—প্রতীকী ছবি
যাঁহাদের বিশেষ সুরক্ষা প্রয়োজন, তাঁহাদেরই বিশেষ ভাবে বঞ্চনা করা হইবে, ইহাই কি কেন্দ্রের নীতি? বনহুগলিতে দৃষ্টিহীনদের শিক্ষা, চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের একমাত্র কেন্দ্রীয় সংস্থা (‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর দি এমপাওয়ারমেন্ট অব পার্সনস উইথ ভিসুয়াল ডিজ়েবিলিটি’) বন্ধ করিবার সিদ্ধান্ত লইয়াছে কেন্দ্র। প্রতিবাদ জানাইয়া আন্দোলন করিতেছেন ওই সংস্থার সহিত যুক্ত প্রতিবন্ধী ও তাঁহাদের পরিজনরা। এই ক্ষোভ অসঙ্গত নহে। এই কেন্দ্রটিতে জন্মাবধি দৃষ্টিহীন মানুষরা প্রাথমিক লেখাপড়া শিখিবার সুযোগ পাইতেন। যাঁহারা দুর্ঘটনায় দৃষ্টি হারাইয়াছেন, তাঁহাদের চিকিৎসা এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হইত। বহু স্বল্পবিত্ত পরিবার দৃষ্টিহীন সন্তানের শিক্ষার জন্য, বহু প্রতিবন্ধী মানুষ নিজের কর্মক্ষমতা ফিরিয়া পাইবার জন্য এই কেন্দ্রের উপর নির্ভর করিতেন। পূর্ব ভারতে কেন্দ্রীয় সরকারের একটিমাত্র সংস্থা বাইশ বৎসর ধরিয়া চলিতেছিল বনহুগলিতে। এখন কোনও বিকল্পের ব্যবস্থা না করিয়াই তাহার দরজা বন্ধ করিতেছে কেন্দ্র। সেকেন্দ্রাবাদেও এমন একটি সংস্থা বন্ধ হইতেছে। ইহার ফলে জাতীয় স্তরে চারটি এমন সংস্থার মধ্যে দুইটি, অর্থাৎ অর্ধেকই বন্ধ হইবে। যে সরকারের ঘোষিত স্লোগান ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’, তাহার সামাজিক ন্যায় এবং সক্ষমতা মন্ত্রকের পক্ষে ইহা উপযুক্ত কাজ বটে!
সম্প্রতি সামাজিক ন্যায় মন্ত্রকের বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করিয়াছে ভারতের প্রতিবন্ধী সমাজ। জুলাই মাসে প্রতিবন্ধকতাযুক্ত মানুষদের প্রকাশ্যে অবমাননার অপরাধকে লঘু করিবার, এবং অভিযুক্তদের শাস্তি মকুব করিবার উদ্দেশ্যে প্রতিবন্ধী অধিকার আইন (২০১৬) সংশোধন করিবার প্রস্তাব দিয়াছিল মন্ত্রক। অতঃপর ব্যয়সঙ্কোচের প্রয়োজন দর্শাইয়া ন্যাশনাল ট্রাস্ট অ্যাক্ট (১৯৯৯) খারিজ করিবার প্রস্তাব দেয়। তাহা বাস্তবায়িত হইলে প্রতিবন্ধীদের জন্য বিমা, অনুদান-সহ নানা প্রকার সুবিধা বাতিল হইত। ডিসেম্বরে প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসন সংক্রান্ত আইন (১৯৯২) সংশোধন করিয়া জাতীয় পুনর্বাসন কাউন্সিলের স্বাতন্ত্র্য খর্ব করিবার উদ্যোগ করিয়াছে মন্ত্রক। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে কোনও আইনি পদক্ষেপ করিতে পারিবে না ওই কাউন্সিল, এবং তাহাকে সামাজিক ন্যায় মন্ত্রকের নির্দেশ মানিতে হইবে, এমনই প্রস্তাব আনিয়াছে। এর কোনওটিই প্রতিবন্ধীদের অধিকার এবং প্রয়োজনের প্রতি সহানুভূতির পরিচয় নহে।
আইন সংশোধন প্রয়োজন কি না, সেই বিতর্ক চলিতে পারে। কিন্তু এখন কি পরিষেবা সঙ্কুচিত করিবার সময়? অতিমারিতে সাধারণ পরিষেবাগুলিও প্রতিবন্ধীদের সাধ্যাতীত। তাহার মধ্যে প্রধান শিক্ষা ও চিকিৎসা। একটি অসরকারি সংস্থার সমীক্ষায় প্রকাশ, লকডাউনের সময়ে অনলাইন ক্লাসের সুযোগ গ্রহণ করিতে না পারিবার জন্য প্রতি দশ জনে চার জন প্রতিবন্ধী পড়ুয়া স্কুল ছাড়িবার ইচ্ছা প্রকাশ করিয়াছে। অপর একটি সমীক্ষা দেখাইয়াছে, প্রতি পাঁচ জন প্রতিবন্ধীর দুই জন লকডাউনে চিকিৎসার নাগাল পান নাই, ফলে নানা জটিলতায় ভুগিতেছেন। ইহা বিপন্নতার চিত্রের চূড়ামাত্র। প্রতিবন্ধীকে ‘প্রান্তিক’ করিয়া রাখা, তাহার প্রতি অবজ্ঞা ও উপহাসই সমাজ ও প্রশাসনের অভ্যাস। অতিমারিতে প্রতিবন্ধীরা বিপন্নতর। এই সময়ে তাঁহাদের বঞ্চনা বাড়াইতে পারে, এমন কোনও পদক্ষেপ সমর্থনযোগ্য নহে।