earth

আস্থা

ততোধিক বাস্তব ‘ক্লাইমেট জাস্টিস’-এর ধারণাও। তাঁহারা বুঝিয়াছেন, রাষ্ট্রের নিয়ামকরা জলবায়ু রক্ষা লইয়া যত বলেন তত করেন না, ভাবেন তাহারও কম।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২১ ১০:০৫
Share:

নব্বইয়ের দশকে এক আমেরিকান অ্যানিমেশন সিরিজ় খুব বিখ্যাত হইয়াছিল। তাহাতে পাঁচ মহাদেশের পাঁচ ‘বিশেষ’ তরুণ-তরুণীকে পাঁচটি জাদু-আংটি পাঠায় খোদ পৃথিবী, আংটিগুলিতে ক্ষিতি-অপ-তেজ-মরুতের সহিত নিহিত হৃদয়শক্তিও। পাঁচ তরুণ-তরুণী একত্র হইয়া, সঙ্কটমুহূর্তে তাহাদের বিশেষ শক্তি ঘনীভূত করিলে আবির্ভূত হইত সুপারহিরো ‘ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট’, পরিবেশবিরোধী দুষ্টশক্তি পরাস্ত হইত তাহার হাতে। তিন দশক পার হইয়াছে, সেই কার্টুনপ্রেমীরা পরিণতবয়স্ক হইয়াছেন, কিন্তু পৃথিবীর, বিশেষত তাহার পরিবেশ ও জলবায়ুর সঙ্কট কাটে নাই। সুপারহিরো ক্যাপ্টেন প্ল্যানেটও আর আসে না। গ্লাসগোতে তাবড় নেতারা জলবায়ু সম্মেলন করিলেন, কিন্তু বিশ্ববাসী জানেন, তাঁহারা পরিত্রাতা নহেন, জলবায়ু রক্ষার কথা মুখে বলিলেও অনেকেই কাজের কাজটি করেন না।

Advertisement

সর্বনাশই কি তাহা হইলে ভবিতব্য? উষ্ণায়ন, তাপ বা শৈত্যপ্রবাহ, ঘূর্ণিঝড়-ভূকম্পধ্বস্ত এই পৃথিবীতে পরিবেশ ও জলবায়ুকে সুস্থ, স্থিত করিবার সদিচ্ছা ও সক্রিয়তা কাহারও নাই? আছে। তাঁহারা দেশপ্রধান বা রাষ্ট্রনেতা নহেন, তাঁহারা দেশ-বিদেশের অল্পবয়সি তরুণী-তরুণী, যুবশক্তি। সুইডিশ কিশোরী গ্রেটা থুনবার্গ ক্লাস ছাড়িয়া, স্কুলের সামনে পরিবেশ ও জলবায়ু বাঁচাইবার পোস্টার তুলিয়া ধরিয়া উপহসিত হইয়াছিলেন, আজ তিনিই পরিবেশ আন্দোলনের মুখ। বিশ্ব বলিতেছে, গ্রেটার ন্যায় অল্পবয়স্ক পরিবেশ-ভাবুক ও কর্মীদের কাজেই আশার আলো েদখা যাইতেছে। গ্রেটা নাহয় তুমুল বিখ্যাত হইয়াছেন— তত খ্যাতি বা পরিচিতি পান নাই, এমন যুবারাও পৃথিবী রক্ষার বার্তা ছড়াইয়া দিতেছেন ভারত হইতে অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপিন্স, জাপান হইতে সমগ্র ইউরোপ-আমেরিকা। দশটি দেশের যুবাদের উপর সমীক্ষা করিয়াছিল এক ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়, তাহাতে প্রকাশ, ফিলিপিন্সের তরুণ মতামতদাতাদের ৯২%, ভারতের ৮০% উদ্বিগ্ন— পৃথিবীর পরিবেশগত ভবিষ্যৎ ভয়ঙ্কর। ‘ক্লাইমেট অ্যা‌ংজ়াইটি’ আজকের প্রজন্মের কাছে ভাবনাবিলাস নহে, বাস্তব।

ততোধিক বাস্তব ‘ক্লাইমেট জাস্টিস’-এর ধারণাও। তাঁহারা বুঝিয়াছেন, রাষ্ট্রের নিয়ামকরা জলবায়ু রক্ষা লইয়া যত বলেন তত করেন না, ভাবেন তাহারও কম। তাই দেশে দেশে মানুষের মধ্যে, এবং দেশ ছাড়িয়া বিদেশে, বহির্বিশ্বে জলবায়ু আন্দোলন ছড়াইয়া দিবার কাজটি তাঁহারা সযত্নে করিয়া চলিয়াছেন। গ্রেটা-র আহূত ‘ফ্রাইডেজ় ফর ফিউচার’ আজ অজস্র দেশে ছড়াইয়া পড়িয়াছে, ফিলিপিন্সের তরুণী মিটজ়ি জোনেল ট্যান শুরু করিয়াছেন ‘মার্চ ফর সায়েন্স’ আন্দোলন, জোরদার চলিতেছে ‘ইয়ুথ অ্যাডভোকেটস ফর ক্লাইমেট অ্যাকশন’-এর কর্মসূচি। এশিয়ার যুবশক্তি দক্ষিণ আমেরিকার সহিত কথা বলিতেছে, প্রচারে ইউরোপের সঙ্গে হাত মিলাইতেছে আফ্রিকা। দেশে দেশে ক্ষমতাসীন সরকারকে তাঁহারা চাপ দিতেছেন জলবায়ুবান্ধব শিল্প পদক্ষেপ করিতে, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে পরিবেশের প্রসঙ্গ রাখিতে, এমনকি সরকার পাল্টাইয়া গেলেও যাহাতে নূতন রাষ্ট্রশক্তির কাছে জলবায়ু রক্ষার বিষয়টি প্রাধান্য পায়, তাহা নিশ্চিত করিতেছেন। রক্তচক্ষুও কম নাই, ভারতের যুব পরিবেশকর্মী দিশা রবি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে অভিযুক্তও হইয়াছিলেন। তবু তাঁহারাই আশা। বড়রা তো অনেক ‘করিলেন’, এই বার ছোটদের, তরুণদের শক্তিতেই আস্থা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement