Durga Puja 2024

পুজোর পরিবেশ

পুজো যে একেবারে পরিবেশবান্ধব হয় না, তেমনটা বলা চলে না। কলকাতা তো বটেই, জেলার পুজোগুলিতেও সচেতনতা অনেক বেড়েছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২৪ ০৪:২২
Share:

বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের ঠিক আগের মুহূর্তটিতে প্রকৃতি যেন তার ডালি উপুড় করে দেয়। শিউলির বাহারে, বৃষ্টিধোয়া নীল আকাশে, কাশফুলে ঢাকা জমিতে সহজেই খুঁজে নেওয়া যায় সেই নির্ভুল ইঙ্গিত— মা আসছেন। কিন্তু মানুষ কি সেই দাক্ষিণ্যের মর্যাদা রাখতে পারে? উৎসবে ভেসে যাওয়ার মুহূর্তে কি সে মনে রাখে, যে পরিবেশ উৎসবের আগমনবার্তা বয়ে আনে, শেষ পর্যন্ত তাকে রক্ষা করার? উৎসব-শেষের পরিবেশের সেই হতশ্রী চেহারা কিন্তু সে কথা বলে না। মণ্ডপের পিছনের স্তূপীকৃত আবর্জনা, গাছের গায়ে অগুনতি পেরেক পোঁতা, প্লাস্টিকের ছড়াছড়ি, চড়া আলোয় পাখিদের রাতের স্বস্তিটুকু উধাও করে দেওয়া— এ সবই পরিবেশের চরম ক্ষতিসাধন করে। এমন ক্ষতি, যাকে ফের সামলে উঠতে যথেষ্ট সময় লাগে।

Advertisement

পুজো যে একেবারে পরিবেশবান্ধব হয় না, তেমনটা বলা চলে না। কলকাতা তো বটেই, জেলার পুজোগুলিতেও সচেতনতা অনেক বেড়েছে। বহু জায়গায় প্রতিমা এবং মণ্ডপসজ্জায় প্লাস্টিকের মতো দূষক পদার্থের ব্যবহার বন্ধ করা হয়েছে। ফেলে দেওয়া জিনিসকেই নতুন রূপ দিয়ে মণ্ডপসজ্জায় তুলে আনা হয়েছে। প্রত্যেক বছরেই অনেক জায়গায় ‘থিম’-এর মধ্যে দিয়েও পরিবেশ সচেতনতার বার্তা দেওয়া হয়। পরিবর্তন এসেছে বিসর্জনের রীতিতেও। সরকারের নিরন্তর প্রচার এবং জলদূষণের মারাত্মক প্রভাব সম্পর্কে সাধারণ মানুষ পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি সচেতন হওয়ায় নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে বড় ঘাটগুলোয় বিসর্জন হয়। বেশ কিছু পুজো জলে বিসর্জনের সনাতন প্রথা ত্যাগ করে মণ্ডপেই প্রতিমাকে নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে গলিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় এখনও তা যৎসামান্যই। জলে বিসর্জনের ক্ষেত্রেও কলকাতার বড় ঘাটগুলির বাইরে অনেক ছোট ঘাট আছে, সেখানে বিসর্জনজনিত দূষণ এড়ানো যায়নি। রাস্তার খাবার-পানীয়ের স্টলের চার পাশে উপচে পড়েছে প্লাস্টিকের নরম পানীয়ের বোতল, স্ট্র, চামচ। প্লাস্টিকের মোড়কে ব্যবহৃত ফুল-বেলপাতা জড়িয়ে পথের পাশে ফেলে রাখার অভ্যাসেও বিশেষ পরিবর্তন ঘটেনি। আর এই সব কিছুর সম্মিলিত প্রভাব পড়ছে পরিবেশের উপর, প্রতি বছর।

দৈনন্দিনতায় যদি পরিবেশ বাঁচানোর তাগিদ না থাকে, তবে উৎসবের দিনে সেই অবহেলা চরমে উঠতে বাধ্য। পরিবেশের উপর যে অত্যাচার উৎসবের ক’দিনে প্রত্যক্ষ করা যায়, তা আসলে প্রতি দিনই চলে নানা ভাবে, নানা রূপে। উৎসব-মগ্ন মানুষ ওই ক’দিনে তার মাত্রাটিকে আরও খানিক উস্কে দেয় মাত্র। গাছের গায়ে পেরেক পুঁতে তাকে তিলে তিলে শেষ করে দেওয়ার অভ্যাস তো শুধু পুজোর ক’দিনের নয়, ক্রমশ সবুজশূন্য হয়ে আসা শহরে নির্দ্বিধায় সাইনবোর্ড টাঙাতে, আলো জ্বালাতে দূষণে ধুঁকতে থাকা অবশিষ্ট গাছগুলোকেই বেছে নেওয়া হয়। তার প্রতিকার করার কথা কি কেউ-ই ভাবে? যে ফেলে দেওয়া জিনিস তুলে এনে মণ্ডপসজ্জায় অভিনবত্বের দাবি করা হয়, বছরের অন্য দিনগুলোতে তা জঞ্জালের স্তূপেই জমা পড়ে থাকে। তাই উৎসবকে দূষণমুক্ত নির্মল বানাতে হলে সর্বাগ্রে দৈনন্দিনতায় পরিবর্তন আনতে হবে। পরিবেশ যে আমাদের জীবনযাত্রার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়িত, তদর্থে উৎসবের সঙ্গেও, এই সত্যটি যে দিন অধিকাংশের মগজস্থ হবে, সে দিন উৎসবও সর্বাঙ্গসুন্দর হয়ে উঠবে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement