Varvara Rao

কোনও প্রশ্ন নহে

অধিকার লঙ্ঘন, অমর্যাদার বিরুদ্ধে কথা বলিলেই ‘সন্ত্রাসবাদী’ বা ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ বলিয়া গ্রেফতার হইতে হইবে, এমন এক অদৃশ্য বিধি জারি হইয়াছে বর্তমান শাসক দলের সৌজন্যে, বুঝিতে অসুবিধা হয় না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২০ ০১:৪৯
Share:

ভারভারা রাও।ছবি: সংগৃহীত।

আশি বৎসরের অসুস্থ কবিকে কারামুক্ত করিবার দাবিতে দেশ যখন মুখর, তখন সরকার গ্রেফতার করিল তিরাশি বৎসরের পাদরি স্ট্যান স্বামীকে। মাওবাদী সংযোগ, ও মহারাষ্ট্রের ভীমা-কোরেগাঁওয়ে ঘটিত হিংসায় জড়িত থাকিবার অভিযোগে। দেশবাসী ইহাতে বিস্মিত হয় নাই, তবে আহত হইয়াছে। কলিকাতা-সহ বিবিধ শহরে স্ট্যান স্বামীর মুক্তির দাবিতে মিছিল হইয়াছে। ১ জানুয়ারি, ২০১৮ মহারাষ্ট্রের ভীমা-কোরেগাঁওয়ে জাতিহিংসার যে ঘটনা ঘটিয়াছিল, তাহাতে আইনজীবী সুধা ভরদ্বাজ, কবি ভারাভারা রাও প্রমুখ বিশিষ্ট সমাজ আন্দোলনকারীরা এক বৎসরের উপরে কারারুদ্ধ রহিয়াছেন। তাঁহাদের জড়িত থাকিবার কোনও নির্দিষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ দাখিল হয় নাই আদালতে। বহু দশক ধরিয়া আদিবাসীদের অধিকারের সুরক্ষা ও আদিবাসী কল্যাণের কাজ করিতেছিলেন স্ট্যান স্বামী। ঝাড়খণ্ড সরকার আদিবাসীদের জমি লইয়া শিল্পের জন্য ‘ল্যান্ড ব্যাঙ্ক’ তৈরি করিতে চাহিয়াছে, তিনি সেই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করিয়াছিলেন। আদিবাসী তরুণ-তরুণীদের ‘নকশাল’ অভিযোগে নির্বিচারে গ্রেফতার করিবার বিরুদ্ধেও সরব হইয়াছিলেন তিনি। এনআইএ গ্রেফতার করিতে পারে, এই আশঙ্কায় কিছু দিন পূর্বে একটি খোলা চিঠিতে তিনি লিখিয়াছিলেন, আদিবাসীদের সাংবিধানিক অধিকারের সুরক্ষার জন্য তাঁহার আন্দোলনের কারণেই তাঁহার বিরুদ্ধে নকশাল-সংযোগের অভিযোগ করিতে পারে সরকার।

Advertisement

সেই আশঙ্কাই সত্য প্রমাণিত হইল। স্ট্যান স্বামী নিষিদ্ধ মাওবাদী সংগঠনের সহিত নানা প্রকারে সংযুক্ত এবং ভীমা-কোরেগাঁওয়ে হিংসা ঘটাইবার ষড়যন্ত্রে যুক্ত, এনআইএ এমনই অভিযোগ করিয়াছে। যদিও স্ট্যান স্বামী কোনও দিন মহারাষ্ট্রের ভীমা-কোরেগাঁওতে যান নাই, এবং সেই স্থানে আয়োজিত দলিত সম্মেলনের মূল আয়োজক, অম্বেডকর-পন্থী এলগার পরিষদের সহিতও তাঁহার সংযোগের কোনও ইঙ্গিত এত দিন কেহ পায় নাই। স্ট্যান স্বামী অভিযোগ করিয়াছেন, ‘তাঁহার কম্পিউটার হইতে প্রাপ্ত’ বলিয়া মাওবাদী-সংযোগের যে সকল তথ্য দেখাইতেছে পুলিশ, সেগুলি আদৌ তাঁহার নহে। দেশবাসী বিস্মিত হইয়া দেখিতেছে, কাশ্মীরে কেন্দ্রের ভূমিকার সমালোচক গৌতম নওলাখা হইতে ঝাড়খণ্ডে রাজ্য সরকারের সমালোচক স্ট্যান স্বামী, সকলকেই ভীমা-কোরেগাঁওয়ের ঘটনার সূত্রে গাঁথিয়াছে রাষ্ট্র। গত মাসে এক হাজারেরও অধিক বুদ্ধিজীবী একটি বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করিয়াছেন যে, যাঁহারা সরকারের সমালোচনা করিয়াছেন, তাঁহাদেরই সহিত এলগার পরিষদের সম্পর্ক খুঁজিয়া পাইতেছে এনআইএ। লুকোছাপার বালাইটুকুও আর নাই।

স্বাভাবিক ভাবেই, স্ট্যান স্বামীর গ্রেফতারের নিন্দা করিয়া বিবৃতি দিয়াছে অল ইন্ডিয়া ক্যাথলিক মিশন-সহ বহু সংগঠন। উদ্বেগের ছায়া ঘনীভূত হইয়াছে গোটা ভারতে। দলিত, আদিবাসী, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সম্পদ-বঞ্চনা, অধিকার লঙ্ঘন, অমর্যাদার বিরুদ্ধে কথা বলিলেই ‘সন্ত্রাসবাদী’ বা ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ বলিয়া গ্রেফতার হইতে হইবে, এমন এক অদৃশ্য বিধি জারি হইয়াছে বর্তমান শাসক দলের সৌজন্যে, বুঝিতে অসুবিধা হয় না। ভীমা-কোরেগাঁওয়ের ঘটনার পর এত জন বিশিষ্ট বিরুদ্ধবাদী নাগরিককে প্রমাণহীন বা অপর্যাপ্ত প্রমাণে গ্রেফতারে সেই বিধিরই অভ্রান্ত ছাপ।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement