BJP

নিধিরাম

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়— তাহার আক্ষরিক অর্থে, এবং মূলগত চেতনার নিরিখে— কত ভাবে অন্তর্ঘাত ঘটানো সম্ভব, ভারতের বর্তমান শাসকরা তাহার নূতনতর দিগন্ত খুলিয়া দিতেছেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২১ ০৪:৫৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

দিল্লির প্রশাসনিক ক্ষমতা সংক্রান্ত ‘দ্য গভর্নমেন্ট অব ন্যাশনাল ক্যাপিটল টেরিটরি অব দিল্লি (সংশোধিত) বিল’ পাশ হইল সংসদে। দিল্লির নির্বাচিত সরকারকে নিধিরাম সর্দার বানাইয়া উপরাজ্যপালের হাতে কার্যত সব ক্ষমতা তুলিয়া দিবার কথা বলা হইয়াছে এই বিলে। রাষ্ট্রপতিও স্বাক্ষর করিয়া দিয়াছেন, এখন অপেক্ষা শুধুমাত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ঘোষণার। তাহার পরই দিল্লিতে প্রচলিত হইবে এই আইন। অতঃপর দিল্লির ‘সরকার’ বলিতে উপরাজ্যপালকেই বুঝাইবে। অরবিন্দ কেজরীবাল সরকারকে যে কোনও পদক্ষেপ করিবার পূর্বে উপরাজ্যপালের পরামর্শ লইতে হইবে।

Advertisement

ইতিপূর্বেও দিল্লিতে যৌথ শাসন প্রচলিত ছিল। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়াছিল যে, লেফটেন্যান্ট গভর্নর নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে বাধা দিতে পারিবেন না। দিল্লি প্রশাসনের সমস্ত সিদ্ধান্ত অবশ্যই তাঁহার গোচরে আনিতে হইবে— তবে, সর্বক্ষেত্রে তাঁহার সম্মতির প্রয়োজন পড়িবে না। নূতন আইনে সুপ্রিম কোর্ট-নির্দিষ্ট সেই প্রচলিত কাঠামোটিকেই পরিবর্তিত করা হইল। অতঃপর দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী পদটি কার্যত আলঙ্কারিক হইবে। অনুমান করা চলে, উপরাজ্যপাল ধোঁকার টাটিমাত্র— প্রকৃত প্রস্তাবে কেন্দ্রীয় সরকারের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ভিত্তিতেই চলিবে দিল্লির শাসন। ইহা ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় নীতির বিরোধী। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কোনও প্রাদেশিক সরকার সমস্ত সিদ্ধান্তের জন্য কেন্দ্রীয় প্রতিনিধির মুখাপেক্ষী হইয়া থাকিতে পারে না। এবং গুরুত্বপূর্ণ এই বিল পাশ হইল এমন এক সময়ে, যখন পাঁচটি রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের সম্মুখে দাঁড়াইয়া। রাজ্যগুলির সাংসদরা স্ব স্ব রাজ্যে ব্যস্ত থাকিবেন, সংসদে ভোটাভুটিতে অংশগ্রহণ করিতে পারিবেন না। তৎসত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যসভার আট সাংসদ দিল্লি পৌঁছাইয়াছিলেন। দিল্লির শাসক দল আম আদমি পার্টি, কংগ্রেস-সহ একাধিক বিরোধী দল বিলের প্রতিবাদে রাজ্যসভায় ওয়াকআউট করিল। কিন্তু, সংখ্যার জোরে বিল পাশ করাইয়া লইতে শাসকপক্ষের সমস্যা হয় নাই।

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়— তাহার আক্ষরিক অর্থে, এবং মূলগত চেতনার নিরিখে— কত ভাবে অন্তর্ঘাত ঘটানো সম্ভব, ভারতের বর্তমান শাসকরা তাহার নূতনতর দিগন্ত খুলিয়া দিতেছেন। সংসদ ভবনটিকে একটি নির্মম রসিকতায় পর্যবসিত করিয়াছেন— হয় অধ্যাদেশের মাধ্যমে আইন প্রণীত হয়, নচেৎ সভায় আলোচনার অবকাশই থাকে না, অথবা সংখ্যাগরিষ্ঠতার দাপটে বিরোধী স্বরগুলি সম্পূর্ণ চাপা পড়িয়া যায়। অতিমারির অজুহাতে গত এক বৎসরে সংসদকে এড়াইয়া কৃষি বিল-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ করাইয়া লওয়া হইয়াছে। অন্য দিকে, বিভিন্ন রাজ্যে জনগণের মতে নির্বাচিত সরকারকে ফেলিয়া দিবার বা পঙ্গু করিয়া ফেলিবার একাধিক মডেলও দেখাইয়া দিয়াছে— কোথাও বিধায়ক কিনিয়া, কোথাও আবার আইন পাল্টাইয়া। গণতন্ত্রে বিরোধীদের আপত্তি, বিরোধিতা শুনিবার এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনার সুযোগ দিবার দায়িত্ব শাসক দলেরই। ভারতের বর্তমান শাসকরা সেই দায়িত্ব পালন করিবেন, এমন আশা প্রত্যহ ক্ষীণতর হইতেছে। কিন্তু, গণতন্ত্রকে ভূলুণ্ঠিত করিবার যে ইতিহাস রচিত হইতেছে, তাহা ভারতকে বারে বারে দংশন করিবে বলিয়াই আশঙ্কা। জম্মু ও কাশ্মীরের পর যেমন দিল্লি দংশিত হইল।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement