coronavirus

গুরু দায়িত্ব

দৃষ্টান্তবিহীন দুঃসময়ের সহিত যুঝিতে দৃষ্টান্তবিহীন পরিকাঠামোই প্রয়োজন। স্কুল খুলিলেও নূতন ভাবে শিক্ষাদানের কাঠামো তৈরি করা প্রয়োজন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০২১ ০৬:১৭
Share:

পশ্চিমবঙ্গে গত কয়েক সপ্তাহে অবিলম্বে স্কুল খুলিবার দাবি শোনা গিয়াছে, দাবির ধ্বনি ও প্রতিধ্বনি উত্তরোত্তর প্রবল হইয়াছে। কেবল নাগরিক সমাজের একাংশের পরামর্শ নহে, রাজনৈতিক সংগঠন এবং সমাজকর্মীদের ক্ষোভ-বিক্ষোভও ক্রমে জোরদার হইয়াছে। স্পষ্টতই, রাজ্য সরকারের উপর চাপ বাড়িতেছিল। স্কুল খুলিবার চাপ। গত বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী পূজার পরে স্কুল খুলিবার যে সম্ভাবনার কথা ঘোষণা করিলেন, তাহা হয়তো এই চাপেরই ফল। এই বাক্যে যদি কেহ আশঙ্কার সুর শুনিতে পান, তবে সেই আশঙ্কা অমূলক নহে। ইতিমধ্যে বিবিধ পরীক্ষার ফলাফল লইয়া বিক্ষোভের প্রতিক্রিয়ায় যে ভাবে কার্যত রাতারাতি মূল্যায়ন বদলাইয়াছে এবং সেই পরিবর্তনের পিছনে নবান্নের অনুপ্রেরণা অথবা তাড়নার যে প্রবল ভূমিকা দেখা গিয়াছে, তাহাতে এমন অনুমান নিতান্ত স্বাভাবিক যে, স্কুল খুলিবার প্রশ্নে প্রশাসন যে নীরব (এবং কখনও কখনও সরব) আপত্তি জানাইয়া আসিয়াছে, নানা দিক হইতে প্রতিবাদ ও দাবির সম্মুখীন হইয়া তাহারা এখন সহসা বিপরীতে হাঁটিতে চাহিতেছে।

Advertisement

এই অনুমান যদি সত্য হয়, তবে উদ্বেগের কারণ আছে। গণতান্ত্রিক সরকারকে নিশ্চয়ই নাগরিকের কথা শুনিতে হইবে। কিন্তু যাহা শুনিলেন, তাহা বিচার এবং বিবেচনা করিয়া সিদ্ধান্ত স্থির করিবার দায়িত্বটি সরকারের চালকদেরই। নেতৃত্বের অর্থ অনুসরণ নহে, পথপ্রদর্শন। স্কুল না খুলিবার সিদ্ধান্তটি যত সমস্যার কারণই হউক, তাহার পিছনে রহিয়াছে সংক্রমণ প্রতিরোধের যুক্তি। সেই যুক্তিটির সারবত্তা থাকিয়াই যায়, এবং স্কুল খুলিবার প্রয়োজন স্বীকারের পাশে মানিতেই হয় যে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ‘নিরাপদ দূরত্ব’ বজায় রাখিয়া এবং তাহাদের সংক্রমণ প্রতিরোধের সমস্ত বিধি পালন করাইয়া স্কুল চালাইবার সুযোগ এবং সম্ভাবনা বিষয়ে সংশয় দুস্তর। পূজার পরেও কিন্তু বাস্তব বদলাইয়া যাইবে না, বিশেষত যখন, দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে, এবং ভারতে, কোভিডের ‘তৃতীয় ঢেউ’-এর আশঙ্কা রীতিমতো প্রবল, ভাইরাসের নূতন এবং ‘আরও শক্তিশালী’ অবতারের আগমনের সম্ভাবনাও আন্তর্জাতিক স্তরে বিশেষজ্ঞরা গুরুত্ব সহকারে জানাইতেছেন।

মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় একটি টীকা আছে: পূজার পরে সংক্রমণের অবস্থা বিচার-বিবেচনা করিয়া তবেই স্কুল খুলিবার বিষয়ে সিদ্ধান্ত লওয়া হইবে। তিন মাস পরে যাহা ঠিক করা হইবে, এখন— সংক্রমণে নূতন জোয়ারের আশঙ্কা শিয়রে লইয়া— সেই বিষয়ে ঘোষণা কতটা যুক্তিসম্মত, প্রশ্ন উঠিতে পারে। তবে আসল প্রশ্নটি জনস্বাস্থ্যের। কোনও ভাবেই স্বাস্থ্যের প্রশ্নটিকে তিলমাত্র অবহেলা করা চলিবে না। এক দিন অন্তর ক্লাস বসাইবার প্রস্তাব মুখ্যমন্ত্রীর মুখে শোনা গিয়াছে। শিক্ষার ভুবনে বিপর্যয় ঘটিতেছে, বহু ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যৎ বিপন্ন হইতেছে, এক দিন অন্তর ক্লাসেও সেই পরিস্থিতি কতটা আয়ত্তে আসিবে, সন্দেহ। তিন মাস পরে কী হইবে, তাহা পরে দেখা যাইবে, আপাতত কেবল ‘ডিজিটাল শিক্ষা’র উপর নির্ভর না করিয়া রেডিয়ো, টেলিভিশন বা বিকল্প ব্যবস্থার মাধ্যমে স্কুল-শিক্ষার অভাব পূরণ করা, শিক্ষক, অভিভাবক এবং শুভার্থী নাগরিকদের সেই উদ্যোগে শামিল করার কথা অবশ্যই ভাবা দরকার। এই বিষয়ে এযাবৎ রাজ্য সরকারের চালকরা সম্পূর্ণ উদাসীন থাকিয়াছেন। অগণিত শিশু-কিশোরের শিক্ষা-বিপর্যয়ের বিষয়ে সরকারের এই নীরব নিষ্ক্রিয়তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। মুখ্যমন্ত্রী কালক্ষেপ না করিয়া এই দিকে মনোযোগী হউন। মনে রাখা দরকার, দৃষ্টান্তবিহীন দুঃসময়ের সহিত যুঝিতে দৃষ্টান্তবিহীন পরিকাঠামোই প্রয়োজন। স্কুল খুলিলেও নূতন ভাবে শিক্ষাদানের কাঠামো তৈরি করা প্রয়োজন। স্কুল খুলিবার সিদ্ধান্তের অপেক্ষা এই সকল নূতন ব্যবস্থার আয়োজন বিষয়ে সিদ্ধান্তগ্রহণ এতটুকুও কম গুরুতর নহে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement