Mamata Banerjee

অপচিকীর্ষা

যে সকল রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতা দখল করিতে পারে নাই, সেই সব অঞ্চলে তাহারা প্রাদেশিক দাবি তুলিতেছে, বিশেষত তাহাদের শক্ত ঘাঁটিতে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২১ ০৫:৪৩
Share:

ফাইল চিত্র।

পশ্চিমবঙ্গের পর তামিলনাড়ু। রাজ্যভাগ বিতর্কে নবতম সংযোজন দক্ষিণের এই রাজ্য। কেন্দ্রীয় শাসক দলের খাতায় তামিলনাড়ু হইতে সদ্য-মনোনীত মন্ত্রী এল মুরুগানের সংসদীয় এলাকা হিসাবে উল্লিখিত হইয়াছে ‘কোঙ্গুনাড়ু, তামিলনাড়ু’। তিনি যদিও অদ্যাবধি সাংসদ নহেন। তামিলনাড়ুর পশ্চিমাঞ্চলের একটি বিক্ষিপ্ত অঞ্চল লোকমুখে কোঙ্গুনাড়ু নামে পরিচিত, সরকারি খাতায় তাহার নামমাত্র নাই। অতএব, মন্ত্রীর নামের সহিত কোঙ্গুনাড়ুর উল্লেখ পৃথক অঞ্চল হিসাবে উহার স্বীকৃতির সুযোগ তৈরি করিয়াছে। ইহাতে রাজ্যভাগের পূর্বসূত্র দেখিয়াছেন তামিল রাজনীতির অপর নেতাগণ, এবং বিজেপির একটি অংশ তাহা অস্বীকার করে নাই। তাহাদের যুক্তি, অন্ধ্রপ্রদেশ বা উত্তরপ্রদেশ ভাগ হইতে পারিলে তামিলনাড়ুর কালে এমন ‘গেল গেল’ রব উঠিতেছে কেন? ইহা সত্য যে, উক্ত প্রদেশসমূহ ভাগ হইবার ফলে কিছু প্রশাসনিক সুবিধা পাওয়া গিয়াছে। জনতারও যদি আঞ্চলিক জাতীয়তাবাদী আকাঙ্ক্ষা থাকে, তাহাকে অস্বীকার করা গণতান্ত্রিক সরকারের কাজ হইতে পারে না। একাধিক কারণেই রাজ্যভাগ একটি সম্ভাবনা হিসাবে বিবেচিত হইতে পারে। কিন্তু তাহা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই হইতে বাধ্য— প্রশাসনকে সঙ্গে লইয়া, সব পক্ষের কথা শুনিয়া, জনপরিসরে দীর্ঘ আলোচনা সারিয়া। এমন চোরাপথ নহে।

Advertisement

প্রশ্ন উঠিবে, সাম্প্রতিক বিতর্কটি কাহারা তুলিয়াছে? কী ভাবেই বা তুলিয়াছে? পৃথক রাজ্যের দাবি কি দীর্ঘকালীন? তাহা লইয়া কি প্রভূত আবেগ-অভিমান পুঞ্জীভূত হইয়াছে? অভিজ্ঞতা বলিবে, আধুনিক তামিল রাজনীতির ইতিহাসে কোঙ্গুনাড়ুর পৃথক অস্তিত্বের কথা কদাপি শুনা যায় নাই। রাজনীতিতে তাহার কোনও প্রতিফলন নাই, সমাজেও উৎসাহ নাই। সর্বভারতীয় পরিসরে কেহ কখনও উহার রাজনৈতিক স্বীকৃতির কথা উত্থাপন করেন নাই। কেবল প্রাচীন সঙ্গম সাহিত্যে তামিলনাড়ুকে যে পাঁচ অঞ্চলে ভাগ করা হইয়াছিল, তাহার একটি কোঙ্গুনাড়ু। যে প্রাদেশিক দাবির পিছনে গণ-রাজনীতি নাই, ইতিহাস নাই, মানুষের আবেগ নাই, কিসের স্বার্থে বিজেপি তাহাকে এমন প্রবল রাজনৈতিক তাৎপর্য প্রদানে আগ্রহী?

গভীরতর প্রশ্নটি এইখানেই। ইহার পশ্চাতে দুরভিসন্ধি নাই তো? পশ্চিমবঙ্গের ঘটনাক্রম দেখিলে সংশয় গাঢ়তর হয়। যে সকল রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতা দখল করিতে পারে নাই, সেই সব অঞ্চলে তাহারা এই রূপ দাবি তুলিতেছে, বিশেষত তাহাদের শক্ত ঘাঁটিতে। তামিলনাড়ুতে বিজেপির যেটুকু উপস্থিতি বর্তমান, তাহা ওই পশ্চিমাঞ্চলেই সীমাবদ্ধ। অতএব, রাজনৈতিক পুঁজি তৈরির জন্য নূতন সম্ভাবনার অন্বেষণ। পশ্চিমের জেলাগুলি রাজধানী চেন্নাই হইতে দূরবর্তী, বঞ্চনা ও তজ্জনিত ক্ষোভও তাই কিঞ্চিৎ অধিক। কিন্তু তাহা কোনও বিভেদকামী রাজনীতির সোপান হইতে পারে না— উহা পরিত্যাজ্য। না হইলে কী ক্ষতি হইতে পারে, দেশের বহু অঞ্চলই তাহার সাক্ষ্য দিবে। ইহাও ভুলিলে চলিবে না, কিয়ৎকাল পূর্বে দিল্লির সরকারের উল্লেখে ‘কেন্দ্রীয়’ শব্দটির পরিবর্তে ‘ইউনিয়ন’ (ওন্দ্রিয়া) শব্দের ব্যবহার বিজেপিকে রুষ্ট করিয়াছিল। এই সঙ্কীর্ণ রাজনীতি যদি তাহার পাল্টা চাল হয়, তবে উহা রাজধর্ম হইতে চ্যুত হইবার এক বিপজ্জনক উদাহরণ হইয়া রহিল।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement