One Nation One Ration Card

এক হউক

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০২১ ০৬:০৬
Share:


অবশেষে ‘এক দেশ এক রেশন কার্ড’ ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত হইতে চলিয়াছে পশ্চিমবঙ্গ। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে রাজ্য প্রশাসন জানাইয়া দিয়াছে, অপরাপর রাজ্যের বাসিন্দারা যাহাতে পশ্চিমবঙ্গেও রেশনব্যবস্থার সুযোগ গ্রহণ করিতে পারেন, তাহার ব্যবস্থা হইবে। রাজ্যবাসীও অন্যান্য রাজ্যে রেশন পাইবেন। দেশের সব রাজ্য এই প্রকল্পের অধীনে আসিতে সম্মত হইলে তবেই প্রকল্পটি সফল হইতে পারে। ভারতে এক কোটিরও অধিক পরিযায়ী শ্রমিক নিজের জন্মস্থান হইতে দূরে কোনও জেলা কিংবা রাজ্যে কাজ করিতে যান। সেখানে তাঁহাদের রেশনব্যবস্থার উপভোক্তা বলিয়া স্বীকার করা হয় না, তাঁহারা ন্যায্য প্রাপ্য হারাইতে বাধ্য হন। তাঁহারা ভারতবাসী, অথচ স্থায়ী ঠিকানার গণ্ডি টপকাইলেই তাঁহাদের ‘নাগরিক’ পরিচিতি থমকাইয়া যায়। গত বৎসর কোভিড অতিমারি এই অ-ব্যবস্থার ভয়াবহ পরিণাম সম্মুখে আনিয়াছিল। অনাহারে মৃত্যুর আশঙ্কায় কর্মহীন নরনারী বহু মাইল হাঁটিয়া ঘরে ফিরিয়াছেন। সরকারি গুদামে যথেষ্ট খাদ্যশস্য মজুত ছিল, কিন্তু যথাযথ বণ্টন হয় নাই। খাদ্য নিরাপত্তা আইন (২০১৩) পাশ করিবার পরবর্তী সাত বৎসরে কয়েক কোটি রেশন গ্রাহকের কাছে সরকার তাঁহাদের প্রাপ্য চাল-গম পৌঁছাইতে পারে নাই, কারণ তাহার উপযোগী ব্যবস্থা প্রস্তুত করা হয় নাই। স্থায়ী ঠিকানা না থাকিলে রেশনও নাই, এই ব্যবস্থা নিঃসন্দেহে বণ্টনের পথে একটি বড় বাধা। ‘এক দেশ, এক রেশন কার্ড’ ব্যবস্থা সেই বাধা দূর করিবার পথে একটি জরুরি পদক্ষেপ।
‘এক দেশ এক রেশন কার্ড’ প্রকল্পের প্রয়োজন অনস্বীকার্য, কিন্তু তাহার পদ্ধতি লইয়া প্রশ্ন উঠিতে বাধ্য। বর্তমানে আধার কার্ডের সহিত রেশন কার্ডের সংযুক্তিই এই প্রকল্প রূপায়ণের একমাত্র উপায় বলিয়া নির্ধারিত হইয়াছে। ইহার কারণ কী, তাহা স্পষ্ট নহে। কেন্দ্র বিবিধ সরকারি এবং বেসরকারি পরিষেবার জন্য আধার কার্ডকে আবশ্যক করিতে সদাই সচেষ্ট, কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট সেই প্রচেষ্টা প্রতিহত করিয়াছে। আজ ব্যাঙ্ক, টেলিফোন, বিদ্যালয় শিক্ষা, সর্বভারতীয় পরীক্ষা, এমন নানা সুযোগের জন্য আধার আবশ্যিক নহে, ঐচ্ছিক। এখন খাদ্য পাইবার জন্য রেশন কার্ডের আধার-সংযুক্তিকে শর্ত করা হইল। নাগরিকত্বের অপর কোনও বৈধ প্রমাণ গ্রাহ্য হইবে না কেন? ভুলিলে চলিবে না যে, আধার-সংযুক্তির জন্য প্রক্রিয়া স্বচ্ছ, ত্রুটিমুক্ত অথবা তৎপর নহে, তাহা নাগরিকের নিয়ন্ত্রণাধীনও নহে। সংযুক্তি না হইবার জন্য, অথবা তথ্যে অসঙ্গতি থাকিবার ফলে বহু নাগরিক অসহায় ভাবে প্রতারণা ও বঞ্চনা সহিতেছেন। এ রাজ্য হইতে প্রতি বৎসর দশ লক্ষেরও অধিক শ্রমিক অন্য রাজ্যে কাজ করিতে যান। তাঁহাদের সকলেরই রেশন-আধার সংযুক্তি হইবে কি না, হইলে কবে হইবে, কে বলিতে পারে? সম্প্রতি কর্মচারীদের ভবিষ্যনিধির সহিত আধার কার্ডের সংযুক্তি আবশ্যক হইবার ফলে কয়েক লক্ষ শ্রমিক সঞ্চয় হারাইতে বসিয়াছেন।

Advertisement

২০১৯ সালে পরীক্ষামূলক ভাবে চারটি রাজ্যে ‘এক দেশ এক রেশন কার্ড’ প্রকল্প শুরু হইয়াছিল। অতিমারির জন্য আপৎকালীন পরিস্থিতির উদ্ভব না হইলে হয়তো সারা দেশে ২০২১ সালের মধ্যে তাহা রূপায়ণ করিবার কাজ এত দ্রুত অগ্রসর হইত না। কিন্তু, ভারতীয় নাগরিকদের অল্প অংশই ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র অধিবাসী। তাই ভারতের প্রশাসনে নিয়মের নমনীয়তা প্রয়োজন। অপচয় আটকাইতে হইবে, কিন্তু নাগরিকের অধিকারের সুরক্ষাও করিতে হইবে। বিশেষত, খাদ্যের ক্ষেত্রে নাগরিকের প্রয়োজনকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। প্রশাসনিক শর্তের বজ্রআঁটুনির জন্য যদি ক্ষুধা-অপুষ্টি বাড়িয়া যায়, তাহাতে ক্ষতিই অধিক। যে রেশন গ্রাহকরা আধার-সংযুক্তিতে অপারগ বা অনিচ্ছুক, তাঁহারাও বাদ না পড়িয়া যান, তাহা নিশ্চিত করিতে হইবে রাষ্ট্রকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement