Ministry of AYUSH

উচিত-অনুচিত

কেন্দ্রীয় আয়ুষ মন্ত্রক করোনাভাইরাস প্রতিরোধ প্রসঙ্গে বিবৃতি দিয়াছে— আয়ুর্বেদ, হোমিয়োপ্যাথি ও ইউনানি চিকিৎসার ‘সমাধান’-এ করোনাভাইরাস সংক্রমণ ‘প্রতিহত করা যাইবে’।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:০১
Share:

ছবি: সংগৃহীত

কেন্দ্রীয় আয়ুষ মন্ত্রক করোনাভাইরাস প্রতিরোধ প্রসঙ্গে বিবৃতি দিয়াছে— আয়ুর্বেদ, হোমিয়োপ্যাথি ও ইউনানি চিকিৎসার ‘সমাধান’-এ করোনাভাইরাস সংক্রমণ ‘প্রতিহত করা যাইবে’। কেবল ঘোষণাই নহে, খানকতক ঔষধও উদ্ধৃত করা হইয়াছে— খালি পেটে তিন দিন একটি বিশেষ হোমিয়োপ্যাথি ঔষধ, বা ছয়টি উপাদান-সমন্বিত একটি আয়ুর্বেদিক তরল, কিংবা তিনটি ভেষজে সমৃদ্ধ বিশেষ ইউনানি মিশ্রণ। স্বভাবতই হইচই পড়িয়াছে। যে ভাইরাসের দাপটে চিনে মড়ক লাগিয়াছে, সমগ্র বিশ্ব উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত, তাহার সমাধান এতই সহজ? ইহারই মধ্যে ‘অস্বস্তিকর’ সমাপতন। জাতীয় বিজ্ঞানভিত্তিক প্রতিযোগিতার একটি প্রশ্নের উত্তরে আয়ুষ-উদ্ধৃত হোমিয়োপ্যাথি ঔষধটিরই রাসায়নিক ব্যবচ্ছেদ করিয়া দেখা যাইল, ১০০ মিলিলিটার আয়তনের ৮ কোটি বোতল ওই ঔষধটি গ্রহণ করিলে উহাতে বিদ্যমান একটি মাত্র ঔষধ-অণু শরীরে প্রবেশ করিবে। অধিক তথ্য নিষ্প্রয়োজন।

Advertisement

আয়ুষ একটি সরকারি মন্ত্রক, ভারতে প্রচলিত দেশজ বিকল্প চিকিৎসাব্যবস্থা বিষয়ক শিক্ষা, গবেষণা ও প্রচারের নিমিত্তই ইহার গঠন। কিন্তু সরকারি বলিয়াই তাহার নিকট অধিক দায়িত্বশীলতা কাম্য। কোন ঔষধে কী রোগ সারিবে, এমত বিধান কি একটি সরকারি মন্ত্রক দিতে পারে? আয়ুষ-এর বিবৃতিতে উল্লেখ করা হইয়াছে, এইগুলি সবই প্রতিরোধের উপায়, চিকিৎসার পরামর্শ নহে। কিন্তু নিয়ম করিয়া ঔষধের নাম লওয়া হইলে সাধারণ মানুষজন ওই ঔষধগুলিকেই ধ্রুব, অব্যর্থ ভাবিবেন না কি? করোনার ন্যায় ভয়ঙ্কর ভাইরাস প্রতিরোধের উপায় হিসাবে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক সুস্পষ্ট জননির্দেশিকার প্রচার বরং জরুরি ছিল। তাহা না করিয়া প্রচারের আলোয় তুলিয়া ধরা হইল বিকল্প চিকিৎসাব্যবস্থার দাওয়াই, যাহা তর্কসাপেক্ষ। আয়ুষ-এর এই বিবৃতির কোনও বিজ্ঞানসম্মত গবেষণা বা পরীক্ষার ভিত্তি আছে কি না তাহাও সংশয়াতীত নহে। বহু বিজ্ঞান-গবেষকের মত, যে ভাইরাস লইয়া বিজ্ঞানীরাই এখনও বহু প্রশ্নের উত্তর খুঁজিতেছেন, তাহা রুখিতে একটি সরকারি মন্ত্রকের কয়েকটি অপরীক্ষিত ও অপ্রমাণিত ঔষধ লইয়া প্রচার শুধু বিভ্রান্তিকরই নয়, বিপজ্জনকও।

ভারতে বিকল্প চিকিৎসাব্যবস্থা সুদীর্ঘ কাল ধরিয়া প্রচলিত। তাহা লইয়া যেমন এক দিকে বিস্তর তর্কবিতর্ক, তেমনই তাহাতে রহিয়াছে বিপুল সংখ্যক মানুষের আস্থাও। সেই দিকটি মাথায় রাখিয়া আয়ুষ মন্ত্রকেরও অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন প্রয়োজন ছিল। ইহারই মধ্যে বিবৃতি লইয়া হুলস্থুল পড়িয়াছে, পরে এই লইয়া ঢোক গিলিতে হইলে একটি সরকারি মন্ত্রকের জন্য তাহা আনন্দের হইবে কি? অবশ্য আজিকার ভারতে কেন্দ্রীয় ক্ষমতাসীন নেতারা বিজ্ঞানের পরিবর্তে অপবিজ্ঞান বা অ-বিজ্ঞানেরই পক্ষপাতী। তাঁহারা গণেশের শুঁড়কে প্লাস্টিক সার্জারি বলিয়া শ্লাঘা বোধ করেন, প্রধানমন্ত্রী হইতে শুরু করিয়া সাংসদ-বিধায়ক অবধি কথায় কথায় বিজ্ঞানের তস্য কীর্তিটি পুরাণে কোন কালে বিধৃত, সেই অপব্যাখ্যা লইয়া নাচানাচি করেন। এই সরকারের মন্ত্রক কর্তৃক এমত ঔষধ-বিধান শুধু বিস্ময়বোধই উদ্রেক করে না, তাহার কাণ্ডজ্ঞান লইয়াও প্রশ্ন জাগাইয়া দেয়। সঙ্গে শঙ্কা, ভবিষ্যতের ভারতে ইহাই প্রথাসিদ্ধ হইয়া যাইবে না তো?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement