লন্ডন ডায়েরি।
মেয়েদের ইউরো কাপ ফাইনালে জার্মানির বিরুদ্ধে জয়সূচক গোলটি করার পর ২৪ বছরের ইংল্যান্ড স্ট্রাইকার ক্লোয়ি কেলি জার্সি খুলে স্পোর্টস ব্রা পরে স্টেডিয়ামে দৌড়ালেন। ৮৭,০০০ দর্শক উঠে দাঁড়িয়ে উৎসাহ দিলেন। খেলোয়াড়ি ঊর্ধ্ববাসে, মাথার উপর জার্সি ওড়ানোর তাঁর উদ্যাপনের ছবিটি ভাইরাল, এটি মহিলা ফুটবল ইতিহাসের ঐতিহাসিক মুহূর্তে পরিণত। ইতিহাসবিদ লেখক লুসি ওয়ার্ডের টুইট, “এটি নারীর শরীর— তা যৌনতা বা কোনও অঙ্গপ্রদর্শনীর জন্য নয়। নিজের ক্ষমতা ও দক্ষতার জোরে তিনি যা অর্জন করেছেন, তারই অনাবিল আনন্দের জন্য। দুর্দান্ত।” এই ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট ব্র্যান্ডের অন্তর্বাস, ফুটবল বুটের বিক্রিও সাঙ্ঘাতিক বেড়ে গিয়েছে। ‘সিংহীর দল’ নামে খ্যাত ইংল্যান্ড মহিলা ফুটবল দল জাতীয় বীরাঙ্গনার মর্যাদা পাচ্ছে। ১৯৬৬-তে ববি মুরের দলের বিশ্বকাপ জয়ের পর দেশকে ফুটবলে প্রথম এত বড় কাপ এনে দিয়েছেন তাঁরা।
উত্তর ইংল্যান্ডের কারখানার কর্মীদের পায়ে পায়ে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে মহিলা ফুটবল জনপ্রিয় হতে শুরু করে। পুরুষরা যখন যুদ্ধে, মেয়েদের খেলা দেখতে ভিড় হত। ১৯২০ সালের এক খেলায় আধ লাখ দর্শক হয়েছিল। পুরুষরা প্রমাদ গুনলেন, মহিলারা তো বেশি দর্শক টানছেন! ১৯২১-এ ইংল্যান্ডে মেয়েদের ফুটবল নিষিদ্ধ ঘোষিত হল। নিষেধাজ্ঞা উঠল ১৯৭১-এ। তার পর ৫০ বছর লাগল প্রমাণ করতে যে, পুরুষরা যা পারেননি, সেটাই মেয়েরা পারেন। বৈষম্য এতটাই যে, গত বছর পর্যন্ত বড় স্টেডিয়াম জুটত না তাঁদের। ইউরো জয়ের পর তাঁদের পরবর্তী লক্ষ্য বিশ্বকাপ।
ঐতিহাসিক: ইংল্যান্ডের হয়ে গোল করে পরনের জার্সি উড়িয়ে দৌড়াচ্ছেন ক্লোয়ি কেলি
ডাকটিকিটের রকস্টার
‘কুইন’ রকব্যান্ডের প্রধান গায়ক, প্রয়াত ফ্রেডি মার্কারি (প্রকৃত নাম ফারুখ বালসারা) শৈশবে জাঞ্জিবারে বাসকালে ডাকটিকিট জমাতেন। নয় থেকে বারো বছর বয়সে তাঁর জমানো ডাকটিকিট লন্ডনের পোস্টাল মিউজ়িয়ামে সাজানো হবে। অ্যালবামে রাজপরিবার, রাজা ষষ্ঠ জর্জ, রাজকুমারী এলিজ়াবেথ, তাঁর বোন মার্গারেট ও জাঞ্জিবারের নানা ডাকটিকিট। বিন্যাসে মালুম, অত ছোট বয়সেও মার্কারি নকশাকৌশল ভাল করেই বুঝতেন। পরে যার পরিপূর্ণ বিকাশ দেখা গিয়েছে লন্ডনের আর্ট কলেজে ও তাঁর অনুষ্ঠানগুলিতে। ১৯৯১’এ ৪৫ বছর বয়সে রকস্টার এডস-এ মারা যান, তাঁর বাবা অ্যালবামটি নিলাম করেন। অর্থ যায় তারকার স্মৃতিতে প্রতিষ্ঠিত এডস-পীড়িতদের চ্যারিটিতে।
লন্ডনমঞ্চে কলকাতা
স্থান কলকাতা। সাল ২০০০। ধর্মঘট আর মন্দার বছরে ‘খুব ভাল’ কারখানাতেও তালা ঝুলল, কর্মচারীরা বরখাস্ত। কারখানার যন্ত্রবিদ প্রাবের উপর স্ত্রী ও সদ্যোজাত সন্তানের দায়িত্ব। তিনি চিত্রনাট্য লিখতে এবং কারখানার মালিকের ছেলের যাত্রাদলে অভিনয় শুরু করলেন। যাত্রামঞ্চে প্রাব (ইরফান শামজি) মহাভারতের গল্পের মাধ্যমে দেখান কারখানা মালিকদের শ্রমিক শোষণ। ইংল্যান্ডবাসী নাট্যকার সোনালি ভট্টাচার্যের লেখা, মিলি ভাটিয়ার নির্দেশনায় চেজ়িং হেয়ারস নাটকের সৌজন্যে অশান্ত অলিগলি, ট্রেড ইউনিয়ন আর রাজনৈতিক অস্থিরতার কলকাতাকে প্রথম বার লন্ডনের মঞ্চে পেলেন নাট্যমোদীরা। সোনালির মামা ডানলপ রাবার কারখানায় কাজ করতেন। সেখানেও মন্দার জেরে বহু দিন কর্মহীন ছিলেন শ্রমিকেরা। সেই বাস্তবই এই নাটকের অনুপ্রেরণা। নাটকে এসেছে সমসাময়িক ব্রিটেনও। সেখানেও কাজের অস্থায়ী চুক্তি ও শিল্প ধর্মঘটের ফলে আর্থিক সমস্যা চলছে। দেখানো হয়েছে যে, সময় ও দেশ আলাদা হলেও শ্রমিকদের সংগ্রামটা একই। নাটকে পরিবারটি বাংলা থেকে ব্রিটেনে আসে, তাই ধরা পড়েছে অভিবাসনের পরম্পরাও। নাটকটি উচ্চ প্রশংসিত। নাট্যকার জানিয়েছেন, এটি সকল আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে তাঁর প্রেমপত্র।
শিল্প: চেজিং হেয়ারস নাটকের দৃশ্য
ব্রাত্য ইংরেজি সাহিত্য!
খোদ শেক্সপিয়র, ডিকেন্সের লীলাক্ষেত্র ইংল্যান্ডেই ইংরেজি সাহিত্য পড়ুয়ার সংখ্যা কমছে? শেফিল্ড হ্যালাম ইউনিভার্সিটি ইংরেজি সাহিত্যের ডিগ্রি বাদই দিয়ে দিয়েছে। রোহ্যাম্পটন ইউনিভার্সিটি ইংরেজি সাহিত্যের ডিগ্রির সঙ্গে ইংরেজি ভাষা ও সৃষ্টিমূলক লেখালিখিকেও জুড়তে চায়। হাডারসফিল্ড, ডি মন্টফোর্ট এবং উলভারহ্যাম্পটন আর্টস ও সোশ্যাল সায়েন্স বিভাগে কোর্স, পড়ুয়া ও লেকচারারদের সংখ্যা কমাচ্ছে। ঘটনাটির সমালোচনায় সাহিত্যিকেরা। সাহিত্যে স্নাতক, বেস্টসেলার লেখক অ্যান্টনি হরোউইৎজ়ের মতে, এর ফলে ইংরেজি সাহিত্য শুধু মুষ্টিমেয় ধনী অভিজাতদের বিষয় হয়ে থেকে যাবে।