Emmanuel Macron

কাঁটার মুকুট

মাকরঁ-র দায়িত্ব অনেক। ইউরোপ এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয়, কোনও অঞ্চলই এই মুহূর্তে ভূ-রাজনৈতিক ভাবে সুস্থিত নয়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০২২ ০৪:৫৬
Share:

ফাইল চিত্র।

এমানুয়েল মাকরঁ দ্বিতীয় বারের জন্য ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট হলেন। কুড়ি বছর পর কোনও ফরাসি প্রেসিডেন্ট পুনর্নির্বাচিত হলেন, অভিনন্দন তাই মাকরঁ-র অবশ্যপ্রাপ্য, কিন্তু সেই অভিনন্দনের সঙ্গে মিশে রইল কণ্টকদংশন। ইতিপূর্বে সে দেশের কোনও নির্বাচনে অতি-দক্ষিণপন্থীরা এত ভাল ফল করেনি, মাকরঁ-র প্রাপ্ত ভোটও ২০১৭-র তুলনায় অনেকখানি কমে গিয়েছে। প্রথম পর্বের নির্বাচনে বামপন্থী প্রার্থী জঁ লুক মেলঁশোঁ-ও ২২ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। দুই পর্বেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই এবং দুই প্রধান বিরোধী প্রার্থীর বিপুল ভোটপ্রাপ্তি প্রমাণ করে, এই মুহূর্তে ফরাসি ভোটারদের মধ্যে প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়া উপেক্ষা করার মতো নয়। এই ফল সমাজের বিভাজনও স্পষ্ট করেছে। প্রেসিডেন্ট মাকরঁ এ যাত্রায় নিজেকে, এবং দেশের উদারপন্থী অংশকে স্বস্তি দিতে পারলেও ভবিষ্যৎ কতখানি স্বস্তিপ্রদ হবে, বলা মুশকিল।

Advertisement

অথচ, প্রেসিডেন্ট হিসেবে মাকরঁ-র প্রথম পর্বে কিন্তু কৃতিত্ব কম নয়। বাজারপন্থী, ইউরোপপন্থী ও মধ্যপন্থী হিসেবে তিনি যে ভাবে ফ্রান্সকে তুলে ধরেছেন, তাতে যেমন অর্থনীতির উন্নতি ঘটেছে তেমনই ভূ-রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্যারিসের অগ্রগণ্য ভূমিকা স্বীকৃতি পেয়েছে। চলমান ইউক্রেন-সঙ্কটেও তাঁর ভূমিকা লক্ষণীয়। অন্য দিকে, ফরাসি অর্থনীতিতে অতিমারির ধাক্কা বেশ ভাল ভাবে সামলেছে তাঁর প্রশাসন— দ্রুত বৃদ্ধির পথে ফিরেছে ফ্রান্স, এবং বেকারত্ব গত কয়েক বছরে সর্বনিম্ন। কিন্তু এর পরেও অতি-দক্ষিণপন্থী প্রার্থী মারিন ল্য পেন যখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বিশ্বায়ন এবং অভিবাসীদের বিরুদ্ধে লাগাতার বিদ্বেষমূলক প্রচার চালিয়ে গিয়েছেন, তাতে জনসাধারণের সাড়া মিলেছে যথেষ্ট। এই আখ্যান খুব অচেনাও নয়— শ্রম আইন সংস্কার, শ্রমিক-কৃষকদের আর্থিক দুরবস্থা, জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে বর্ণবিদ্বেষ-জাতিবিদ্বেষের বিষকে মিশিয়ে দিয়েছেন কৌশলী রাজনীতিক ল্য পেন। ফ্রান্সের এই কাহিনি বুঝতে অসুবিধা হয় না, কেননা ইউরোপের বহু দেশেই এখন একই রাজনৈতিক ছবি দৃশ্যমান। এই পরিপ্রেক্ষিতে মাকরঁ-র যদি সত্যিই এক বাজারবাদী ও বিশ্বায়িত ভবিষ্যতের ফ্রান্স নির্মাণের অভিলাষ থাকে, তা হলে অতি-দক্ষিণপন্থার বাড়বাড়ন্ত ঠেকাতে রুটি-রুজির প্রাথমিক সঙ্কটগুলির দিকে নজর দেওয়া বাঞ্ছনীয়।

মাকরঁ-র দায়িত্ব অনেক। ইউরোপ এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয়, কোনও অঞ্চলই এই মুহূর্তে ভূ-রাজনৈতিক ভাবে সুস্থিত নয়। ইউক্রেন যুদ্ধ হোক বা চিনের উত্থান— কর্তৃত্ববাদী আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য আঞ্চলিক উদারবাদী গণতন্ত্রগুলির জোটবদ্ধ পদক্ষেপ এখন জরুরি। সেখানে ফরাসি প্রজাতন্ত্রের রাজনীতিতে স্থায়িত্বের পক্ষে জনাদেশের গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না। মাকরঁ বরাবরই খোলাখুলি ভাবে বাজারপন্থী ও উদারবাদী, এ বার ফ্রান্সের পাশাপাশি ইউরোপকেও স্থায়িত্বের পথে দিশা দেখানোর ক্ষেত্রে প্যারিসের অগ্রণী ভূমিকার দিকে সকলেরই নজর থাকবে। খেয়াল করতে হয়, এশিয়ার ক্ষেত্রেও বার বার আইনের পথে চলার উপর জোর দিয়েছে মাকরঁ প্রশাসন, তাঁর আমলে তাই ভারতের সঙ্গে কৌশলগত ও অর্থনৈতিক বন্ধনও দৃঢ়তর হয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে যে, কাঁটায়-কাঁটায় জয় এবং বিপুল আশার বোঝা, দুইয়ে মিলিয়ে আগামী দিনে এক কঠিন পথ চলতে হবে মাকরঁ-কে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement