ছবি: সংগৃহীত।
কয়েক দিনের ব্যবধানে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির ‘আল-আমাল’, চিনের ‘তিয়ানওয়েন-১’ ও আমেরিকার ‘পার্সিভিয়ারেন্স’ মঙ্গল অভিমুখে যাত্রা করিল। অবশ্য ধারে-ভারে তফাত রহিয়াছে। আল-আমাল মঙ্গলে অবতরণ করিবে না, কক্ষপথে থাকিয়া লাল গ্রহের বায়ুমণ্ডল নিরীক্ষা করিবে। তিয়ানওয়েন-১’এ অরবিটার, ল্যান্ডার ও রোভার সকলই মজুত। মঙ্গলের কক্ষপথে তাহার পৌঁছিবার কথা আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে। তাহার অরবিটারের অত্যাধুনিক ক্যামেরা গ্রহে নামিবার উপযুক্ত স্থান খুঁজিবে, সব ঠিক থাকিলে মে মাস নাগাদ মঙ্গলের মাটিতে রোভার নামাইয়া গ্রহের ভূতত্ত্ব হইতে জলবায়ু খতাইয়া দেখিবে। মার্কিন রোভার ‘পার্সিভিয়ারেন্স’ও ফেব্রুয়ারিতে মঙ্গলে নামিয়া সেখানে বসবাসের উপযোগী পরিস্থিতি পর্যালোচনা করিবে, এক বৎসরকাল (পৃথিবীর হিসাবে ৬৮৭ দিন) যাবৎ পাথর ও অন্যান্য নমুনা সংগ্রহ করিবে। মঙ্গলগ্রহে ভবিষ্যতে মানুষের অভিযানের পথ সুগম করিতেই এত সব।
বিজ্ঞান, বিশেষত মহাকাশবিজ্ঞানের পক্ষে সুখবর, সন্দেহ নাই। বিশেষত পৃথিবী গ্রহটি যখন এক মারণ ভাইরাস ও তজ্জনিত অতিমারির মোকাবিলা করিতেছে, সেই সময়েও ভিন্গ্রহে অভিযানের সূচনাপর্ব পরিকল্পনামাফিক হইল, তাহা প্রশংসাযোগ্য। তলাইয়া দেখিলে অবশ্য মঙ্গল লইয়া চিন ও আমেরিকার প্রতিযোগিতাও উঠিয়া আসিবে। করোনার আবহে দুই দেশের রাজনৈতিক দ্বৈরথ সমানে চলিতেছিল, মর্তসীমা ছাড়াইয়া এই বার তাহা পৌঁছাইল মহাকাশে। ইহারও পশ্চাৎপট রহিয়াছে। গত অর্ধশতক বা তাহার অধিক কাল জুড়িয়া মহাকাশে কৃতিত্বের স্বাক্ষর আমেরিকা ও রাশিয়ার। তাহাতে চিনের স্থান ছিল না। পৃথিবীতে যাহার রীতিমতো প্রতাপ, মহাকাশে তাহারই করিয়া দেখাইবার মতো কিছু ছিল না। চিন মহাকাশে মানুষ পাঠাইয়াছে অদূর অতীতে, ২০০৩ সালে। চাঁদে দুইটি রোভার পাঠাইয়াছে, দুই বছরের মধ্যে একটি মহাকাশকেন্দ্র গড়িবারও পরিকল্পনা। কিন্তু মঙ্গল ভিন্ন প্রসঙ্গ, বৃহত্তর চ্যালেঞ্জ। ২০১১ সালে রাশিয়ার সহিত যৌথ ভাবে করা চিনের মঙ্গল অভিযান ব্যর্থ হইয়াছিল। আমেরিকা তুলনায় রীতিমতো সফল। তাহার ‘কিউরিয়োসিটি’ রোভার ২০১২ হইতে মঙ্গলগ্রহ চষিতেছে, কাঙ্ক্ষিত কার্যকাল ফুরাইবার পরেও সে সক্রিয়। রাষ্ট্রের তরফে মহাকাশ বা ভিন্গ্রহ অভিযানই যেখানে অতি ব্যয়সাপেক্ষ ও ঝুঁকিপূর্ণ, সেখানে আমেরিকার প্রথম অসরকারি মহাকাশ অভিযান সফল করিয়া দুই মার্কিন অভিযাত্রী সম্প্রতি পৃথিবীতে ফিরিয়াছেন।
চিনের পক্ষে ইহা সম্মানের প্রশ্ন। মর্তের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে তাহার প্রবল প্রভাব, অথচ মহাকাশ ও মঙ্গলের দৌড়ে টেক্কা দিতেছে আমেরিকা, ইহা মানিয়া লওয়া তাহার পক্ষে কঠিন। একক প্রচেষ্টায় তাহার প্রথম মঙ্গল অভিযানের উপর অনেক কিছু নির্ভর করিতেছে। তিয়ানওয়েন-১’এর যাত্রাসাফল্যে সে আশায় বুক বাঁধিতেছে, আমেরিকার একচ্ছত্র মহাকাশ-দৌড়ে তবে সেও আসিয়া পড়িল। গত নভেম্বর হইতেই নিজের দেশে ‘ট্রায়াল সাইট’ গড়িয়া, অবিকল মঙ্গলের অভিকর্ষ ও অন্যান্য পরিস্থিতি তৈরি করিয়া সে হাত পাকাইয়াছে। মঙ্গলে দর্পিত পা না রাখিলে, সে মহাকাশে মান্যগণ্য হইবে কী রূপে?