বুঝ লোক যে জান সন্ধান। সম্প্রতি আমেরিকার ডেলাওয়্যারে চতুর্দেশীয় অক্ষ ‘কোয়াড’ বৈঠকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বাণিজ্যিক এবং কৌশলগত একাধিপত্য নির্মূল করার ডাক দিলেন আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও জাপানের রাষ্ট্রনেতারা। আর কয়েক সপ্তাহ পরেই আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ওয়াশিংটনের এই রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণের আবহে কোয়াডের বৈঠকটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। চিনের নাম সরাসরি না এলেও বৈঠকের অন্যতম প্রধান আলোচ্য বিষয় যে ছিল বেজিং-এর সম্প্রসারণবাদ, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। ‘উইলমিংটন ডেক্লারেশন’ নামক যৌথ বিবৃতিতে এই অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান ভূরাজনৈতিক উদ্বেগের কথা ব্যক্ত করে তা প্রশমনের পথ খোঁজার উপরেই জোর দিয়েছে অক্ষের সদস্যরা। রাষ্ট্রপুঞ্জের সমুদ্র আইন সংক্রান্ত সনদকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি ও সুরক্ষার পাশাপাশি স্থায়ী উন্নয়ন গড়ে তোলার বিষয়গুলি বিশেষ গুরুত্ব পেল বিবৃতিতে। আঞ্চলিক সমুদ্র পরিষেবা আরও জোরদার করতে নেওয়া হয়েছে একাধিক উদ্যোগ, যার অন্যতম মেরিটাইম ইনিশিয়েটিভ ফর ট্রেনিং ইন দি ইন্দো-প্যাসিফিক (মৈত্রী)। আঞ্চলিক দেশগুলিকে তাদের সামুদ্রিক বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কোনও প্রকারের অনধিকার প্রবেশ কিংবা বেআইনি কার্যকলাপের উপরে নজর রাখতে সাহায্য করবে প্রকল্পটি। অর্থাৎ কিনা, এ-যাবৎ দক্ষিণ চিন সাগর এবং পূর্ব চিন সাগরে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে যে ভাবে আঞ্চলিক বিবাদে মেতেছে চিন, তার পরিপ্রেক্ষিতেই এই পদক্ষেপ করা হল।
আগামী বছর এই প্রকল্পেরই একটি উদ্বোধনী কর্মশালা আয়োজিত হতে চলেছে ভারতে। শুধু তা-ই নয়, ‘কোয়াড পোর্টস অব দ্য ফিউচার পার্টনারশিপ’ প্রকল্পের অন্তর্গত ২০২৫ সালে মুম্বইতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা প্রথম ‘কোয়াড রিজনাল পোর্টস অ্যান্ড ট্রান্সপোর্টেশন কনফারেন্স’-ও। এর উদ্দেশ্য সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে এই অঞ্চলের বিভিন্ন বন্দরের পরিকাঠামোগত উন্নয়ন। এ দিকে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ প্রকল্পের সূত্রে এখানে বন্দর গড়ে তোলার পরিকল্পনা চিনের। সুতরাং কোয়াড-এর এ-হেন পদক্ষেপ চিনের প্রতি সরাসরি চ্যালেঞ্জ। তা ছাড়া আন্তর্দেশীয় সামুদ্রিক সুরক্ষা বাড়াতে অক্ষের পক্ষ থেকে যে ‘কোয়াড অ্যাট সি শিপ অবজ়ারভার’ অভিযানের কথা ঘোষিত হল তা-ও নিঃসন্দেহে বেজিং-এর উষ্মা বাড়াবে। তবে সম্মেলনের পর পরই প্রশান্ত মহাসাগরে আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষার মাধ্যমে বেজিং স্পষ্ট করে দিয়েছে, সম্প্রসারণবাদী নীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর কোনও ইচ্ছা নেই তাদের।
এ দিকে, সাম্প্রতিক সম্মেলনে সারভাইক্যাল ক্যানসারের টিকা-সহ ক্যানসার নির্ণয় ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিশেষ সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দিল্লি। আগামী বছর সম্মেলনের নেতৃত্ব অর্জনের সূত্রে দায়িত্বও বাড়ল ভারতের। দিনকয়েকের মধ্যে বাইডেনের আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিয়ো কিশিদা-রও পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা প্রবল। সে ক্ষেত্রে মোদী প্রবীণতম নেতা হওয়ার সুবাদে এই জোটে ভারতের প্রভাব বাড়বে কি? এই সদ্যলব্ধ নেতৃত্বের ভূমিকায় উন্নীত হয়ে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ক্ষমতার দাঁড়িপাল্লায় চিনের বিপরীতে ভারত কী ভাবে ভারসাম্য বজায় রাখে, সেটাই দেখার।