড়িলে কাজে গতি আসে না। এবং মশা অবাধে বংশবিস্তারের সুযোগ পায়। তদুপরি, এই বৎসর করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এবং বিধানসভা নির্বাচনের কারণে লার্ভা ধ্বংসের কাজটি সবিশেষ অবহেলিত হইয়াছে। তাহারই পরিণাম ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ার সংখ্যাবৃদ্ধি। এই দুই রোগের প্রকোপ সাধারণত বর্ষার শেষে তুঙ্গে ওঠে। সুতরাং, আশঙ্কা হয় যে, সর্বনাশের এখনও বাকি আছে।
ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করিতেছে তামিলনাড়ু প্রশাসন। লার্ভা ধ্বংস করিবার কাজে তাহারা ড্রোনের সাহায্য লইয়াছে। এবং প্রতি গৃহে জমা জলের অনুসন্ধানে প্রশিক্ষিত কর্মীদের কাজে লাগাইয়াছে। বৎসরভর এই রূপ কঠোর নজরদারি ভিন্ন এই জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নহে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তাহা অজানা নহে। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীও নানা সময় নজরদারির প্রসঙ্গটি তুলিয়াছেন। কিন্তু উদ্যমে ঘাটতি দূর হয় নাই। ফাঁক রহিয়াছে বিভিন্ন স্তরের মধ্যে সমন্বয় সাধনের ক্ষেত্রেও। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে বিভিন্ন রোগের চরিত্র পরিবর্তিত হইতেছে। বিশেষজ্ঞরা বারংবার সতর্ক করিতেছেন। সুতরাং, সার্বিক ভাবে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখিতে হইলে অবিলম্বে সরকারের একটি প্রশিক্ষিত বাহিনী গড়িয়া তোলা প্রয়োজন, যাঁহারা সারা বৎসর বিভিন্ন মরসুমি অসুখ নিয়ন্ত্রণ এবং চিকিৎসার রূপরেখা নির্ধারণ করিবেন। সেই সঙ্গে উপযুক্ত পরীক্ষাগারের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং পতঙ্গবিদও নিয়োগ করিতে হইবে। সর্বোপরি, জনস্বাস্থ্যের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকরা বিভিন্ন পুরসভা, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর, জনস্বাস্থ্য কারিগরি-সহ বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে সমন্বয়সাধন করিয়া কাজ করিবেন। মনে রাখা প্রয়োজন, করোনার সঙ্গে অন্য মহামারি একযোগে আক্রমণ করিলে সেই ধাক্কা সামলাইবার উপযুক্ত পরিকাঠামো রাজ্যের নাই। সুতরাং, সাধু সাবধান।