প্রতীকী ছবি।
Centraভারতের অন্তত অর্ধেক নাগরিক এখনও অতিমারি-জনিত আর্থিক সঙ্কটে বিপর্যস্ত, কাজেই তাঁহাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা জারি রাখিতে হইবে। বাজেট অধিবেশনের আগে এমনই পরামর্শ দিয়াছে আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডার। কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই সেই অভিমুখে কিছু পদক্ষেপ করিয়াছে। বিনামূল্যে খাদ্যশস্য বিতরণের সময়সীমা ফের বাড়াইয়াছে, কোভিড-পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় বর্তমানে খাদ্যে ভর্তুকির অর্থমূল্য দেড়গুণ হইয়াছে। গ্রামের দরিদ্রের কর্মসংস্থান বাড়াইতে মহাত্মা গান্ধী গ্রামীণ রোজগার নিশ্চয়তা প্রকল্পেও বাড়তি টাকা বরাদ্দ করিয়াছে। সরকারি তরফে অর্থনীতিতে গতি আনিবার অপর একটি উপায় পরিকাঠামোয় অধিক বিনিয়োগ। বিগত কয় বৎসর ধরিয়াই কেন্দ্রীয় সরকার বিশ্বমানের পরিকাঠামো নির্মাণের লক্ষ্যে বিপুল বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিতেছে। পঁচাত্তরতম স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতাতেও ১০০ লক্ষ কোটি টাকা পরিকাঠামোয় খরচ করিবার আশ্বাস মিলিয়াছিল। অর্থাৎ, আশ্বাসের অভাব নাই।
পরিকাঠামো উন্নয়ন স্বল্প মেয়াদে এবং দীর্ঘ মেয়াদে উন্নয়নে গতি আনিতে পারে, তাহাতে সন্দেহ নাই। বিশেষত সড়ক নির্মাণ ও সংস্কার, রেল-সহ অন্যান্য পরিবহণের উন্নয়ন, দূষণহীন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উৎপাদনে অধিক বরাদ্দ সরকারি তরফেও বারংবার ঘোষিত হইয়াছে, শীর্ষ রাজনৈতিক নেতারাও সে আশ্বাস দিয়াছেন। যদিও অন্তত পূর্ব ভারতে পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজে লক্ষণীয় গতি এখনও ধরা পড়ে নাই। গ্রামীণ কর্মসংস্থান অথবা জাতীয় পরিকাঠামোয় ব্যয় কতটা ত্বরান্বিত হইয়াছে, তাহা আগামী বাজেট অধিবেশনে স্পষ্ট হইবে। কিন্তু মূল সমস্যাটি অর্থাভাবের নহে, তাহা সরকারি দৃষ্টির সঙ্কীর্ণতা, প্রচেষ্টার ক্ষুদ্রতা। গত দুই দশকে গ্রামীণ অর্থনীতি ক্রমশ গতি হারাইয়াছে। বিশেষত কৃষি ও তৎসম্পর্কিত কাজগুলিতে আয় কমিয়াছে, চাষি পরিযায়ী শ্রমিক হইয়াছেন, এই সত্য তীব্র রূপে সম্মুখে আসিয়াছে। অথচ ২০০৫ সালের গ্রামীণ কর্মনিশ্চয়তা প্রকল্প, এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে ক্ষুদ্র ঋণ দানের প্রাচীনতর প্রকল্প— এই দুইটি ভিন্ন অপর কোনও নীতি অথবা প্রকল্প দেশবাসী দেখে নাই।
অর্থাৎ নরেন্দ্র মোদীর শাসনকালে এমন কোনও উদ্যোগ দেখা যায় নাই, যাহা অসাম্যের ছক বদলাইয়া নূতন সুযোগের সন্ধান দান করিতে পারে। সাম্প্রতিক কালে মহা আড়ম্বরে যে সকল প্রকল্প ঘোষিত হইয়াছে, তাহার অধিকাংশই ভর্তুকি অথবা অনুদান। অর্থাৎ সহায়তার প্রকল্প, সক্ষমতার নহে। নূতন চিন্তার কোনও সাক্ষ্য সেগুলি বহন করে না। সুযোগে সমতা আনিয়া দরিদ্রের উন্নয়নের উপযোগী ব্যবস্থা তৈরির দায় কি সরকার গ্রহণ করিয়াছে? তাহাতে সন্দেহ জাগে। কারণ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ, যে মন্ত্রকগুলি দারিদ্র নিরসনে অতি গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলিতে বরাদ্দ যথেষ্ট বাড়ে নাই, বহু ক্ষেত্রে ব্যয়ের হার নিরাশাজনক। অথচ ডিজিটাল শিক্ষা এবং প্রাথমিক চিকিৎসার পরিকাঠামোয় বিনিয়োগ গ্রামবাসীর জন্য কত গুরুত্বপূর্ণ, তাহা অতিমারি নূতন করিয়া দেখাইল। দরিদ্রের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কী রূপ পরিকাঠামো নির্মাণ প্রয়োজন, তাহা নির্ধারণ না করিয়াই বিনিয়োগের অঙ্ক লইয়া দর কষাকষি করিয়া লাভ কী? উন্নয়নের যজ্ঞে ভস্মে ঘি অধিক ঢালা হইয়া থাকে।