RURAL EMPLOYMENT

উদ্বেগ অব্যাহত

আগের অর্থবর্ষের তুলনায় একশো দিনের কাজের বরাদ্দও কমানো হয় ২৫ শতাংশের বেশি। গ্রামেগঞ্জে কৃষির বাইরে রোজগারের বড় ভরসা হল একশো দিনের কাজ।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:৫১
Share:

বিজেপি সরকার ভারতের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলে বিভিন্ন সময় দাবি করলেও, গ্রামাঞ্চলে কর্মসংস্থানের বেহাল দশা সরকারকে স্বস্তিতে রাখেনি। দেশের বর্তমান বেকারত্বের চিত্রটি কেমন? পরিসংখ্যান সংস্থা সিএমআইই-র রিপোর্ট অনুসারে, নভেম্বর মাসে ভারতে বেকারত্বের হার ফের আট শতাংশের সীমা ছাড়িয়েছে। শহরে হারটি ৯ শতাংশের বেশি। গ্রামে কিঞ্চিৎ কম, সেখানে এই হার ৭.৫৫ শতাংশ। কিন্তু, ছবিটি আদৌ আশাব্যঞ্জক নয়। অক্টোবর অবধি গ্রামীণ বেকারত্বই সামগ্রিক কর্মসংস্থানহীনতার। সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি-র তথ্য বলছে, গ্রামাঞ্চলে বেকারত্বের হার সেপ্টেম্বরের ৫.৮৪ শতাংশ থেকে অক্টোবরে ৮.০৪ শতাংশে উঠে গিয়েছিল। রিপোর্ট অনুযায়ী, গ্রামীণ অর্থনীতিতে মূলত কৃষি বাদে অন্যান্য ক্ষেত্রে কাজ কম থাকায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

Advertisement

গ্রামীণ বেকারত্ব বিশেষ উদ্বেগের বিষয়। এই অর্থবর্ষে বাজেটে গ্রামের বিভিন্ন প্রকল্পে ১.৩৬ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল কেন্দ্র। আগের অর্থবর্ষের তুলনায় একশো দিনের কাজের বরাদ্দও কমানো হয় ২৫ শতাংশের বেশি। গ্রামেগঞ্জে কৃষির বাইরে রোজগারের বড় ভরসা হল একশো দিনের কাজ। শ্রমিকদের হাতে আসা এই অর্থ বিক্রি বাড়িয়ে সচল রাখতে সাহায্য করে গ্রামীণ অর্থনীতিকে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বাজেটে বরাদ্দ হ্রাসের প্রভাব পড়ে প্রকল্পের কাজ এবং কর্মসংস্থানের উপরে। বছরের মাঝামাঝি বা তার পরে বরাদ্দের অর্থ শেষ হয়ে যাওয়ায় কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়নি। পাশাপাশি প্রকল্পের অর্থ না থাকায় বকেয়া থেকে গিয়েছে বহু শ্রমিকের মজুরিও। তা ছাড়া, গ্রামীণ অর্থব্যবস্থাতেও যন্ত্রের ব্যবহার ক্রমে বাড়ছে, ফলে শ্রমের চাহিদা কমছে। বিকল্প কর্মসংস্থানের পথ তৈরি না হওয়া উদ্বেগের কারণ বটে। কৃষি বাদে অন্যান্য ক্ষেত্রে পরিষেবায়, প্রধানত রিটেল বা খুচরো বিপণনে, উৎপাদন ক্ষেত্রে এবং নির্মাণক্ষেত্রে প্রচুর ছাঁটাই হয় অক্টোবরে। ক্রমহ্রাসমাণ আয় এবং ছাঁটাইয়ের পাশাপাশি মূল্যবৃদ্ধিও গ্রামাঞ্চলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা সঙ্কুচিত করেছে। এ ছাড়া, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ফলে পরিবহণ খরচ, আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন কাঁচাসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির মতো সমস্যাগুলিও কৃষিক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে।

ভারতীয় অর্থব্যবস্থায় গ্রামীণ ক্ষেত্রের গুরুত্বের কথা বাড়িয়ে বলার উপায় নেই। দেড় দশক আগে, আমেরিকার সাব-প্রাইম সঙ্কট যখন গোটা দুনিয়ার অর্থনীতিতে কাঁপন ধরিয়েছিল, ভারত তখন সেই ধাক্কা বহুলাংশে সামলেছিল গ্রামীণ অর্থনীতিতে চাহিদা বজায় থাকার ফলে। কাজেই গ্রামাঞ্চলে কর্মসংস্থানের প্রশ্নটিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া বিধেয়। কৃষির উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে অ-কৃষি ক্ষেত্রে নিয়োগের অনুপাত বাড়ানো জরুরি। একশো দিনের কাজ প্রকল্পকে তার প্রাপ্য গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি কৃষিক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি, কৃষিজ পরিকাঠামো এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়ানো, কৃষিজ বাজারগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করে চাষিরা যাতে তাঁদের উৎপাদিত দ্রব্যের সঠিক মূল্য পেতে পারেন, তার ব্যবস্থা করার মতো বিভিন্ন পদক্ষেপও করতে হবে। গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নতি হলে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতির উপরেও। ভারতের কেন্দ্রে রয়েছে গ্রাম, কথাটি ভুললে চলবে না।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement