প্রতীকী ছবি।
একই সাবধানবাণী বারংবার উচ্চারিত হইলে তাহাতে একঘেয়েমি আসে, সত্য। কিন্তু শত চেতাবনিতেও যাঁহাদের টনক নড়ে না, তাঁহাদের জন্য এ-হেন পুনরাবৃত্তির প্রয়োজন হয় বইকি। প্লাস্টিক যেমন। ইহা ব্যবহারের বিপদ এবং বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা নূতন নহে। প্রতি বৎসর বর্ষায় শহর ভাসিবার পর প্লাস্টিকে অবরুদ্ধ নিকাশি নালার চিত্রটি প্রকট হয়। তৎসত্ত্বেও প্লাস্টিক ব্যবহারে প্রশাসন হইতে শহরবাসী— কেহই সংযত হন না। এই অক্টোবর মাস হইতেই দেশ জুড়িয়া ৭৫ মাইক্রন অপেক্ষা কম পুরু প্লাস্টিক ব্যাগের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হইয়াছে। পূর্বেও নানা সময় প্লাস্টিকমুক্ত দেশ গড়িবার অঙ্গীকারের কথা শোনা গিয়াছিল। সিকিম-সহ কিছু রাজ্য সেই নিষেধাজ্ঞাকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়াছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ন্যায় কিছু রাজ্য তাহার ব্যতিক্রম। জল জমিয়া শহর রুদ্ধ হইলে প্রশাসনের পক্ষ হইতে প্লাস্টিক জমিবার কথা শোনা যায়। কিন্তু কেন প্লাস্টিক ব্যবহারের নিয়ম যথাযথ মানা হইতেছে না, বা নিয়মভঙ্গকারীর শাস্তি হইতেছে না, তাহার সদুত্তর মেলে না। সুতরাং, এই নব-নিষেধাজ্ঞাও শেষ অবধি কার্যকর হইবে কি না, সন্দেহ আছে।
পশ্চিমবঙ্গ, বিশেষত কলিকাতার প্লাস্টিক-চিত্রের অবস্থা কতটা করুণ, উত্তর শহরতলির নিকাশির অন্যতম পথ বাগজোলা খাল তাহার প্রমাণ। প্লাস্টিকের সামগ্রী জমিয়া এই খাল বিভিন্ন জায়গায় মজিয়াছে। স্বাভাবিক কারণেই ভারী বৃষ্টিতে ভাসিয়াছে উত্তরের বিস্তীর্ণ অংশ। সম্প্রতি সল্টলেকের এক জায়গার গালিপিট পরিষ্কার করিবার সময় ১২ কিলোগ্রাম প্লাস্টিকের সামগ্রী উদ্ধার হইয়াছে। এই সকল চিত্র প্রমাণ করে এক চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং বেপরোয়া মনোভাবকে। প্রশাসনও যাহার দায় ঝাড়িয়া ফেলিতে পারে না। সম্প্রতি রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রক জানাইয়াছে, পুরসভাগুলি প্লাস্টিক অপসারণের কাজ কী ভাবে করিতেছে, সচেতনতা বৃদ্ধিতে কী কী পদক্ষেপ করিয়াছে, তাহা দেখিবার জন্য নোডাল অফিসার নিয়োগ করা হইবে। প্রশ্ন হইল, এত বিলম্ব কেন? প্লাস্টিকের ব্যবহার রুখিতে পুরসভাগুলি যে যথাযথ কাজ করিতেছে না, প্রশাসন তাহা জানিত না? জানিলে, উপযুক্ত ব্যবস্থা করা হয় নাই কেন? এই উদাসীনতা ক্ষমার অযোগ্য।
তবে দোষ শুধু প্রশাসনের নহে। নাগরিক সচেতন না হইলে প্রশাসনও নড়িয়া বসিবে না, ইহা চরম সত্য। উৎসবে পথে বাহির হইয়া মানুষ প্লাস্টিকের কাপ, স্ট্র, প্লাস্টিকে মোড়া ফুল-বেলপাতা যত্রতত্র ছড়াইবেন, আর শহর ভাসিলে প্রশাসনকে দোষারোপ করিবেন, ইহা চলিতে পারে না। এই শহর শুধুমাত্র প্রশাসনের দায়িত্ব নহে। শহরের স্বাস্থ্য বজায় রাখিবার দায়িত্ব নাগরিকের উপরেও সমান ভাবে বর্তায়। সেই দায়িত্ব পালন প্রচুর পরিশ্রমসাধ্যও নহে। শুধুমাত্র কিছু সাধারণ নিয়ম মানিলেই চলিবে। প্লাস্টিকের সামগ্রী ব্যবহারের পর নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলিতে হইবে, দোকান-বাজারে যাইবার পূর্বে নিজ ব্যাগ বা থলিটি সঙ্গে লইতে হইবে। ক্রেতা প্লাস্টিকের ব্যাগ লইতে অসম্মত হইলে ক্রমে বিক্রেতাও বিকল্প উপায় ভাবিতে বাধ্য হইবেন। প্লাস্টিকের ব্যবহার হ্রাস করা ভয়ঙ্কর কঠিন কাজ নহে। দরকার, নিয়ম পালন করিবার মানসিকতা এবং সদিচ্ছা। দুর্ভাগ্য, পশ্চিমবঙ্গে এই দুইটির একান্ত অভাব।