Rations

গরিবের অন্ন

গত দু’বছরে অন্তত ছাপ্পান্ন কোটি ভারতীয় খাদ্য নিরাপত্তার অভাবে ভুগেছেন, যা ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় চল্লিশ শতাংশ।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৫:৩৯
Share:

ভারতে খাদ্য নিরাপত্তার ছবি ভরসা দেয় না।

কোভিড অতিমারির জন্য কেন্দ্রীয় সরকার যে অতিরিক্ত খাদ্যশস্য রেশনের মাধ্যমে বিলি করছিল, চলতি মাসেই তা শেষ হওয়ার কথা। রাজ্য সরকারগুলি অবশ্য ইতিমধ্যে কেন্দ্রের কাছে বার বার আবেদন করেছে ‘প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা’ চালিয়ে যাওয়ার জন্য। বিশেষত আগামী অক্টোবরে, উৎসবের মরসুমে এই প্রকল্প চালু রাখার সুপারিশ করেছে রাজ্যগুলি। কিন্তু এ বছর গম ও ধান, দুটোরই উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দেওয়ায় খাদ্য নিগমের বিপুল খাদ্যভান্ডারে টান পড়েছে। গমের রফতানি বন্ধ করে, চালের রফতানি নিয়ন্ত্রণ করেও বাজারে দাম কমছে না। অন্য দিকে, কেন্দ্রের যুক্তি, লকডাউন শেষ হয়ে গিয়েছে, কর্মক্ষেত্রগুলি খুলে গিয়েছে, ফলে প্রকল্পের প্রয়োজন কমেছে। বিশেষত খাদ্য নিরাপত্তা আইনের প্রকল্পটি অনুসারে মাথাপিছু মাসে পাঁচ কিলোগ্রাম খাদ্যশস্য (দুই বা তিন টাকা কিলোগ্রাম দরে) রেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে গণবণ্টনের প্রকল্প চলছেই। অন্ন যোজনার বাড়তি শস্য— বিনামূল্যে পরিবার পিছু মাসে পঁচিশ কিলোগ্রাম খাদ্যশস্য— বন্ধ হবে কেবল। গত দুই বছরে এই প্রকল্পের জন্য আড়াই লক্ষ কোটি টাকারও বেশি ব্যয় হয়েছে, এই আর্থিক বর্ষে এখনও অবধি খরচ আশি হাজার কোটি টাকা। উৎপাদনে ঘাটতির জন্য বাজারে চালের দাম বাড়লে ভর্তুকির পরিমাণ আরও বাড়বে। সেই সঙ্গে, মজুত চাল-গমের পরিমাণ ন্যূনতম সীমার চাইতে কমে যেতে পারে।

Advertisement

খরচ কমাতে কেন্দ্র এই আপৎকালীন সহায়তার প্রকল্পটিকে বন্ধ করবে, এমন ইঙ্গিত মিলছে। কিন্তু সহায়তার প্রয়োজন কি সত্যিই কমেছে? ভারতে খাদ্য নিরাপত্তার ছবি প্রকাশিত সেই ভরসা দেয় না। গত জুলাই মাসে প্রকাশিত রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি আন্তর্জাতিক রিপোর্টে ধরা পড়েছে, ভারতে ২০১৮-২০ সালের তুলনায় ২০১৯-২১ সালে ক্ষুধা ও অপুষ্টির প্রকোপ বেড়েছে। গত দু’বছরে অন্তত ছাপ্পান্ন কোটি ভারতীয় খাদ্য নিরাপত্তার অভাবে ভুগেছেন, যা ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় চল্লিশ শতাংশ। আরও আশঙ্কার কথা এই যে, চূড়ান্ত খাদ্য নিরাপত্তার কবলে মানুষের সংখ্যা ২০১৫-১৭ সালে ছিল উনিশ কোটি, এখন তা তিরিশ কোটি ছাড়িয়েছে। বেড়েছে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষুধায় আক্রান্ত পরিবারের সংখ্যাও। ভারতের নানা সরকারি-অসরকারি সমীক্ষাতেও অপুষ্টি, বিশেষত শিশু অপুষ্টির যে চিত্র মিলেছে, তা বার বারই পরিবারগুলির ক্রমবর্ধমান পুষ্টির অভাবের ছবি তুলে ধরছে। সেই সঙ্গে মিলছে কর্মহীনতার ছবিও— লকডাউন উঠেছে, কিন্তু হারানো কাজ ফিরে আসেনি বহু পরিবারে। ভারত সরকারের বিশ্লেষণ অনুসারেই কর্মহীনতার হার ২০১৭ সাল থেকে ২০২২ সালে বেড়েছে। ভারতে অর্থনীতির বৃদ্ধি গড় ভারতীয়ের রোজগার বাড়াচ্ছে না। বরং অসংগঠিত ক্ষেত্রে মজুরি কমছে, তার ইঙ্গিত মিলছে। ফলে আমজনতার ক্রয়ক্ষমতা কমছে, পাল্লা দিয়ে কমছে ভোগব্যয়ও।

এই পরিস্থিতিতে অনেকে গণবণ্টনকে সার্বিক করার পক্ষে সওয়াল করেছেন। কেন্দ্র বর্তমানে আশি কোটি মানুষকে খাদ্যের অধিকারের অধীনে সহায়তা দিচ্ছে, কিন্তু এই সংখ্যা ২০১১ সালের জনসংখ্যার নিরিখে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। বাস্তব চাহিদা আরও বেশি বলে পশ্চিমবঙ্গের মতো বহু রাজ্য আরও কয়েক কোটি নাগরিককে সহায়তা দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার সহায়তা কমালে রাজ্যগুলির বোঝা বাড়বে। সেই সঙ্গে ২০১৪ সালের পর প্রায় চার কোটি রেশন কার্ড বাতিল হয়েছে। এর সবই ভুয়ো, না কি আধার-সংযুক্তির বিড়ম্বনায় যথার্থ গ্রাহক বঞ্চিত হচ্ছেন, সেই প্রশ্নও থেকে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে খাদ্যবঞ্চনা তীব্রতর হতে চলেছে। খাদ্যশস্যের মূল্য মেটাতে সরকার দ্বিধা করছে— কিন্তু এই বিরাট অপুষ্টির মূল্য কী ভাবে মেটাবে দেশ?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement