BJP

সাবধান

অতিমারিক্লিষ্ট সময়ে রাজনীতি যাহাতে কোনও ভাবেই রোগের বিস্তারকে ত্বরান্বিত না করিতে পারে, তাহা নিশ্চিত করিতে হইবে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২১ ০৪:৪৯
Share:

যুদ্ধে এবং প্রেমে যদি বা সকলই সিদ্ধ হয়, প্রশাসনে কদাপি নহে। প্রশাসনের গুরুদায়িত্ব যাঁহার স্কন্ধে অর্পিত, তাঁহাকে প্রতি মুহূর্তে জনসাধারণের হিতাহিত চিন্তা করিতে হয়, আপন স্বার্থের ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হয় মানুষের স্বার্থকে। দৃশ্যত, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেই দায়িত্ব সম্পাদনে অসমর্থ, নিদেনপক্ষে অনিচ্ছুক— ফলে, সিবিআই-এর বকলমে তিনি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করিয়াছেন, অতিমারির তোয়াক্কা না করিয়াই। সেই যুদ্ধে কোন রাজনৈতিক অস্ত্রে প্রত্যাঘাত করিবেন, তাহা তৃণমূল কংগ্রেসের দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্মরণে রাখিতে হইবে, কোনও দলীয় সিদ্ধান্তই যেন তাঁহার প্রশাসনিক দায়িত্বের পথ রোধ করিয়া না দাঁড়ায়। রাজনীতি যেন এমন কোনও পথে চালিত না হয়, যাহাতে কোভিড-১৯’এর বিরুদ্ধে চলমান নিরন্তর সংগ্রামে ছেদ পড়ে; পরিস্থিতি যেন কোনও মতেই নিয়ন্ত্রণের আরও বাহিরে না চলিয়া যায়। এই নির্বাচনও প্রমাণ করিয়াছে, পশ্চিমবঙ্গবাসীর নাড়ির গতি বুঝিতে যেমন তাঁহার এখনও ভুল হয় না, তেমনই রাজ্যের মানুষ এখনও তাঁহাকেই সর্বাধিক বিশ্বাস করে। সেই বিশ্বাসের মূল্য দেওয়ার দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রীর উপরই বর্তায়। তাঁহার দলের কর্মী-সমর্থকরা এই অতিমারি-বিধ্বস্ত সময়ে যাহাতে কোনও ক্রমেই বেলাগাম না হন, তাহা নিশ্চিত করিতে হইবে মুখ্যমন্ত্রীকেই।

Advertisement

এই দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রীর। দলনেত্রীরও নহে কি? দলের স্বার্থ তো শুধু নির্বাচনে জয়লাভ বা দলীয় নেতাদের রক্ষা করিবার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নহে। দল মানুষ লইয়া। যে মানুষ দলের সমর্থক, তাঁহাদের প্রতি যেমন দলের দায়িত্ব; তেমনই যাঁহারা সমর্থক নহেন, এমনকি প্রত্যক্ষ বিরোধী, তাঁহাদের প্রতিও দলের দায়িত্ব সমান। রাজনীতির পঙ্কিল চলনে এই কথাটি ভারতবাসী ভুলিয়া গিয়াছে। ঘটনা হইল, দেশের প্রধানমন্ত্রীর উদাহরণ সম্মুখে রাখিলে এই দায়িত্বের কথা স্মরণে রাখিবার কোনও কারণ মানুষের নাইও বটে। কিন্তু, অন্য অনেক ক্ষেত্রের ন্যায় এই ক্ষেত্রেও প্রধানমন্ত্রী মোদীকে অনুসরণযোগ্য আদর্শ হিসাবে গণ্য না করিলেই মঙ্গল। এই অতিমারিক্লিষ্ট সময়ে রাজনীতি যাহাতে কোনও ভাবেই রোগের বিস্তারকে ত্বরান্বিত না করিতে পারে, তাহা নিশ্চিত করিতে হইবে। তাহার জন্য প্রথম কর্তব্য, যে কোনও জমায়েতে নিষেধ করা। প্রতিবাদের অধিকার নিশ্চয়ই মানুষের মৌলিক অধিকার। যে ভঙ্গিতে বিবিধ স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করিয়া, রাজ্যপালের পদের যাবতীয় মাহাত্ম্যকে ভূলুণ্ঠিত করিয়া কেন্দ্রীয় শাসকরা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করিতে নামিয়াছেন, কেহ তাহার প্রতিবাদ করাকে আপন কর্তব্য জ্ঞান করিতেই পারেন। কিন্তু, সেই ক্ষেত্রেই মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা— জননেত্রী হিসাবে তাঁহার প্রশ্নাতীত গ্রহণযোগ্যতার গুরুত্ব। তাঁহার অনুগামীরা যেন বিপদ না বাড়াইয়া তোলেন, তাহা তাঁহাকেই দেখিতে হইবে। এই পরিস্থিতিকে রাজনৈতিক কল্পনাশক্তির পরীক্ষা হিসাবেও কি দেখা সম্ভব নহে? চিরাচরিত জমায়েত বা মিটিং-মিছিলের পথে না হাঁটিয়া, সামাজিক দূরত্ববিধির নিয়ম পালন করিয়া কী ভাবে একটি রাজনৈতিক আন্দোলন গড়িয়া তোলা যায়, এই মুহূর্তকে সেই উদ্ভাবনার কাজেও ব্যবহার করা সম্ভব। দেশের শাসকরা যে ভঙ্গিতে চলিতেছেন, তাহাতে এমন কোনও পন্থা উদ্ভাবিত হইলে তাহা বিফলে যাইবে না।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement