Cervical Cancer

টিকা প্রতিশ্রুতি

মারণরোগের মোকাবিলার ক্ষেত্রে যৌথ উদ্যোগ সর্বদা স্বাগত। কিন্তু কোনও অবস্থাতেই তা নিজ ঘরকে বঞ্চিত করার যুক্তি হতে পারে না। অথচ, জরায়ুমুখ ক্যানসারের ক্ষেত্রে ভারতে সেই চিত্রই দেখা গিয়েছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২৪ ০৪:৪০
Share:

যথাযথ টিকাকরণ এবং প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় করা গেলে জরায়ুমুখ ক্যানসারকে অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব। তা সত্ত্বেও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ক্যানসার-মৃত্যুর ক্ষেত্রে এটিই তৃতীয় সর্বোচ্চ কারণ। আশ্চর্য নয়, কারণ সমগ্র অঞ্চলে টিকাকরণ সম্পূর্ণ করা মেয়েদের সংখ্যা প্রতি দশ জনে এক জনেরও কম। এই বিপুল ফাঁক কমাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সদ্যসমাপ্ত কোয়াডের বৈঠকে এক গুচ্ছ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ভারত, অস্ট্রেলিয়া, জাপান এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রনেতাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলন ‘কোয়াড ক্যানসার মুনশট’ নামে এক কর্মসূচির সূচনা করেছে। তারই অংশ হিসাবে ভারতের এই প্রতিশ্রুতি। নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছেন, ভারত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে রেডিয়োথেরাপি চিকিৎসা, এবং ক্যানসার প্রতিরোধের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা প্রদান করবে। ভারত থেকে ‘বিশ্ব টিকা জোট’ (জিএভিআই)-এর আওতাভুক্ত ৪ কোটি টিকা পেয়ে এখানকার দেশগুলির মানুষ উপকৃত হবেন। এতেই শেষ নয়, জিএভিআই-এর সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে পুণের সিরাম ইনস্টিটিউট হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (এইচপিভি)-এর ৪ কোটি টিকা ক্রয়ের ক্ষেত্রে সহায়তা করবে, যা এই দেশগুলির মধ্যে বিতরণ করা হবে।

Advertisement

মারণরোগের মোকাবিলার ক্ষেত্রে যৌথ উদ্যোগ সর্বদা স্বাগত। কিন্তু কোনও অবস্থাতেই তা নিজ ঘরকে বঞ্চিত করার যুক্তি হতে পারে না। অথচ, জরায়ুমুখ ক্যানসারের ক্ষেত্রে ভারতে সেই চিত্রই দেখা গিয়েছে। ভারত এখনও অবধি তাদের সরকারি টিকাকরণ কর্মসূচির মধ্যে এই টিকাকে অন্তর্ভুক্ত করেনি, যা ইতিমধ্যেই যথেষ্ট সমালোচিত। এ দেশে জরায়ুমুখ ক্যানসারের চিত্রটি উদ্বেগজনক। প্রতি বছর এই রোগে এক লক্ষেরও বেশি মহিলা আক্রান্ত হন। মৃত্যু হয় প্রায় ৭৭ হাজার জনের। সারা বিশ্বে জরায়ুমুখ ক্যানসারে যত জনের মৃত্যু হয়, তাঁদের মধ্যে ২৫ শতাংশই ভারতীয়। সুতরাং, এ দেশে সরকারি টিকাকরণ কর্মসূচির মধ্যে এইচপিভি টিকা অন্তর্ভুক্ত করা একান্ত জরুরি। এই বছরের গোড়ায় বাজেটে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানিয়েছিলেন, ৯ থেকে ১৪ বছরের কিশোরীদের টিকা দেওয়া হবে। অতঃপর লোকসভা নির্বাচন সংঘটিত হয়েছে। বিজেপি পুনরায় কেন্দ্রে ক্ষমতায় ফিরেছে। কিন্তু এইচপিভি টিকা কর্মসূচির ভাবনাচিন্তাটি কত দূর অগ্রসর হল, স্পষ্ট উত্তর মেলেনি।

ভারতে যে টিকার অভাব রয়েছে, তা নয়। ২০০৮ সাল থেকেই বেসরকারি ক্ষেত্রে এই টিকা পাওয়া যায়। কিন্তু তার দাম প্রচুর, অনেকেরই সাধ্যাতীত। সরকারি উদ্যোগে টিকা প্রদান করা হলে এক দিকে এই অতিরিক্ত ব্যয়ভার থেকে মুক্তি মিলবে, অন্য দিকে সরকারি প্রচারের মাধ্যমে টিকা সংক্রান্ত ভুল তথ্য, ভয় ইত্যাদি হ্রাস পেয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। পোলিয়োর ক্ষেত্রে এই নিরন্তর প্রচার এবং নির্দিষ্ট সময় অন্তর সরকারি টিকাকরণ কর্মসূচিতে সুফল মিলেছে। সেই অভিজ্ঞতাও এ ক্ষেত্রে পথপ্রদর্শক হতে পারত। অবশ্য, ‘বিশ্বগুরু’ ভাবমূর্তিটিই যখন সর্বোচ্চ লক্ষ্য হয়, তখন জনস্বাস্থ্য পিছনের সারিতে চলে যায়। অতীতে কোভিড টিকার ক্ষেত্রেও তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল। যে কোনও মারণরোগের ক্ষেত্রে, যা প্রতিরোধযোগ্য, টিকা প্রদানে বিলম্ব অক্ষমণীয়। অথচ, নিজ দেশের ক্ষেত্রেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী যে সেটি এখনও উপলব্ধি করলেন না, তা মর্মান্তিক।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement