এযাবৎকাল ইন্টারনেট বিকল্পমাত্র ছিল। অর্থাৎ, কেহ চাহিলে তাহার সাহায্য না লইয়াও দিব্য দিন কাটাইয়া দিতে পারিতেন। খাতা-কলমে লিখিবেন, ব্যাঙ্কে লাইন দিয়া টাকা তুলিবেন, দোকানে গিয়া পছন্দমতো জিনিস বাছিয়া লইবেন, ইন্টারনেট কী করিতে লাগিবে? কিন্তু সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখিবার কালে মানুষের গতিবিধি আর অবাধ থাকিতেছে না। ইন্টারনেটও ক্রমশ বিকল্প হইতে বাধ্যতা হইয়া উঠিতেছে। বিশেষত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে যেহেতু গতিবিধির কড়াকড়ি অধিক, অতএব ‘ভার্চুয়াল’ সংযোগ স্থাপন প্রায় অপরিহার্য হইয়া উঠিয়াছে। সমগ্র বিশ্বের বহু স্কুল-কলেজেই জ়ুম-সহ নানা ভিডিয়ো কলিং-এর অ্যাপে ক্লাস বসিতেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনও কোনও বিশ্ববিদ্যালয় আগামী বৎসর অবধি সশরীরে হাজিরা বন্ধ করিবার কথাও ভাবিতেছে। এত কাল ডিজিটাল এবং অ-ডিজিটাল পাঠদানে কেবল মাত্রাগত ফারাক ছিল, তাহাও উনিশ-বিশ। কেহ চকখড়ি দিয়া পড়াইতেন, কেহ আলোকচিত্র পরিবেশনের মাধ্যমে। এক্ষণে এক চরিত্রগত ফারাক ঘটিয়াছে, কেননা দাতা বা গ্রহীতা কেহই আর ক্লাসঘরে উপস্থিত নহেন। এবং চাহিলেও ইন্টারনেট এড়াইবার উপায় নাই।
বহু ব্যবহারের ফাঁক গলিয়া বহু বিপদ প্রবেশ করিতেছে। ভিডিয়ো কল চলাকালীন হ্যাকাররা ঢুকিয়া জরুরি বৈঠক কিংবা পাঠদান ভণ্ডুল করিয়া দিতেছে। শিশুদের ক্লাস চলাকালীন পর্দায় অশ্লীল ছবি ফুটিয়া উঠিতেছে, গম্ভীর আলোচনার ভিতর হাস্যকর মন্তব্য শুনা যাইতেছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের এই দুই সংস্থা অনলাইন পঠনপাঠনে সম্ভাব্য বিপদের কথা জানাইয়াছে, এবং সতর্ক থাকিতে বলিয়াছে। বাধ্য হইয়া এই ব্যবস্থা পরিহার করিতেছেন অনেকে। যেমন, জ়ুম অ্যাপের মাধ্যমে স্কুলে পঠনপাঠন নিষিদ্ধ করিয়াছে সিঙ্গাপুরের সরকার। অপর পক্ষে, ব্যবহারকারীদের তরফেও ভ্রান্তির শেষ নাই। যাঁহারা এই মঞ্চে অভ্যস্ত নহেন, তাঁহারা প্রায়শই এমন সকল কাণ্ডকারখানা করিয়া বসিতেছেন, যে সহকর্মী বা বন্ধুবান্ধবদের সম্মুখে হাস্যাস্পদ হইতেছে। অ্যাপের তরফে যেমন ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করিতে হইবে, ব্যবহারকারীদেরও এই মাধ্যম সম্পর্কে অবগত হওয়া জরুরি। কোভিড-১৯’এর আপৎকালীন পরিস্থিতি নিশ্চিত ভাবেই এক দিন মিটিয়া যাইবে, কিন্তু এই পরিবর্তনগুলি বহুলাংশে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে পরিণত হইবে। বিশেষত, যুগের সহিত তাল মিলাইয়া চলা প্রগতিশীল পরিবর্তনগুলি। যেমন, ইন্টারনেটের ব্যবহার।
যে প্রতিবেশে মানুষকে বাস করিতে হয়, তাহার কিছু লিখিত ও অলিখিত নিয়মনীতি তাহার জ্ঞাত। সমাজে থাকিলে সেই সকল মানিয়া চলিতে হয়, অপরকে শিখাইতেও হয়। ইন্টারনেট যদি জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হইয়া উঠে, তখন বোধ করি ‘পাসওয়ার্ড কাহারও সহিত ভাগ করিয়া লইবেন না’ জাতীয় বাণীও বারংবার মন্ত্রের ন্যায় আউড়াইতে হইবে। গৃহের জঞ্জাল যেমন নির্দিষ্ট অবকাশে পরিষ্কার করিতে হয়, তদ্রূপে সামাজিক মাধ্যমের অ্যাকাউন্টের প্রাইভেসি সেটিংস বা ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপনা যথাযথ আছে কি না, ইহাও নির্দিষ্ট অবকাশে নজরে রাখিতে হয়। এই সকলই নূতন সমাজের স্বাভাবিক শিক্ষা হইবে। সেই স্থলে সুনাগরিক হিসাবে বাস করিতে হইলে নূতন নিয়মনীতিগুলি সড়গড় হইতে হইবে।
আরও পড়ুন: রাস্তাঘাট সুনসান, কিন্তু ব্রিটেনের সুপারমার্কেটগুলিতে দেদার রি-স্টক হচ্ছে!