লন্ডন ডায়েরি। —ফাইল চিত্র।
নির্বাচনে হারলেন কনজ়ারভেটিভরা। তাঁদের আসনে নির্বাচিত এক ঝাঁক নতুন এমপি, অনেকেই হাউস অব কমনসে প্রথম এলেন। প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদের সঙ্গে পিছনের সারিতে বসবেন। রেকর্ডসংখ্যক ২৯ জন ভারতীয় বংশোদ্ভূত বসবেন কমনসে, অধিকাংশই লেবার পার্টির। নতুন ন’জনকে নিয়ে শিখ বংশোদ্ভূত এমপি-র মোট সংখ্যা ১২। ডার্বি সাউথ থেকে আছেন ভগৎ সিংহ (ব্যাগি) শঙ্কর— তাঁর বাবা পঞ্চাশের দশকে ব্রিটেনে এসেছিলেন, ঢালাইখানায় কাজ করতেন। খলিস্তান সমর্থনে অভিযুক্ত অবতার সিংহের শেষকৃত্য হয় স্মেদিকের গুরুদ্বারে, তার প্রাক্তন তত্ত্বাবধায়ক গুরিন্দর সিংহ জোশনও নির্বাচিত। হাডার্সফিল্ডের প্রথম মহিলা এমপি হরপ্রীত উপ্পল। তাঁর বাবা ’৬২-তে ব্রিটেনে আসেন, কাপড়কলের কর্মী ছিলেন। ইলফোর্ড সাউথ ও লাফবরো-য় বিজয়ী যশ আঠওয়াল ও জীবন সান্ধের। বল্টনে জয়ী কিরীত এন্টউইসল অহলুওয়ালিয়া, সাদাম্পটন টেস্টে বিজয়ী সৎবীর কউর। কনজ়ারভেটিভদের থেকে উলভারহ্যাম্পটন ও ডাডলি কেড়েছেন দুই শিখ। পাগড়িধারী বরিন্দর যশ ও সোনিয়া কুমার। ভেল অব গ্লামোরগনে প্রথম জাতিগত ভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত রূপে বিজয়ী বিহারের কণিষ্ক নারায়ণ। নার্স হয়ে কেরল থেকে ব্রিটেনে আসেন সোজন জোসেফ, অ্যাশফোর্ডে জিতে প্রথম মালয়ালি হিসাবে পার্লামেন্টে এলেন। উলভারহ্যাম্পটন নর্থ-ইস্ট ও সাউথ-ওয়েস্টে জয়ী সুরিনা ব্র্যাকেনরিজ, উমা কুমারন। প্রথম তামিল হিসাবে জয়ী উমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন। লেবার দলের ভারতীয় বংশোদ্ভূত আট এমপি জিতে ফিরেছেন। বাঙালির মেয়ে লিজ়া নন্দী সেক্রেটারি অব স্টেট ফর কালচার, মিডিয়া অ্যান্ড স্পোর্টস হয়েছেন। লেবার পার্টিতে শেখ হাসিনার ভাইঝি টিউলিপ সিদ্দিকি-সহ আরও বাংলাদেশি এমপি আছেন। কনজ়ারভেটিভ পার্টিতে ঋষি সুনক ছাড়াও আর ছয় ভারতীয় বংশোদ্ভূত এমপি।
ব্রিটেনজয়ী: পার্লামেন্টে শিখ বংশজ এমপি’রা।
ব্রিটেনজয়ী: পার্লামেন্টে সমর্থক-সহ যশ আঠওয়াল।
বিস্ময়কন্যার সন্ধান
লকডাউন-কালে বোধনা শিবনন্দনের বয়স ছিল পাঁচ। বাবার বন্ধুর উপহার দেওয়া দাবাবাক্সকে সে ভাবত খেলনা। বাবা তাকে দাবা খেলার বিষয়ে জানান— লকডাউনে বাচ্চাদের ভোলাতে দাবার ভিডিয়ো চালাতেন। সে সব দ্রুত শেষ করে ফেলে বোধনা। এখন তার বয়স ৯, সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক ক্রীড়ায় ইংল্যান্ডের কনিষ্ঠতম প্রতিনিধি হিসাবে হাঙ্গেরির দাবা অলিম্পিয়াডে যাবে। আইটি-তে ইঞ্জিনিয়ার বাবা ও মা দাবার মোদ্দা নিয়মকানুন জানলেও প্রতিযোগিতামূলক খেলায় যোগ দেননি। বোধনা ইন্টারনেট দেখে দক্ষতায় শাণ দিয়েছে। স্কুলের দিনে এক ঘণ্টা অনুশীলন করে, সপ্তাহান্তে টুর্নামেন্টে খেলে। দোসা-নারকেল চাটনির ভক্ত এই বিস্ময়বালিকার কপালে চন্দনের ফোঁটা, দাবা-টেবিলে পৌঁছতে বিশেষ চেয়ারে বসে। তবে, তুঙ্গে তার আত্মবিশ্বাস। ডাউনিং স্ট্রিটে গিয়ে ঋষি সুনকের সঙ্গে দেখা করেছে, ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিক্রম দোরাইস্বামীর সঙ্গে দাবা খেলেছে।
ভূতের ভবিষ্যৎ
প্রচারের আলো সরেছে, এ বার নির্ঘাত হাঁপ ছেড়ে বাঁচবেন ঋষি সুনকের স্ত্রী অক্ষতা মূর্তি। ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের বাইরে সুনকের বিদায়ী ভাষণের সময় অক্ষতার পরিধান নিয়ে নিষ্ঠুর সব মিম ঘুরছে। সাদার উপর লাল, নীল, কালো স্ট্রাইপের ডিজ়াইনার পোশাকটি তিনি বেছেছিলেন আপাতদৃষ্টিতে ব্রিটেনের পতাকা ও নিজের ভারতীয় ঐতিহ্যকে মনে রেখে। তাতেই ফ্যাশন বিপর্যয়। কেউ বলেছেন, উনি আসলে মিসাইল-হানা আটকাতে ওই পোশাক পরেছেন, কারণ ‘জ়িগজ়্যাগ’ রেখার মধ্যে নিশানা স্থির রাখা মুশকিল হয়ে যায়। কেউ বলেছেন, ওই পোশাকে মুখ কালো করে ছাতা হাতে এমন ভাবে পিছনে এসে দাঁড়িয়েছিলেন, ভূতের সিনেমা মনে হচ্ছিল!
বিষণ্ণ: বিদায়বেলায় ঋষি-অক্ষতা।
উইম্বলডনে সচিন
উইম্বলডনের ঐতিহ্য মোতাবেক প্রথম শনিবার রয়্যাল বক্সে বিভিন্ন খেলার আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়দের আমন্ত্রণ জানানো হয়। এ বছর নিমন্ত্রিত ছিলেন সচিন তেন্ডুলকর। সেন্টার কোর্টের ঘোষক তাঁকে স্বাগত জানিয়ে বললেন, “ভারতের খেলদুনিয়ার কিংবদন্তি, আর এক বিশ্বকাপ-বিজয়ী, ক্রিকেট-ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান-স্কোরার।” ভক্তরা উঠে দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানালে সচিনও বক্সে উঠে দাঁড়িয়ে হাত নাড়লেন, হাসলেন। এ বছরের প্রতিযোগিতায় ছিলেন চার ভারতীয়। রোহন বোপান্না, সুমিত নাগাল, এন শ্রীরাম বালাজি, য়ুকি ভামব্রি। দুঃখের বিষয়, তাঁরা শুরুতেই হেরে গিয়েছেন।