GST

সস্তা রাজনীতি

সঙ্কটের আঁচে দেশবাসী দগ্ধ হইতেছেন। খুচরা পণ্যের উপর মূল্যস্ফীতির হার বাড়িয়া ৬.৩ শতাংশ হইল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০২১ ০৫:১৫
Share:

বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা একটি কথা প্রায়শই ভুলিয়া যান। কেন্দ্রে যে এখন কংগ্রেসের সরকার নাই, গত সাত বৎসর যাবৎ তাঁহারাই দেশ শাসন করিতেছেন, এই কথাটি সময়বিশেষে তাঁহাদের স্মরণে থাকে না। এই বিস্মরণ যথেচ্ছ নহে— যখনই সরকারের বিরুদ্ধে অপশাসনের, নীতিপঙ্গুত্বের অভিযোগ উঠে, বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা তখনই বিরোধী অবতার ধারণ করেন। এই যেমন পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি লইয়া সাধারণ মানুষের ক্ষোভ বাড়ায় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী বলিলেন, রাহুল গাঁধী যদি এতই সাধারণ মানুষকে লইয়া ভাবিত হন, তবে নাহয় তিনি কংগ্রেস-শাসিত রাজ্যগুলিকে বলুন, তেলের উপর আদায় করা কর ছাড়িয়া দিতে। মন্ত্রিবরের বিস্মৃতি বহুমাত্রিক। প্রথমত, তিনি ভুলিয়া গিয়াছেন যে, তাঁহারা যখন প্রকৃতই বিরোধীপক্ষ ছিলেন, তখন তেলের দাম বাড়ামাত্র অভিযোগের আঙুল তুলিতেন কেন্দ্রের ইউপিএ সরকারের দিকে। আজ উল্টা গাহিলে তাহা মিথ্যাচার হয়। দ্বিতীয়ত, যদিও পেট্রল-ডিজ়েলের উপর কেন্দ্র ও রাজ্য, উভয় তরফই কর আদায় করিয়া থাকে, কেন্দ্রের আদায়ের পরিমাণ বেশি। ফলে, কর যদি ছাড়িতেই হয়, তাহার সূচনা কেন্দ্র হইতে হওয়াই দস্তুর। তৃতীয়ত, জিএসটি নামক ব্যবস্থার ফলে রাজ্যগুলির রাজস্ব আদায়ের অধিকার অতি সীমিত হইয়াছে— পেট্রোলিয়াম ও আবগারি, এই দুইটি ক্ষেত্রই রাজ্যের হাতে রহিয়াছে। জিএসটির ক্ষতিপূরণ লইয়া কেন্দ্র যে পরিমাণ টালবাহানা করিতেছে, তাহাতে রাজ্যগুলির পক্ষে রাজস্ব আদায়ের সবেধন নীলমণিকে হাতছাড়া করা মুশকিল।

Advertisement

এই সকল যুক্তিরও ঊর্ধ্বে আছে একটি সত্য— কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী স্পষ্ট করিয়া দিলেন, দেশের মানুষ যে সঙ্কটেই থাকুন না কেন, তাঁহারা ক্ষুদ্র রাজনীতির গণ্ডি অতিক্রম করিতে নারাজ। সম্ভবত অক্ষমও বটে। তাঁহারা দায় স্বীকার করিতে শিখেন নাই, ফলে সংশোধনের সম্ভাবনাও তাঁহাদের অধরাই থাকিয়া যায়। তাঁহারা শুধু জানেন, যে কোনও অভিযোগের তির অন্য দিকে ঘুরাইয়া দিতে হয়। কোন যন্ত্রণায় দেশবাসী অভিযোগ করিতেছেন, ক্ষুব্ধ হইতেছেন, সে কথা ভাবিবার রাজনৈতিক দীক্ষা তাঁহাদের হয় নাই। মন্ত্রিবর বলিয়াছেন, ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারকে বিপুল রেশনের ব্যবস্থা করিতে হইতেছে, কোভিড-পণ্যের উপর জিএসটি ছাড় দিতে হইতেছে। পেট্রোলিয়ামের উপর কর ছাড়িয়া দেওয়া, অতএব, সম্ভব নহে। ভাষার মারপ্যাঁচ সরাইয়া লইলে কথাটি এই রূপ দাঁড়ায়— সরকার যথেষ্ট করিয়াছে, এই বার দেশবাসী নিজেদের সমস্যা নিজেরাই বুঝিয়া লউক। আকারে-প্রকারে এই কথাটি গত সাত বৎসরে তাঁহারা বহু বার বলিয়াছেন। কিন্তু, এই অভূতপূর্ব সঙ্কটের মুখে দাঁড়াইয়াও যে তাঁহারা এমন অসংবেদনশীল হইতে পারেন, মন্ত্রিবর তাহা বুঝাইয়া দিলেন।

সঙ্কটের আঁচে দেশবাসী দগ্ধ হইতেছেন। খুচরা পণ্যের উপর মূল্যস্ফীতির হার বাড়িয়া ৬.৩ শতাংশ হইল। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক যতখানি মূল্যস্ফীতি মানিতে প্রস্তুত, এই হার তাহার অধিক। খাদ্যপণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। এবং, এই মূল্যস্ফীতির পিছনে প্রধানতম ভূমিকা পেট্রোলিয়ামের মূল্যবৃদ্ধির। যে হেতু পণ্য পরিবহণের ব্যয় বাড়িয়াছে, তাহার আঁচ সরাসরি বাজারে পড়িয়াছে। যে সময়ে অর্থনীতির স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের জন্য শিথিল আর্থিক নীতি গ্রহণ করা হইয়াছে, তখন মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা থাকেই। এই অবস্থায় সরকারের কর্তব্য ছিল যে ভাবেই হউক, মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণ করা— িবশেষত, এই সময়ে, যখন বহু মানুষ চাকুরি হারাইয়াছেন, আর্থিক সঙ্কটে আছেন। পেট্রোলিয়াম পণ্যের উপর করের পরিমাণ কমানো তাহার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল। বিশেষত, করের পরিমাণে গোটা দুনিয়ায় ভারত অগ্রগণ্য। কিন্তু, সেই কাজটি না করিয়া মন্ত্রিমহোদয় যখন সস্তা রাজনীতির অস্ত্র খোঁজেন, তখন তাঁহাদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ থাকে না।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement