coronavirus

অনিশ্চয়তা কাটছে না পরিযায়ী শ্রমিকদের

বাড়ি ফিরেছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা। কিন্তু ঘরে ফিরেও তাঁদের অনিশ্চয়তা কাটেনি। অনেকে আবার ফিরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। লিখছেন প্রণব দেবনাথবাড়ি ফিরেছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা। কিন্তু ঘরে ফিরেও তাঁদের অনিশ্চয়তা কাটেনি। অনেকে আবার ফিরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। লিখছেন প্রণব দেবনাথ

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২০ ০৫:১৭
Share:

ঘরে ফেরার সময়ে। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়

করোনা পরিস্থিতে ‘জনতা কার্ফু’-র মধ্যে দিয়ে দেশ জুড়ে লকডাউনের প্রথম পরীক্ষা হয়। কয়েক দিন পরেই দেশ জুড়ে লাগাতার লকডাউন শুরু হয়ে যায়। ভারতে জীবিকার সন্ধানে জনসংখ্যার একটি বড় অংশ বাড়ি ছেড়ে অন্য জেলায় বা অন্য রাজ্যে কাজে যান। যাঁদের আমরা পরিযায়ী শ্রমিক বলে জানি। বিশেষজ্ঞ ও সমাজকর্মীদের একাংশ তখনই আশঙ্কা করেছিলেন, এ ভাবে হঠাৎ করে সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা করে দেওয়ার ফলে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়বেন পরিযায়ী শ্রমিকেরাই। এঁরা আমাদের সমাজের দুর্বল ও গরীব অংশের মধ্যেই পড়েন। বাস্তবে ঘটলও তাই। মুম্বই, দিল্লির মতো কিছু শহরের বাসস্ট্যান্ডে দেখা গেল গিজগিজ করছে পরিযায়ীদের ভিড়। বাস না পেয়ে রাজপথ ধরে তাঁরা এগিয়ে চলেছেন বাড়ির দিকে। পথশ্রম, খিদে, তৃষ্ণায় কাতর সেই পরিযায়ীদের দেখে শিউরে উঠেছি আমরা।
কাটোয়ায় ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের অভিজ্ঞতাও অনেকটা এক রকম। অনেক কষ্ট করে, খরচ করে বাড়ি ফিরেছেন তাঁরা। বাড়িতে পরিবেশ যে সুখের ছিল তা নয়। প্রথম থেকেই আশঙ্কা ছিল, এঁদের মধ্যে দিয়ে সংক্রমণ না ছড়িয়ে পড়ে। প্রথম দিকে কোথাও কোথাও তাই বাধার মুখেও পড়তে হয়। তবে প্রশাসন ব্যবস্থা নিয়েছিল। তার মধ্যেও মানসিক অবসাদে পরিযায়ী শ্রমিক আত্মহত্যা করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। আর সব কিছুর সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক।
রাজনৈতিক এই বিতর্কের দু’টি দিক রয়েছে। এক দিকে, পরিযায়ীদের এই দুর্দশার দায় কার তা নিয়ে বিতর্ক। অন্য দিকে, ফিরে আসা পরিযায়ীদের কী ভাবে সাহায্য করা হবে তা নিয়ে তর্জা। এই পরিযায়ীদের শুধু খাদ্যের ব্যবস্থা করলেই হবে না। তাঁদের রোজগারের ব্যবস্থাও করতে হবে। কিন্তু কাজটি সহজ নয়। কারণ, রোজগার যদি সহজলভ্য হত, তা হলে এই মানুষগুলি অন্যত্র কাজ করতে যেতেন না। আর সংখ্যাটিও তো কম নয়! পরিসংখ্যান অনুসারে, শুধুমাত্র কাটোয়া মহকুমার অন্তর্গত কাটোয়া ও দাঁইহাট দুই শহর, কাটোয়া ১ এবং ২ ব্লক, কেতুগ্রাম ১ এবং ২ ও মঙ্গলকোট ব্লক মিলিয়েই প্রায় ৪৩ হাজার পরিযায়ী শ্রমিক বাড়ি ফিরে এসেছেন। এঁদের জন্য প্রশাসনের তরফে একশো দিনের কাজের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের কথা বলা হয়। কিন্তু কাটোয়ার পরিযায়ী শ্রমিকেরা একাংশ জানান, তাঁরা আবার ভিন্ রাজ্যে ফিরে যেতেই আগ্রহী। কারণ, একশো দিনের কাজ করে তাঁদের সংসার চলছে না। এই কাজে রোজগার কম। তা ছাড়া, এই ধরনের কাজ করতেও একটি অংশ আগ্রহী নন।
কেতুগ্রামের কান্দরা গ্রামের পূর্ব পাড়ার বাসিন্দা আশরফ মুন্সী, কান্দরা পীরতলার আসলাম মুন্সিদের দাবি, প্রায় আট বছর ধরে সুরাটে এমব্রয়ডারির কাজ করে মাসে প্রায় ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা আয় হত। লকডাউনে মাসখানেক গৃহবন্দি থাকার পরে ৪৫ জন মিলে ২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে বাসে করে বাড়ি ফিরেছিলেন। পঞ্চায়েত থেকে মাত্র দশ দিন মাটি কাটার কাজ পেয়েছেন। এখনও তার মজুরি মেলেনি। তাঁদের প্রশ্ন, ধার করে আর ক’দিন চলবে? পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলেই তাঁরা সুরাটে ফিরে যাবেন বলে ঠিক করেছেন। নিরোল গ্রামের নির্মাণ শ্রমিক নবকুমার মণ্ডলও লকডাউন পর্বে সাইকেল চালিয়ে দিল্লি থেকে ফিরেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘আমার ভাইও অসম থেকে সাইকেলে ফেরে। কিন্তু, অভাবের তাড়নায় কয়েক দিনের মধ্যেই আত্মহত্যা করে।’’ যদিও প্রশাসনের তরফে এই অভিযোগের কথা স্বীকার করা হয়নি। কম-বেশি এমন নানা সমস্যায় পড়েছেন পরিযায়ী শ্রমিকদের একাংশ।
সমস্যার কথা স্বীকার করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাটোয়া-১ ব্লকের এক প্রশাসনিক আধিকারিক বলেন, ‘‘দিনে দিনে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে সমস্যা বাড়ছে। ‘ফুডকুপন’ ও ‘একশো দিন’-এর প্রকল্পে কাজ দিয়ে তাঁদের সমস্যা কতটা মেটানো যাবে তা ভাবতে হবে। করোনা-পরিস্থিতিতে বেশি কাজ দেওয়াও সম্ভব নয়। আবার পরিযায়ী শ্রমিকদের কাজে অগ্রাধিকার দিতে গেলে স্থানীয় শ্রমিকেরা বাধা দিচ্ছেন।” বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, এই সমস্যা সহজে মিটবে না। তবে প্রথাগত রাজনৈতিক বিতর্ক ভুলে যদি শাসক-বিরোধী উভয়পক্ষ উদ্যোগী হয় তা হলে কঠিন সমস্যারও সমাধান সম্ভব। ইতিহাস তার সাক্ষ্য দেয়।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement