Medical Colleges

দুয়ারে চিকিৎসা

চিকিৎসকের চাহিদা যেমন তীব্র, তেমনই মেডিক্যাল কলেজের আসনের চাহিদাও।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২১ ০৫:০৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

রাজ্যের ছয়টি জেলায় ছয়টি মেডিক্যাল কলেজ নির্মাণ হইবে। সুখবর। গত দশ বৎসরে আটটি নূতন মেডিক্যাল কলেজ শুরু হইয়াছে এই রাজ্যে, কিন্তু তাহাও যথেষ্ট নহে। কলিকাতা কিংবা দক্ষিণ ভারতের হাসপাতালে চিকিৎসা করাইতে আজও বাহির হইতে হয় বাংলার গ্রাম-মফস্সলের রোগীকে। জেলায় মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠার অর্থ— বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতি, উন্নত সরঞ্জাম, সকল প্রকার অস্ত্রোপচার, জটিল রোগ নির্ণয়েরও ব্যবস্থা এবং প্রতিকারের উপায় পাইবার সম্ভাবনা বহু গুণ বাড়িয়া যাওয়া। ইহাতে আশ্বস্ত হইবার যথেষ্ট কারণ রহিয়াছে। বিশেষত, মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা বাড়িলে অধিক সংখ্যায় চিকিৎসক এবং উন্নত পরিকাঠামোয় চিকিৎসাই কেবল মিলিবে, এমন নহে। জেলায় একটি মেডিক্যাল কলেজ থাকিলে ওই জেলার সকল স্তরের হাসপাতালের চিকিৎসক এবং অ-চিকিৎসক কর্মীদের ধারাবাহিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা সম্ভব হয়। জনসমাজে বিভিন্ন ধরনের রোগের গতিপ্রকৃতি নিরীক্ষণ করিয়া তাহার কারণ অনুসন্ধানও চলিতে থাকে। তাহার ফলে রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময়ের একটি নিবিড়, সুসংবদ্ধ ব্যবস্থার সূচনা হইতে পারে।

Advertisement

নূতন মেডিক্যাল কলেজের পত্তনের কাজ চলিতেছে সারা দেশেই। প্রতিটি জেলায় একটি মেডিক্যাল কলেজ গড়িবার নীতি গ্রহণ করিয়াছে কেন্দ্রীয় সরকার। তিনটি পর্বে ১৫৭টি নূতন কলেজ গড়িবে কেন্দ্র, মেডিক্যাল কলেজ-বিহীন জেলাগুলিতে। ব্যয়ভার ৬০ শতাংশ বহিবে কেন্দ্র, ৪০ শতাংশ রাজ্য। ভারতে বর্তমানে ছয় লক্ষ ডাক্তার এবং কুড়ি লক্ষ নার্সের ঘাটতি রহিয়াছে, জনসংখ্যার অনুপাতে চিকিৎসকের নিরিখে উন্নত দেশগুলির বহু পশ্চাতে ভারত। তদুপরি সুবিধার বণ্টনে তীব্র অসাম্য বর্তমান— ভারতের মেডিক্যাল কলেজগুলির অধিকাংশই দক্ষিণ ভারতে, মেডিক্যাল আসনগুলির অধিকাংশ ব্যয়বহুল বেসরকারি কলেজের অন্তর্গত। গ্রামাঞ্চলে ডাক্তারের সংখ্যা সামান্য। দেশের প্রতিটি জেলায় মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন করিলে ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর ঘাটতি পূরণের সহিত পঠনপাঠন এবং চিকিৎসার সুযোগের সমবণ্টনও সম্ভব হইতে পারে। চিকিৎসকের চাহিদা যেমন তীব্র, তেমনই মেডিক্যাল কলেজের আসনের চাহিদাও।

আশঙ্কাও এইখানে। চাহিদার তীব্রতা বুঝিয়া জোগান দিতে ভারতে অতি দ্রুত বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ছড়াইয়াছে, যাহার একটি বড় অংশ বস্তুত ডিগ্রি প্রদানের কারখানায় পর্যবসিত হইয়াছে। অপর দিকে, যথেষ্ট শিক্ষক এবং উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে সরকারি কলেজগুলিও বার বার সমস্যায় পড়িয়াছে। কেন্দ্র আইন সংশোধন করিয়া মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা ও অনুমোদনের শর্ত অনেক নমনীয় করিয়াছে। এখন প্রশ্ন, তাহার সুযোগে কি মন্দ পরিকাঠামো, অপ্রতুল শিক্ষক লইয়া চলিবে জেলার কলেজগুলি? মেডিক্যালের প্রবেশিকা পরীক্ষায় কম নম্বর পাইবার ‘শাস্তি’ হইবে প্রত্যন্ত জেলার কলেজের আসন? তাহা হইলে গ্রামের প্রতি অবহেলার প্রচলিত ব্যবস্থাই প্রসারিত হইবে, পরিবর্তন হইবে না। জেলার নূতন কলেজগুলি যেন দ্বিতীয় শ্রেণির প্রতিষ্ঠান না হইয়া ওঠে, শিক্ষক ও ছাত্রেরা যেন উৎকর্ষের লক্ষ্যে পৌঁছাইতে পারেন, তাহা নিশ্চিত করিতে সেগুলিকে যথেষ্ট অর্থের সহিত স্বাতন্ত্র্য ও সম্মানও দিতে হইবে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement