নরেন্দ্র মোদীর শপথগ্রহণ। ছবি: এএফপি।
দ্বিতীয় বার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শপথ গ্রহণ করিলেন। দ্বিতীয় বার তিনি মন্ত্রিসভা সাজাইলেন। অসাধারণ জয়, অসাধারণ জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান, স্বভাবতই তৈরি হইয়াছিল অসাধারণ প্রত্যাশা। ঘোষণার পর দেখা গেল, মন্ত্রিসভায় অনেক ভাবে পাল্টাইলেও সেই পরিবর্তন দেখিয়া প্রফুল্ল বোধ করিবার কারণ নাই। একক ভাবে ৩০৩, এবং শরিক-সহ ৩৫৩ আসনের বিপুল ভাণ্ডার লইয়া পরিবর্তনের অভিমুখে আরও কিঞ্চিৎ বলিষ্ঠ সদর্থক পদক্ষেপ ঘটিলে ভাল হইত। বিশেষ করিয়া, ‘বিগ ফোর’ বা বৃহৎ চতুষ্টয়ের মধ্যেই যদি প্রশ্নের এতখানি অবকাশ থাকিয়া যায়, তাহা দুর্ভাগ্যজনক। চতুষ্টয়ের মধ্যে রাজনাথ সিংহ ও জয়শঙ্করের নির্বাচন সন্তোষজনক, বাস্তবিক জয়শঙ্করের মতো কাহাকেও বাহির হইতে ‘ল্যাটেরাল এন্ট্রি’র মাধ্যমে আনিয়া বৈদেশিক দফতরের ভার দেওয়া একই সঙ্গে দূরদর্শিতা ও সাহসের পরিচায়ক। রাজনাথ নীরব কর্মী, তাঁহার দক্ষতা লইয়াও সন্দেহের অবকাশ নাই। প্রশ্ন উঠিতেছে বাকি দুইটি দফতর লইয়া। অরুণ জেটলি গত বার অর্থমন্ত্রকের দায়িত্ব যে ভাবে পালন করিয়াছিলেন, তাহা মোটেই প্রশংসা অর্জন করে নাই, বাস্তবিক বিগত মোদী প্রশাসনের অন্যতম দুর্বল বিন্দু হিসাবে তিনি অবতীর্ণ হইয়াছিলেন। এ বার তাই মন্ত্রকটি লইয়া বিস্তর আগ্রহ ছিল। নির্মলা সীতারমনের নির্বাচন সেই পরিপ্রেক্ষিতে আশ্বাসজনক নয়। তিনি গত বার প্রতিরক্ষা দফতরের ভার লইয়া যে ভাবে কাজ করিয়াছেন, তাহাতে তাঁহার দক্ষতার বিশেষ কোনও পরিচয় মিলে নাই, এবং দেশের পক্ষে এত গুরুতর একটি মন্ত্রকের ভার পাইবার জন্য তিনি কতখানি যোগ্য, তাহাও পরিষ্কার নহে। অমিত শাহের পূর্ব-ইতিহাস যেমনই হউক না কেন, নরেন্দ্র মোদীর বিশ্বস্ততম সেনাপতি যে এ বার গুরুত্বপূর্ণ পদে অভিষিক্ত হইবেন, জানাই ছিল। কিন্তু যিনি বারংবার বিভাজনমূলক কথা বলিয়া, পূর্ব ভারতের মুসলিম উদ্বাস্তুদের উইপোকার সঙ্গে তুলনা করিয়া সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিতির কারণ হইয়াছেন, স্বরাষ্ট্র ভার তাঁহার হাতে কতখানি সুরক্ষিত, সেই সন্দেহ থাকিয়াই যায়।
অন্যান্য দুই-একটি মন্ত্রকও উদ্বেগ তৈয়ারি করে। তন্মধ্যে নূতন মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রীর উল্লেখ দরকার। অনতি-অতীত কালে বিজ্ঞানের উপরে জ্যোতিষশাস্ত্রকে স্থান দিয়াছিলেন তিনি— অধিক মন্তব্য অপ্রয়োজনীয়। গত বার যাঁহারা কুবাক্য প্রয়োগ কিংবা কদাচরণের বিশেষ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন, তাঁহাদের হাতে গুরুত্বপূর্ণ দফতর, এমনকি নারী ও শিশুকল্যাণ দেখাশোনার ভারও, কতখানি আহ্লাদজনক, ভাবিবার বিষয় বটে। মন্ত্রিসভার বপুটিও কিন্তু নিশ্চিন্ত করিতেছে না। গত বারের মতো এ বারেও ‘ন্যূনতম সরকার অধিকতম প্রশাসন’-এর দাবি বিজেপির নির্বাচনী ইস্তাহারে পড়া গিয়াছিল। অথচ মনে করা যাইতে পারে, গত বার প্রাথমিক ভাবে ৪৫ সদস্যের মন্ত্রিসভা দেখা গেলেও পরবর্তী কালে সেই সংখ্যা বাড়িতে বাড়িতে প্রায় সম্ভাব্য সর্বোচ্চ সংখ্যার কাছাকাছি পৌঁছাইয়া গিয়াছিল— ৭৮। এ বারে প্রথমেই ৫৯ জন মন্ত্রীকে শপথ গ্রহণ করিতে দেখা গেল। ৫৯ কিছু সামান্য সংখ্যা নহে, ‘ন্যূনতম’ বলিয়া তাহাকে অভিহিত করা খুবই কঠিন। সংশয় রহিয়া গেল এই জন্যও যে, এই বারও পরবর্তী কালে বাড়িতে বাড়িতে একটি বিরাট আকারের মন্ত্রিসভাকে নাগরিক সমাজের মাথার উপর ন্যস্ত করা হইবে। যে হেতু জনগণের অর্থেই সরকার পরিচালিত হয়, বিষয়টির গুরুত্ব অস্বীকার করিবার উপায় নাই, বলা বাহুল্য।
এবং, সর্বশেষ প্রশ্নটি পশ্চিমবঙ্গ বিষয়ক। যে রাজ্য বিজেপিকে এই বার উজাড় করিয়া অপ্রত্যাশিত সমর্থন দিয়াছে, তাহার প্রতিনিধিরা কেহই পূর্ণমন্ত্রীর আসনে স্থান পাইলেন না? এমন বিচার কি ন্যায্য হইল? না কি ভবিষ্যতের জন্য তোলা রহিল সেই নিয়োগ, প্রাক্-বিধানসভা নির্বাচনী চমকের কথা বিবেচনা করিয়া?