Yogi Adityanath

ঔদ্ধত্য

গণতন্ত্রহীনতা বা পশ্চাৎমুখিতা নাগরিক নিরাপত্তার পথ হইতে পারে না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২১ ০৫:১৪
Share:

উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।

উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী বাংলার নির্বাচনী প্রচারে আসিয়া জানাইয়া গেলেন, তাঁহারা ক্ষমতায় আসিলে এই রাজ্যেও ‘অ্যান্টি রোমিয়ো’ বাহিনী তৈরি করিবেন। অর্থাৎ, যোগী আদিত্যনাথ কোনও রাখঢাক ব্যতীতই বলিলেন, বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসিলে স্বরূপেই আসিবে— পরধর্ম-অসহিষ্ণু, নারীবিদ্বেষী, পুরুষতান্ত্রিক রূপে; এমন একটি সত্তা রূপে, যাহা ভালবাসার অর্থ বোঝে না, শুধু বিদ্বেষ বোঝে। উত্তরপ্রদেশের ‘অ্যান্টি রোমিয়ো’ বাহিনী বিজেপির এই সত্তার প্রকাশস্বরূপ। তাহাদের নিকট হিন্দু-মুসলমানের প্রেম-সম্পর্ক অসহ্য, কারণ তাহারা ধর্মের গণ্ডি কাটে ঘৃণার কালিতে। তাহাদের নিকট একই ধর্মাবলম্বী নরনারীর প্রেমের প্রকাশও গ্রহণযোগ্য নহে, কারণ তাহারা নারীর ‘এজেন্সি’ এবং ‘সক্ষমতা’ স্বীকার করিতে নারাজ। তাহাদের নিকট নারীর অস্তিত্ব কেবল পুরুষের— এবং, তাহার পরিবর্ধিত সত্তা হিসাবে, পুরুষশাসিত পরিবার ও সমাজের— সম্পত্তি রূপে। ফলে, পরিবার-নির্দিষ্ট পুরুষ ব্যতীত অন্য কাহারও সঙ্গে নারীর সম্পর্ককে সম্মান করিবার কথা গৈরিকপন্থী মৌলবাদীরা ভাবিতেও পারে না। তাহাদের সঙ্কীর্ণ সমাজভাবনার রাষ্ট্রীয় প্রতিফলন ঘটিয়াছে সাম্প্রতিক উত্তরপ্রদেশে— মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ক্ষমতায় আসিয়াই ‘অ্যান্টি রোমিয়ো’ স্কোয়াড বানাইয়াছিলেন; অনতিবিলম্বে ‘লাভ জেহাদ’ নিবারণী আইনও তৈরি করিয়া লইয়াছেন। সভ্য জগৎ এই রাষ্ট্রীয় জুলুমকে ধিক্কার জানাইয়াছে— বলিয়াছে, ভারত নামক উদারপন্থী, বহুত্ববাদী সত্তার সহিত এই ব্যবস্থাগুলি সম্পূর্ণ বেমানান। আদিত্যনাথরা যে সেই ধিক্কারে তিলমাত্র লজ্জিত হন নাই, পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী প্রচারে আসিয়া তাহা বুঝাইয়া গেলেন।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গকে তাঁহারা কোন চোখে দেখিতেছেন, একই সঙ্গে তাহাও জানাইয়া গেলেন। রাজ্যের মানুষ বিরূপ হইবেন, ফলে দলের ভোটে তাহার আঁচ পড়িবে, এমন কোনও কথা বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে আসিয়া যোগী আদিত্যনাথের ন্যায় নেতা বলিবেন না বলিয়াই অনুমান করা চলে। অর্থাৎ, পশ্চিমবঙ্গে অ্যান্টি রোমিয়ো বাহিনী গঠনের প্রস্তাবে রাজ্যের সাধারণ মানুষের সায় থাকিবে বলিয়াই তাঁহারা ধরিয়া লইয়াছেন। ধরিয়া লইয়াছেন, এই অসহিষ্ণুতায়, পুরুষতন্ত্রের এই দাপটে রাজ্যবাসীর আপত্তি নাই। ইহা পশ্চিমবঙ্গ সম্বন্ধে একটি প্রবল মন্তব্য— যে রাজ্য ভারতের বহুত্ববাদের, উদারমনস্কতার, আধুনিক চিন্তার সূতিকাগৃহ হিসাবে চিহ্নিত, যে রাজ্য দীর্ঘ দিন ধরিয়া যে কোনও মৌলবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করিয়া আসিয়াছে, যোগী আদিত্যনাথরা দাবি করিতেছেন যে, সেই রাজ্যের ডিএনএ পাল্টাইয়া গিয়াছে। ‘বাঙালিত্ব’ বস্তুটি হিন্দুত্বের ঝোড়ো হাওয়ায় উড়িয়া গিয়াছে। তাঁহাদের ঔদ্ধত্যকে ভ্রান্ত প্রমাণের দায়িত্ব বাঙালির উপরই বর্তায়।

ইহা সত্য যে, বিশেষত রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে স্কুল-কলেজের ছাত্রীরা বিভিন্ন হয়রানির শিকার হইয়া থাকে, এবং সর্বদা প্রশাসনিক পথে তাহার সুরাহাও হয় না। কিন্তু, সেই সমস্যার সমাধান যে গৈরিক বাহুবলীদের হাতে ক্ষমতা তুলিয়া দেওয়া নহে, এই কথাটি বুঝিবার মতো কাণ্ডজ্ঞান বাঙালির থাকা জরুরি। গণতন্ত্রহীনতা বা পশ্চাৎমুখিতা নাগরিক নিরাপত্তার পথ হইতে পারে না। বাঙালি উত্তরপ্রদেশের অভিজ্ঞতা হইতে শিখিতে পারে; অথবা রাজ্যে যে উদারবাদী পরিসর রহিয়াছে, তাহার দীক্ষাকেও স্মরণ করিতে পারে। কিন্তু, কোনও অবস্থাতেই যে বাঙালি এই গুন্ডামি মানিতে প্রস্তুত নহে, তাহা বুঝাইয়া দেওয়া জরুরি। এই প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষের মন্তব্য— প্রয়োজনে রাজ্যের অন্যত্রও শীতলখুচির ঘটনা ঘটিবে— স্মরণ করা প্রয়োজন। রাষ্ট্রীয় বাহুবলে বিরোধী স্বর দমনের এই হুমকি দেওয়ার সাহস পাইতেছেন, কারণ বাঙালি বিষয়ে তাঁহাদের অনুমানটি সম্মানবাচক নহে। সে অসম্মানের জবাব বাঙালির নিকট আছে কি?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement