ফাইল চিত্র।
কোভিড সামলাইতে যথেষ্ট চিকিৎসক-নার্স জোগান দিবার কাজটি দাঁড়াইয়াছে নয়হাতি কাপড়ে লজ্জা নিবারণের ন্যায়। এ দিকে টানিলে ও দিকে কম পড়িয়া যায়। বেসরকারি হাসপাতাল হইতে নার্সদের প্রায় গণহারে ইস্তফা তাহারই দৃষ্টান্ত। কোভিড রোগীর সংখ্যা বাড়িবার আশঙ্কায় মুখ্যমন্ত্রী সরকারি হাসপাতালে কোভিড শয্যা বাড়াইবার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করিয়াছেন। তাহার জন্য প্রয়োজন অধিক স্বাস্থ্যকর্মী, যাহার অন্যতম নার্স। অতএব সরকারি হাসপাতাল নার্স নিয়োগ করিতেছে। সঙ্গে সঙ্গেই বেসরকারি হাসপাতাল হইতে নার্সদের ইস্তফার পালা শুরু হইয়াছে— কারণ, সরকারি চাকুরিতে অধিক বেতন, কর্মনিরাপত্তাও আছে। তবে কি হিতে বিপরীত হইবে? রাজ্যে কোভিড হাসপাতাল অধিকাংশই বেসরকারি, কোভিড শয্যা বেসরকারি হাসপাতালেই অধিক। সরকারি হাসপাতালে নার্স বাড়াইতে যদি বেসরকারি হাসপাতালে ঘাটতি তীব্রতর হয়, তাহা হইলে ঘোর বিপদ। আশঙ্কা, বেসরকারি হাসপাতালগুলি চাহিলেও নূতন নার্স নিয়োগ দুষ্কর হইবে। পশ্চিমবঙ্গে প্রয়োজনের তুলনায় নার্সের জোগান বরাবরই কম। বেসরকারি হাসপাতালগুলি অন্যান্য রাজ্যের নার্সদের উপর নির্ভরশীল। কোভিড অতিমারি শুরু হইবার পরে তাঁহাদের অনেকেই ফিরিয়া গিয়াছেন। যাঁহারা কর্মরত, তাঁহাদেরও অনেকে সংক্রমিত হইয়া গৃহবন্দি হইতেছেন। রোগীর চাপ যখন বাড়িয়াছে, তখন নার্সদের জোগানে এই ঘাটতি স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করিতেছে।
ইহার পরিণাম, পরিষেবার গুণমানে অবনতি। বেসরকারি হাসপাতালগুলি কখনও নার্সিং প্রশিক্ষণরত ছাত্রীদের দিয়া, কখনও বা সাধারণ স্বাস্থ্যকর্মীদের দিয়া কাজ চালাইতে বাধ্য হয়— যদিও কর্তৃপক্ষের দাবি, স্বাস্থ্যকর্মীরা কেবল রোগীর সহায়তার কাজগুলিই করেন। বাস্তব অবশ্য দৃশ্যমান। ইহাতে রোগীর নিরাপত্তা লইয়া প্রশ্ন উঠিবেই। বিশেষত করোনাভাইরাসের ন্যায় অতি সংক্রামক অসুখের ক্ষেত্রে। সঙ্কট কাটাইতে বহু বেসরকারি হাসপাতাল নিজস্ব নার্সিং কলেজ খুলিয়াছে। কিন্তু সরকারি-বেসরকারি মিলাইয়াও যথেষ্ট নার্সিং আসন পশ্চিমবঙ্গে নাই। গত বৎসরেও এ রাজ্যে নার্সিং কলেজগুলিতে ‘বিএসসি নার্সিং’ আসনের সংখ্যা ছিল মাত্র ১৬৭৫— এমবিবিএস আসনের তুলনাতেও কম। এ বৎসর, কোভিড-জনিত পরিস্থিতিতে নার্সের সঙ্কট বুঝিয়া, হাজারখানেক আসন বাড়ানো হইয়াছে। মাত্র দুই মাস পূর্বের এই বিজ্ঞপ্তি কত দিনে অধিক নার্স জোগাইবে, তাহার আন্দাজ কঠিন নহে। নার্সিং আসন বাড়িলে ভাল, কিন্তু যে সঙ্কট শিরে আসিয়া দাঁড়াইয়াছে, তাহার মোকাবিলা হইবে কী রূপে?
নার্সিং পরিষেবা চিকিৎসার আবশ্যক অঙ্গ, কিন্তু তাহার প্রতি সরকারের অমনোযোগ কিছুতেই যায় না। ২০১৬ সালে সরকারি হাসপাতালে নার্স নিয়োগ শুরু হইলে প্রায় ছয় হাজার নার্স বেসরকারি চাকরি ছাড়িয়াছিলেন। যখনই সরকারি নিয়োগ হইবে, তখনই যে বেসরকারি ক্ষেত্রে জোগানে টান পড়িবে, তাহা অজানা ছিল না। তবু তাহা এড়াইতে পারিল না সরকার। পরিকাঠামোর গলদগুলি আপৎকালে মারাত্মক হইয়া দেখা দেয়। বাড়তি শয্যা কেবল একটি পরিসংখ্যান হইয়া থাকিবে, না কি বাস্তবিক শুশ্রূষার আশ্বাস আনিবে, সেই প্রশ্ন দেখা দিয়াছে।