নজর যখন দিল্লির দুর্গে। —ফাইল চিত্র।
দিল্লির বিরুদ্ধে রণহুঙ্কার দিয়েই ‘দিল্লি চলো’র রাস্তা তৈরি শুরু করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দ্বিতীয় ইনিংসে অধিকতর শক্তিশালী মমতার পাখির চোখ যে ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচন, ইতিমধ্যেই তাঁর দলের কাণ্ডারীরা সেটা বোঝাতে শুরু করে দিয়েছেন। শনিবার সেই বার্তাটাকেই পরোক্ষ স্বরে উচ্চগ্রামে নিয়ে গেলেন মমতা। নিয়ে গেলেন এ বঙ্গের পরিচিত কৌশলেই। অভিযোগটা থাকল সেই চিরন্তনই। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আর্থিক বৈষম্যের অভিযোগ।
রীতি ও প্রথা একই রইল, বঙ্গীয় মানসের উপযোগী ঐতিহ্যও থাকল অটুট, শুধু লক্ষ্যটা এ বার ভিন্ন। স্বাধীনতা পূর্ব বঙ্গীয় রাজনীতির সংস্কৃতিতে দিল্লির বিরুদ্ধে ক্ষোভের পুঞ্জীভূত বাষ্পের যে আবহ তৈরি হয়েছিল, স্বাধীনতা উত্তর পশ্চিমবঙ্গ তাকেই শিরোধার্য করে শুরু করেছিল তার যাত্রা। শুধু সময়ের ফারাকে তার উদ্দেশ্য ও বিধেয় ক্রমপরিবর্তমান থেকে এসেছে। বিধানচন্দ্র রায় বঙ্গীয় মেরুদণ্ডের যে লক্ষণ দেখিয়েছেন, জ্যোতি বসুরা সেই লক্ষণটাকেই আরও তীব্র করেছেন নিজেদের দুর্গ দুর্ভেদ্য করার লক্ষ্যে। বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি বুঝে নিক দুর্বৃত্ত— এই স্লোগানের জনপ্রিয়তাও বাড়ানো গিয়েছিল কেন্দ্রকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে রেখেই। কিন্তু সে ছিল, আবারও বলছি, পরিখা কেটে নিজের প্রাসাদকে অটুট রাখারই কৌশল। সাম্রাজ্য বিস্তারের পরিকল্পনা সেখানে ছিল না। বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংহ থেকে শুরু করে দেবগৌড়া, ইন্দ্রকুমার গুজরাল থেকে মনমোহন সিংহেরা সাক্ষী, হিমালয়ান ব্লান্ডার করে-আসা সিপিএমের দৃষ্টি কোনও দিনই মসনদকে স্পর্শ করেনি।
এখানেই ইতিহাসের বাঁকটা নেওয়াতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর লক্ষ্য সাম্রাজ্য বিস্তার। তাঁর দৃষ্টি দিল্লির দুর্গে। অতএব আর্থিক বৈষম্যের অভিযোগ তুলে, আঞ্চলিক শাসকদের প্রতি দিল্লির বঞ্চনার উত্থাপন করে প্রথম রণহুঙ্কারটা দিলেন তিনি। আঞ্চলিক শাসকদের একজোট করে দিল্লির মসনদে আসীন শাসককে ক্ষমতাচ্যুত করাই তাঁর প্রধান লক্ষ্য।
দ্বিতীয় ইনিংসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক আগ্রাসী। নরেন্দ্র মোদী কি রণদুন্দুভিনাদ শুনতে পেলেন?