Editorial News

দায় সারতে দায়বদ্ধ প্রশাসন

রায় দেওয়ার সময় বিচারক তদন্তকারী পুলিশের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, “অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও তথ্য প্রমাণই দিতে পারেনি তদন্তকারীরা। তাই প্রমাণের অভাবেই বেকসুর খালাস হলেন অভিযুক্তরা।”

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৮ ০০:৩৫
Share:

বীরভূমের দুবরাজপুরে রাজ্য পুলিশের প্রয়াত সাব ইনস্পেক্টর অমিত চক্রবর্তী।— ফাইল চিত্র।

কে পুলিশ, কে অপরাধী, কে বিচারপ্রার্থী— খুব স্পষ্ট করে বুঝে ওঠা যায় না আজকাল আর। কে সরকার, কে প্রশাসন, কে অভিযুক্ত— আদালতে বসে এই সব হিসেব গুলিয়ে যেতে থাকে। অর্থাৎ অপরাধের সংজ্ঞাটাই বোধ হয় বদলে যেতে চলেছে রাজনীতির হাত ধরে। কোনটা অপরাধ, কোনটা নয়, নতুন করে নিতে হচ্ছে সে সবের পাঠ।

Advertisement

বীরভূমের দুবরাজপুর থানার সাব ইনস্পেক্টর অমিত চক্রবর্তী খুন হন ২০১৪ সালে। তৃণমূল ও সিপিএমের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ চলছিল । খবর পেয়ে বাহিনী নিয়ে সংঘর্ষদীর্ণ গ্রামে গিয়েছিলেন সাব ইনস্পেক্টর অমিত চক্রবর্তী। তাঁকে লক্ষ্য করেই বোমা ছোড়া হয়। গুরুতর জখম নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু ঘটে অমিত চক্রবর্তীর।

সরাসরি পুলিশের উপর হামলার ঘটনা। সরাসরি সাব ইনস্পেক্টরকে লক্ষ্য করে বোমা। পুলিশ যে তৎপর হবেই, তা সকলেই বুঝতে পারেন। কিন্তু ওই ভাবে বুঝলে এখন আর চলবে না। বুঝিয়ে দিলেন বিচারক। অভিযুক্তদের বেকসুর খালাস করার রায় দিতে গিয়ে বিচারকের সখেদ মন্তব্য— কোনও অভিযোগই প্রমাণ হল না, কারণ দায়সারা তদন্ত করেছে পুলিশ।

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

প্রশাসনিক ব্যবস্থার অবক্ষয়টা কোথায় পৌঁছেছে, আঁচ করতে পারছি কি আমরা? গোলমাল চলছিল তৃণমূল-সিপিএমের। সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে হামলার শিকার হলেন পুলিশকর্মী। মৃত্যুকালীন জবানবন্দিতে পুলিশকর্মী বলে গেলেন, কারা বোমা ছুড়েছিল। সেই জবানবন্দির ভিত্তিতে অভিযোগ দায়ের করে পুলিশ তদন্তে নামল। কিন্তু পুলিশ অভিযোগ দায়ের করলেই হবে? কোনও পুলিশকর্মী মৃত্যুশয্যায় শুয়ে কারও দিকে আঙুল তুলে গেলেই হবে? শাসক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ প্রমাণ করা অত সহজ নাকি! জেলা আবার বীরভূম! পুলিশ চেয়েও কতটা এগোতে পারবে সঠিক দিশায়, কারও জানা নেই। পুলিশ তথা সরকারের উপর হামলার মামলা। কিন্তু আদালতে দাঁড়িয়ে সরকারি আইনজীবীই বলবেন, অভিযুক্তদের বেকসুর খালাস করা হোক। অর্থাৎ কে সরকার, কে পুলিশ, কে অভিযুক্ত— সব হিসেব গুলিয়ে যেতে থাকবে। নিহত পুলিশকর্মীর স্ত্রীয়ের মরিয়া চেষ্টায় সরকারি আইনজীবীর নাম হয়তো বদলে যাবে। কিন্তু পুলিশ এর পরে যে তদন্ত করবে, তাতে কিছুই প্রমাণ করা যাবে না। বিচারক রায় দিতে গিয়ে বলতে বাধ্য হবেন, তদন্ত দায়সারা হয়েছে।

আরও পড়ুন: বীরভূমের পুলিশ খুনে বেকসুর খালাস অভিযুক্তরা, বিচারক বললেন ‘দায়সারা তদন্ত’

এই ভাবে যদি নামতে থাকে আঘাতটা, এই ভাবে যদি প্রশাসন আর শাসক দলের সীমারেখাটা মুছে দেওয়া হয়, এই ভাবে যদি প্রশাসনের চেয়েও ভারী হয়ে ওঠে শাসকদল, তা হলে শাসন কাঠামোটা টিকে থাকাই দুষ্কর হয়ে পড়ে। প্রশাসনিক ব্যবস্থা বড়সড় বিপর্যয়ের দিকে এগোতে শুরু করে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement