Social Media

নিয়ন্ত্রণের বাসনা

সমাজমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণের এই বাসনার মধ্যে ভারতের ‘চিন’ হয়ে উঠতে চাওয়ার আশঙ্কাটি প্রকট।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২২ ০৫:৪৯
Share:

সমাজমাধ্যমের উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ জরুরি কি না, সে প্রশ্ন দীর্ঘ দিনের। প্রতীকী ছবি।

সমাজমাধ্যমের বিরুদ্ধে ওঠা ব্যবহারকারীদের নানাবিধ অভিযোগ শুনতে এবং তার প্রতিকারের উদ্দেশ্যে ভারতে কেন্দ্রীয় সরকার কমিটি গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কমিটিগুলির শীর্ষে থাকবেন সরকার নিযুক্ত সদস্যরা। উদ্দেশ্য— সমাজমাধ্যমে পোস্ট হওয়া পর্নোগ্রাফি, জাল তথ্য, ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত হানতে পারে এমন বিষয় যা দেশের সার্বভৌমত্বের পক্ষে ক্ষতিকর, তা নিয়ে ব্যবহারকারীর অভিযোগের ভিত্তিতে সমাজমাধ্যম কোম্পানিগুলিকে তলব এবং প্রতিকারের ব্যবস্থা করা। এক কথায়, বিজেপি সরকারের নতুন তথ্যপ্রযুক্তি আইনের সংশোধনী অনুযায়ী, সমাজমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলির ‘কনটেন্ট মডারেশন’ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারই অতঃপর শেষ কথা বলবে।

Advertisement

সমাজমাধ্যমের উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ জরুরি কি না, সে প্রশ্ন দীর্ঘ দিনের। বিভিন্ন চরমপন্থী মতামত, ভুয়ো খবর বা গুজব প্রচারে যে সমাজমাধ্যম অনেকাংশে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে, সে কথা অনস্বীকার্য। সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে প্রথাগত মাধ্যমের যে দায়বদ্ধতা আছে, সমাজমাধ্যমের তা থাকে না। সেই দায়বদ্ধতার অনুশীলন প্রয়োজন নিঃসন্দেহে। কিন্তু এটাও মনে রাখা জরুরি যে, গোটা দুনিয়াতেই সমাজমাধ্যমে বিদ্বেষবিষ ছড়ানোর কাজটিতে দক্ষিণপন্থীরা অগ্রগণ্য; এবং ভারতের অভিজ্ঞতা বলছে, ফেসবুক-টুইটারে কুকথা বলার, গুজব রটানোর মতো কাজের পিছনে বিজেপির নেতা-কর্মী-আইটি সেলের উপস্থিতি তুলনায় অনেক বেশি। কেন্দ্রীয় সরকারের নিযুক্ত কমিটি তাদের নিয়ন্ত্রণ করবে বলে বিশ্বাস করা কঠিন। যে সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে তারা ব্যবহারকারীর অভিযোগ জানানোর প্রয়োজনকে মান্যতা দিয়েছে, সংখ্যালঘুর উপর আক্রমণ শাণাতে বা বিরোধী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করতে সেই একই সার্বভৌমত্ব রক্ষার অজুহাত তারা সচরাচর ব্যবহার করে থাকে। নেকড়েকে খামার দেখভালের দায়িত্ব দিলে কী হয়, শিশুপাঠ্য কাহিনিতেই তার উত্তর রয়েছে।

২০২০ সালে ফেসবুকের প্রাক্তন ডেটা সায়েন্টিস্ট সোফি ঝ্যাং বিশ্বে রাজনৈতিক ক্ষমতাবানদের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলির নিয়ম ভাঙা এবং সে বিষয়ে সমাজমাধ্যম কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয় থাকার যে অভিযোগ তুলেছিলেন, তার নিশানায় ভারত সরকারও ছিল। এই অভিযোগ নতুন নয়। ক্ষমতাবানরা সমাজমাধ্যমের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্মকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইবেন, সেটাই স্বাভাবিক। বিশ্বের অন্যত্রও তেমনটাই দেখা গিয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত করতে হবে ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক চরিত্র। এ দেশে শাসক-বিরোধী নির্বিশেষে রাজনীতিকরা জনসমাজের স্বাধীন চিন্তা ও মতামত দমন করতে সদা আগ্রহী। আশঙ্কা, সমাজমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণের অছিলায় তার স্বাধীনতাটুকুকে হয়তো সম্পূর্ণ হরণ করা হবে। সমাজমাধ্যমের শত ত্রুটির মধ্যেও তার গণতান্ত্রিক পরিসরটির গুরুত্ব অনস্বীকার্য। সেখানে এখনও বিরোধী স্বর তোলার অবকাশ ক্ষীণ হলেও রয়েছে। সরকারি নজরদারি কঠোর হলে সেই অবকাশটুকু সম্পূর্ণ মুছে দেওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সে ক্ষেত্রে শাসক-বিরোধী যাবতীয় মত সার্বভৌমত্ব নষ্টের অজুহাতে মুছে দেওয়া হবে। কর্তৃত্ববাদী সরকার সর্বদাই এই নিরঙ্কুশ অধিকার চায়। সমাজমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণের এই বাসনার মধ্যে ভারতের ‘চিন’ হয়ে উঠতে চাওয়ার আশঙ্কাটি প্রকট।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement