মে ধার পরীক্ষা লইতে গিয়া কেন্দ্র কি গরিব ছাত্রছাত্রীদের প্রতি অবিচার করিতেছে? এই প্রশ্নে আন্দোলিত তামিলনাড়ু। বিক্ষুব্ধরা সর্বভারতীয় মেডিক্যাল প্রবেশিকা পরীক্ষা বাতিলের দাবি তুলিয়াছেন। যথারীতি প্রতিবাদ অচিরে পরিণত হইয়াছে রাজনৈতিক বিরোধিতায়। অথচ বিষয়টি লইয়া বিতর্ক কম হয় নাই। সর্বভারতীয় পরীক্ষাটি (ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি-কাম এন্ট্রান্স টেস্ট, সংক্ষেপে ‘নিট’) চালু হইবার কথা ছিল ২০১২ সালে। নানা রাজ্যের আপত্তিতে তাহা শেষ পর্যন্ত ২০১৬ সালে চালু হইল। প্রথম বৎসরেই তামিলনাড়ুতে এক দরিদ্র দলিত ছাত্রী ‘নিট’-এ অকৃতকার্য হইয়া আত্মহত্যা করিয়াছেন, এই অভিযোগ উঠিল। ডিএমকে-সহ অন্যান্য বেশ কয়েকটি দল আপাতত আপত্তি তুলিয়াছে, ‘নিট’ দরিদ্র-বিরোধী এবং দলিত বিরোধী। অপরপক্ষে কেন্দ্রীয় সরকার এবং ‘নিট’-সমর্থকদের বক্তব্য, একটি নিরপেক্ষ সর্বভারতীয় পরীক্ষা ছাড়া যথাযথ মূল্যায়ন অসম্ভব। নানা রাজ্যে নানা পরীক্ষার নানা শর্তের সুযোগ লইয়া অযোগ্য ছাত্রদেরও অধিক টাকা লইয়া ভর্তি করিতেছে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলি। উৎকোচ-নির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা কখনও উত্তম চিকিৎসক তৈরি করিতে পারে না। এই শিক্ষাকে দুর্নীতিমুক্ত করিতেই ‘নিট’ জরুরি।
অন্যান্য শাখার উচ্চশিক্ষা অপেক্ষা মেডিক্যাল শিক্ষাক্ষেত্রে যে দুর্নীতির প্রকোপ একটু বেশি মাত্রায়, ইহা লইয়া সন্দেহের বড় একটা অবকাশ নাই। কেন একটি কেন্দ্রীয় পরীক্ষা ও অভিন্ন মাননির্ধারণের প্রয়োজন বোধ করা হইয়াছে, তাহাও বুঝিতে কষ্ট নাই। কিন্তু প্রশ্ন তবু থাকিয়া যায়। ‘অভিন্ন’ পরীক্ষাতেই মান ‘সমান’ হইবে তো? ‘নিট’-এর বিরুদ্ধে প্রধান আপত্তি, তাহার পাঠ্যক্রম কেন্দ্রের বোর্ড অনুসারে গঠিত। রাজ্য বোর্ডগুলির পাঠ্যক্রমের সহিত তাহার বিস্তর পার্থক্য। অন্য পাঠ্যক্রম এবং মূল্যায়নের ভিন্ন ধারায় অভ্যস্ত রাজ্য বোর্ডের পরীক্ষার্থীরা স্বভাবতই ভাল ফল করেন না। যাঁহারা দরিদ্র পরিবারের সন্তান, ‘কোচিং’ লইয়া পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতির উপায়ও তাঁহাদের নাই। তামিলনাড়ুর অকালপ্রয়াত দরিদ্র ছাত্রী অনিতা ষন্মুগম তাঁহাদেরই একজন। উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পরীক্ষায় অতিশয় ভাল নম্বর পাইলেও, সর্বভারতীয় প্রবেশিকাতে তিনি ব্যর্থ হইয়াছিলেন। নিট-বিরোধীদের প্রশ্ন, ইহা কি মেধার অভাব, না কি পাঠ্যক্রম ও পরীক্ষাপদ্ধতির সহিত পরিচয়ের অভাব?
এই প্রশ্নের কোনও সহজ এবং একমাত্র উত্তর নাই। যে কোনও কেন্দ্রীভূত, কেন্দ্রমুখী ব্যবস্থারই সংকট এই যে, তাহা ভিন্নতার প্রতি সুবিচার করিতে পারে না। দুর্নীতির প্রতি অসহিষ্ণু হইতে গিয়া কেন্দ্র সামাজিক ভিন্নতার প্রতি অসহিষ্ণুতা দেখাইল কি না, সে সংশয়ের মীমাংসা তাই সহজ নহে। মেধার উৎকর্ষ বনাম সমান সুযোগের প্রশ্নটির সমাধান বিভিন্ন রাজ্য সরকার নানা ভাবে খুঁজিয়াছে। তামিলনাড়ু পৃথক প্রবেশিকা পরীক্ষা রাখে নাই, পশ্চিমবঙ্গ প্রবেশিকার পাঠ্যক্রম ও উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ্যক্রমের যথাসম্ভব সামঞ্জস্য রাখিয়াছে। এখন নূতন প্রশ্ন, রাজ্যগুলি কি ফের অভিন্ন পরীক্ষা ব্যবস্থার প্রতিবাদে নামিবে, না কি অভিন্ন পরীক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের কৃতকার্যতার সুযোগ করিয়া দিবার পথ খুঁজিবে?