লন্ডন ডায়েরি। ফাইল ছবি।
রমজান মাস শুরু হতেই লন্ডনের রাস্তা সেজে উঠল আলোয়-আলোয়। পাশাপাশি, গণ ইফতারের আয়োজনও করা হচ্ছে। শহরবাসীকে প্রশাসনের তরফে এক সঙ্গে রোজা ভঙ্গ করার জন্য উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। ভিক্টোরিয়া ও অ্যালবার্ট মিউজ়িয়মে রমজান উপলক্ষে সাজানো হয়েছে বিশেষ তাঁবু, সেখানে নমাজ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। রমজানের এই বিশেষ তাঁবুটির নকশা তৈরি করেছেন শাহেদ সালিম। তাঁবুটি একটি বিমূর্ত মসজিদের মতো দেখতে। সালিম জানিয়েছেন, মিউজ়িয়মে প্রদর্শিত ব্রিটেনে মুসলিমদের ইতিহাস সংক্রান্ত ছবি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি নকশাটি তৈরি করেছেন। ব্রিটেনের প্রথম মসজিদ তৈরি হয়েছিল লন্ডন থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে, ওকিং-এ, ১৮৮৯ সালে। সিংহাসনে তখন রানি ভিক্টোরিয়া। ‘শাহজাহান মসজিদ’ তৈরির সমস্ত ব্যয়ভার বহন করেছিলেন ভোপালের বেগমসাহেবা। সেখানে যাঁরা যেতেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ভিক্টোরিয়ার মুনশি আব্দুল করিম এবং পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী মহম্মদ আলি জিন্না।
উলট-পুরাণ
স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার নির্বাচিত হওয়ামাত্রই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে হামজ়া ইউসুফ। এই প্রথম স্কটল্যান্ডে এমন কোনও পদে এলেন কোনও মুসলমান বা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। আলোচনায় ইন্ধন জুগিয়েছে তাঁর বিশেষ ধরনের পোশাক পরার রীতিও। আট বছর আগে যখন স্কটিশ পার্লামেন্টের সদস্য হিসেবে শপথগ্রহণ করেছিলেন হামজ়া, তখন পাকিস্তানি শেরোয়ানি স্টাইলের একটি জ্যাকেটের সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী স্কটিশ পোশাক কিল্ট পরেছিলেন তিনি। এই অভিনব পরিচ্ছদে বেশ হইচই পড়েছিল স্কটিশ প্রশাসনের অন্দরমহলে। কোরানের উপর হাত রেখে সে বার উর্দুতে শপথ নিয়েছিলেন হামজ়া। এ বার অবশ্য ফার্স্ট মিনিস্টার হিসেবে শপথগ্রহণের সময়ে পুরোদস্তুর কালো শেরোয়ানি পরেছিলেন তিনি। হামজ়া নিজেকে একই সঙ্গে এক জন গর্বিত স্কট ও মুসলমান বলে থাকেন। তাঁর বাবা জন্মেছিলেন পাকিস্তানে। ষাটের দশকে ব্রিটেনে চলে আসে তাঁর পরিবার। হামজ়া স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির সদস্য। এই দলের মূল উদ্দেশ্য স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা অর্জন করা। নাগরিকদের সরস মন্তব্য— ব্রিটেনের ‘দেশভাগ’ নিয়ে এখন এক ভারতীয় (সুনক) ও এক পাকিস্তানির (হামজ়া) মধ্যে দরকষাকষি হবে!
বিমূর্ত: শাহেদ সালিম-এর তৈরি করা রমজানের বিশেষ তাঁবু। ফাইল ছবি।
অপু-দুর্গার সুরে
সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালী চলচ্চিত্রের আবহসঙ্গীত বাজানো হল ইসলিংটন ইউনিয়ন চ্যাপেলে— প্রখ্যাত সাংবাদিক ইয়ান জ্যাকের স্মরণসভায়। কলকাতা ও সত্যজিতের ছবি ইয়ানের অত্যন্ত প্রিয় ছিল। ট্রেন নিয়েও বিস্তর লেখালিখি করেছেন তিনি। বরাবর বলতেন, কাশফুলের মধ্যে অপু-দুর্গার প্রথম ট্রেন দেখার মুহূর্তটি তাঁর দেখা অন্যতম সেরা ‘সিনেম্যাটিক মোমেন্ট’। সুতরাং, রবিশঙ্করের তৈরি করা ওই আবহসঙ্গীত ছাড়া ইয়ানের স্মরণসভা সম্ভবত অসম্পূর্ণ থেকে যেত।
বিক্ষোভ: সুনকের বাড়ির সামনে। ফাইল ছবি।
রাজনীতির জল গরম
গত মার্চেই জানা গিয়েছিল যে, নিজের ইয়র্কশায়ারের বাসভবনের একটি নতুন সুইমিং পুলের জল গরম করার জন্য ব্যক্তিগত বিদ্যুৎ গ্রিড তৈরি করেছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক। খরচ হয়েছে ৪ লক্ষ পাউন্ড। নিজেদের খরচে করলেও এ নিয়ে বিস্তর সমালোচনা শুরু হয়। বিরোধীরা দাবি করেন, যেখানে সে দেশের বহু মানুষ ঘর গরম করার ব্যবস্থাটুকুও করতে পারছেন না, স্থানীয় কাউন্সিলগুলি তাদের পাবলিক পুলের জল গরম করতে পারছে না যথাযথ ভাবে, সেখানে ব্যক্তিগত বিদ্যুতের গ্রিড তৈরি করা অত্যন্ত নিন্দনীয়। তার পরেই বাজেটে বলা হয় যে, স্থানীয় কাউন্সিলগুলিকে পুলের জল গরম করার জন্য বাড়তি বিদ্যুৎ বরাদ্দ করা হবে। এতেও বিতর্ক মেটেনি! ‘গ্রিনপিস’ নামক একটি অসরকারি পরিবেশ সংস্থার সদস্যেরা সাঁতারের পোশাকে সুনকের বাসভবনের দরজায় পৌঁছে যান। তাঁদের দাবি, নতুন পুলে তাঁদের স্নান করতে দিতে হবে। সংস্থার সদস্য ফিলিপ ইভান্সের কথায়, বিদ্যুতের গ্রিড জনসাধারণের জন্য। ধনকুবেরদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। সে কথা শোনার পরেও অবশ্য বাড়ির দরজা খোলেনি!