বাস চালাইবার অনুমতি মিলিল, কিন্তু বাসের দেখা মিলিল না। করোনা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ আরও কিছু শিথিল করিবার কালে ১ জুলাই হইতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ৫০ শতাংশ যাত্রী লইয়া বাস চালাইবার কথা বলিয়াছিলেন। ইতিপূর্বে দেখা গিয়াছিল, সরকারি, বেসরকারি অফিস আংশিক খুলিলেও গণপরিবহণে নিষেধাজ্ঞা জারি থাকিবার কারণে বিপদে পড়িয়াছিলেন নিত্যযাত্রীরা। সুতরাং, বিধিনিষেধের এই পর্বে দুর্ভোগ কিছু কমিবে, এমনটাই আশা ছিল। তাহা হয় নাই। বরং সীমিত সংখ্যক বাসে উপচাইয়া পড়িয়াছে ভিড়। গত বৎসর লকডাউন শিথিল হইবার পরও একই চিত্র দেখা গিয়াছিল। ভাড়া বৃদ্ধি না করিয়া সীমিতসংখ্যক যাত্রী লইয়া বাস চালাইতে রাজি হন নাই বেসরকারি বাসমালিকরা। সেই ধারা এই বৎসরও অব্যাহত থাকিল।
নাগরিক চাহিতেছেন, যাতায়াতের সুবিধার্থে যথেষ্ট সংখ্যক বাস পথে নামুক; সরকার চাহিতেছে, নাগরিকের যাতায়াতের সুবিধার সঙ্গেই তাহার স্বাস্থ্যসুরক্ষার বিষয়টিও নিশ্চিত হউক; বেসরকারি বাসমালিকরা চাহিতেছেন বাস পথে না-নামাইতে, কারণ সাম্প্রতিক ব্যবস্থাটি তাঁহাদের কাছে অর্থনৈতিক দিক হইতে লাভজনক নহে। এসইউসি-র ন্যায় রাজনৈতিক দল ঘোলা জলে মাছ ধরিতে চাহিতেছে— তাহারা দাবি করিয়াছে যে, কোনও অবস্থাতেই বাসের ভাড়া বাড়ানো চলিবে না। রাজ্য সরকারও লোক চটাইতে নারাজ, ফলে নবান্ন জানাইয়াছে, বাসভাড়া বাড়িবে না। ইতিমধ্যে জ্বালানির দাম আকাশ ছুঁইয়াছে। বাসমালিকদের অভিযোগ— পুরাতন ভাড়ায় সরকার নির্ধারিত যাত্রিসংখ্যা লইয়া বাস চালাইতে হইলে তাঁহাদের বিপুল ক্ষতি। কথাটি উড়াইয়া দিবার নহে। বৃহত্তর স্বার্থে তাঁহারা অনির্দিষ্ট কালের জন্য এই ক্ষতি স্বীকার করিয়াই চলিবেন, এমন প্রত্যাশা না করাই ভাল। বাসভাড়া বৃদ্ধির প্রশ্নটির যত শীঘ্র সম্ভব মীমাংসা হওয়া প্রয়োজন।
ভাড়া বাড়িলে মানুষ ক্ষুব্ধ হইবেন, না কি তাহার ফলে বাস সহজলভ্য হইলে স্বস্তির শ্বাস ফেলিবেন, তাহা নিশ্চিত ভাবে বলা মুশকিল। কিন্তু, বাসে যে অঘোষিত ভাড়াবৃদ্ধি হইয়াছে, বা বাসের অপ্রতুলতার সুযোগে অটোচালকরা যে ভাবে যথেচ্ছ ভাড়া আদায় করিতেছেন, তাহা দেখিলে অনুমান হয়, বাসভাড়া খানিক বাড়াইয়া যদি বাসের সংখ্যাবৃদ্ধি সম্ভব হয়, তবে মানুষের আপত্তি থাকিবে না। কিন্তু, সরকার যদি ভাড়া বাড়াইতে একান্তই নারাজ হয়, তবে তাহার দায়টি বাসমালিকদের উপর না চাপাইয়া সরকারেরই বহন করা বিধেয়। সরকার আপৎকালীন ভর্তুকির পথে হাঁটিতে পারে। কিন্তু ভর্তুকির সমস্যা হইল, এক বার চালু হইয়া গেলে তাহা চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে পরিণত হয়। ‘আপৎকালীন ব্যবস্থা’ হিসাবে যে ভর্তুকি চালু হইয়াছিল, পরিস্থিতি বদলাইবার পরও তাহা প্রত্যাহার করিবার সাহস কোনও সরকারেরই সচরাচর হয় না। বরং, সীমিত সময়ের জন্য সরকার স্বয়ং কিছু বেসরকারি বাস লিজ় লইয়া চালাইতে পারে, সরকারি বাসের সঙ্গেই। আরও নানা উপায় আছে। প্রয়োজনে উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনা করিতে হইবে। কিন্তু কার্যকর একটি সিদ্ধান্ত এখনই লইতে হইবে। আরও বিলম্বের অর্থ, জনগণের দুর্দশা আরও বৃদ্ধি। এখনও সাধারণ মানুষকে যে ভাবে যাতায়াত করিতে হইতেছে, তাহাতে তৃতীয় প্রবাহের পদধ্বনি শোনা যাইতেছে।