Indian Economy

ভবিষ্যতের দিকে

ধনীদের উপরে করের পরিমাণ বাড়িয়ে সেই টাকা দরিদ্রদের মধ্যে পুনর্বণ্টন করার নীতির কথা বলেছেন তিনি। সেই পুনর্বণ্টনের পথ কী হবে, তা আলোচনাসাপেক্ষ।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২২ ০৮:০১
Share:

ভোটের মুখে ঢালাও অর্থনৈতিক প্রতিশ্রুতির সমালোচনা করলেন নোবেলজয়ী অর্থশাস্ত্রী অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও মাসকয়েক আগে ‘রেউড়ি রাজনীতি’-র বিরোধিতা করেছিলেন। অতঃপর প্রশ্ন, তা হলে কি অভিজিৎবাবু প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানকেই সমর্থন করলেন? না, অভিজিৎবাবু যা বলছেন, তা প্রধানমন্ত্রীর মতের প্রতিধ্বনি নয়, বরং বহুলাংশে তার বিরোধী একটি অবস্থান। তিনি যে প্রবণতার বিরোধিতা করেছেন, তা হল নির্বাচনকেন্দ্রিক অবিবেচনাপ্রসূত প্রতিশ্রুতি। এই প্রবণতাটি এখন আর কোনও বিশেষ রাজনৈতিক দল, বা বিশেষ অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই— কার্যত গোটা দেশেই তার বিস্তার ঘটেছে। রাজকোষে টাকার পরিমাণ সীমিত, উন্নয়ন খাতে প্রয়োজন বিপুল। ফলে, যে অর্থব্যয়ে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের সম্ভাবনা নেই, তেমন ব্যয়ের বিরোধিতা করাই বিধেয়। কিন্তু, দরিদ্রের উন্নয়নে রাষ্ট্রকে যে প্রত্যক্ষ ভাবে ব্যয় করতেই হবে, সে বিষয়ে অভিজিৎবাবুর সংশয় নেই। লকডাউন চলাকালীন তিনি একাধিক বার নগদ হস্তান্তরের পক্ষে জোরালো সওয়াল করেছিলেন— জানিয়েছিলেন, প্রয়োজনে রাজকোষ ঘাটতির কথা বিবেচনা না করেই এই ব্যয় করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী যে অবস্থান থেকে ‘রেউড়ি রাজনীতি’র বিরোধিতা করেন, তার কেন্দ্রে রয়েছে ট্রিকল ডাউন তত্ত্ব— যে তত্ত্ব বিশ্বাস করে, উপরতলার আর্থিক উন্নতি হলে তার সুফল ক্রমেই চুইয়ে নামবে নীচের তলাগুলিতেও। অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় এই অবস্থানে বিশ্বাসী, তার কোনও প্রমাণ আজ অবধি মেলেনি। ফলে, তাঁর কাঁধে প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানের দায়বহনের অবাঞ্ছিত দায়িত্বটি না চাপানোই বিধেয়।

Advertisement

তিনি কী বলতে চান, সেই সূত্রও তাঁর সে দিনের বক্তব্যের মধ্যেই নিহিত রয়েছে। প্রথমত, তিনি কুশলী পথে ব্যয়ের পক্ষে সওয়াল করেছেন— এমন ব্যয়, যা স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদে দরিদ্র মানুষের সর্বোচ্চ উন্নয়নের ক্ষেত্রে সহায় হবে। দ্বিতীয়ত, তিনি সম্পদের ন্যায্যতর পুনর্বণ্টনের কথা বলেছেন। ধনীদের উপরে করের পরিমাণ বাড়িয়ে সেই টাকা দরিদ্রদের মধ্যে পুনর্বণ্টন করার নীতির কথা বলেছেন তিনি। সেই পুনর্বণ্টনের পথ কী হবে, তা আলোচনাসাপেক্ষ। যেমন, ভারতে কর্মসংস্থান যোজনার মাধ্যমে যে পুনর্বণ্টন চলে, তাতে আরও জোর দেওয়া যায়; গণবণ্টন ব্যবস্থাকে মজবুততর করে দরিদ্র নাগরিকের মৌলিক পুষ্টির প্রশ্নটিকে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া যায়; অথবা প্রত্যক্ষ নগদ হস্তান্তরের ব্যবস্থা করা যায়। সম্পদ পুনর্বণ্টনকে কেন্দ্রে রেখে আরও বিবিধ উন্নয়ননীতি গ্রহণ করা যায়। অধ্যাপক বন্দ্যোপাধ্যায় সম্ভবত বলবেন, কোন নীতিটি সর্বাপেক্ষা কুশলী ও গ্রহণযোগ্য হবে, তা বোঝার পথ, নীতিগুলিকে প্রথমে ছোট জনগোষ্ঠীর উপর যাচাই করে দেখা। কিন্তু, কোনও অবস্থাতেই তিনি বলবেন না যে, দরিদ্রের উন্নতির প্রশ্নে রাষ্ট্র হাত ধুয়ে ফেলুক।

তাঁর কথাটিকে যদি বৃহত্তর প্রেক্ষিতে দেখা যায়, তা হলে বোঝা সম্ভব, তিনি ভারতীয় রাজনীতির একটি বাঁকবদলের পক্ষে সওয়াল করছেন। এখন রাজনীতির চরিত্র বর্তমান-কেন্দ্রিক— অর্থাৎ, রাষ্ট্রের কাছে নাগরিক সেটুকুই প্রত্যাশা করে, যা এই মুহূর্তে হাতেগরম পাওয়া সম্ভব। রাজনীতিই নাগরিককে এই জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে। এই প্রবণতার বিপদ হল, এতে ভবিষ্যতের প্রতি দৃষ্টি থাকে না, এবং দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অভিজিৎবাবু রাজনীতিকে এখান থেকে সরতে বলছেন। কিন্তু, দরিদ্রের হাত ছেড়ে, তাকে বাজারের অনিশ্চয়তায় নিক্ষেপ করে নয়— বরং, তার জন্য প্রকৃত উন্নয়নের ব্যবস্থা করে। এমন ভাবে, যাতে ক্রমশ তাঁরা বাজারে যোগ দেওয়ার মতো সামর্থ্য অর্জন করতে পারেন। অর্থনীতির মূল স্রোতে শামিল হতে পারেন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement