Editorial News

দেশপ্রেম খাঁটি তো? স্পষ্ট করা উচিত ছিল মোদীর

গেরুয়া সন্ত্রাস সংক্রান্ত যে তত্ত্ব কংগ্রেস তুলে ধরেছিল, তার জবাব দিতেই সাধ্বী প্রজ্ঞাকে প্রার্থী করতে হল— এমন মন্তব্য শোনা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর মুখে।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৯ ০০:৪৫
Share:

নরেন্দ্র মোদী— ফাইল চিত্র।

শুভ বুদ্ধির উদয় কিয়ত্ পরিমাণে হলেও হয়েছে, এমন একটা ধারণা তৈরি হয়েছিল। বীর শহিদ হেমন্ত করকরে সম্পর্কে সাধ্বী প্রজ্ঞা সিংহ ঠাকুর যে অসংবেদনশীল মন্তব্য করেছিলেন, সেই মন্তব্যকে বিজেপি অনুমোদন দেয়নি দেখে সামান্য হলেও আশার আলো জেগেছিল। সে আলো নিভে গেল। খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিভিয়ে দিলেন আলোটা।

Advertisement

এক সাক্ষাত্কারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মুখ খুলেছেন সাধ্বী প্রজ্ঞাকে নিয়ে। গেরুয়া সন্ত্রাস সংক্রান্ত যে তত্ত্ব কংগ্রেস তুলে ধরেছিল, তার জবাব দিতেই সাধ্বী প্রজ্ঞাকে প্রার্থী করতে হল— এমন মন্তব্য শোনা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর মুখে। স্তম্ভিত হতে হয়েছে এতেই। বিতর্কিত বয়ানের জেরে যাঁর সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব, সেই সাধ্বী প্রজ্ঞা সম্পর্কে মোদী হঠাত্ এত দরাজ কী ভাবে হলেন, এ প্রশ্ন বিস্ময় জাগিয়েছে।

সাধ্বী প্রজ্ঞাকে নির্বাচনে প্রার্থী করার ক্ষেত্রে কোনও আইনি বাধা নেই। কিন্তু খুন, সন্ত্রাস-সহ একাধিক গুরুতর ফৌজদারি অভিযোগে অভিযুক্ত যিনি, সেই সাধ্বী প্রজ্ঞাকে আদৌ প্রার্থী করা উচিত কি না, সে নিয়ে নীতিগত প্রশ্ন একটা রয়েইছে। এহেন সাধ্বী প্রজ্ঞা সম্পর্কে মন্তব্য যদি করতেই হয়, তা হলে অনেক সতর্ক হয়ে মন্তব্য করা উচিত ছিল প্রধানমন্ত্রীর। কিন্তু আদৌ কি তা করলেন নরেন্দ্র মোদী?

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

দেশে বিজেপির টিকিটে যত জন লড়ছেন, তাঁদের প্রত্যেকের সম্পর্কেই নরেন্দ্র মোদী কিছু না কিছু বলছেন, এমন নয়। সুতরাং সাধ্বী প্রজ্ঞার নামটাও প্রধানমন্ত্রী যদি না নিতেন, তা হলে মহাভারত অশুদ্ধ হত না। কিন্তু প্রজ্ঞার হয়ে প্রধানমন্ত্রী জোরদার সওয়াল করলেন। সওয়াল যখন করলেন, একই সঙ্গে ভর্ত্সনাটাও করা উচিত ছিল না কি? দেশপ্রেম, জাতীয়তাবাদ, দেশের প্রতি আবেগ ইত্যাদি নিয়ে বার বার কথা শোনা যায় যে নরেন্দ্র মোদীকে, সেই নরেন্দ্র মোদী কি বেমালুম ভুলে গেলেন বীর শহিদ হেমন্ত করকরেকে? করকরের মৃত্যু সম্পর্কে যে চূড়ান্ত অসংবেদনশীল মন্তব্য প্রজ্ঞা করেছিলেন, সে প্রসঙ্গ যেন জানাই নেই মোদীর! প্রজ্ঞাকে সমর্থন জানিয়ে ভোট মোদী চাইতেই পারেন। কিন্তু প্রজ্ঞার যে মন্তব্যের কারণে মোদীর দল প্রজ্ঞার সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতে বাধ্য হয়েছিল, সেই মন্তব্য প্রসঙ্গে এক বার অন্তত নিজের অবস্থান স্পষ্ট করা মোদীর তরফ থেকে জরুরি ছিল। প্রজ্ঞা সম্পর্কে তিনি যদি পুরোপুরি নিশ্চুপ থাকতেন, তা হলে খুব বেশি কথা বলার থাকত না। কিন্তু সাধ্বী প্রজ্ঞাকে নিয়ে মোদী নিজে যখন মুখ খুললেন, তখন অসংবেদনশীল মন্তব্যটার বিরুদ্ধে একটা বার্তাও জরুরি ছিল। হেমন্ত করকরেকে নিয়ে প্রজ্ঞা যে মন্তব্য করেছিলেন, তা কোনও ভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়— এ কথা দ্ব্যর্থহীন ভাবে বলা প্রধানমন্ত্রীর কর্তব্য ছিল। তা না বলে এবং শুধুমাত্র প্রজ্ঞার পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়ে মোদী যে দৃষ্টান্ত তৈরি করলেন, তা খুব ইতিবাচক নয়। তিনি বিজেপির হয়েই প্রচার করতে নেমেছেন এই নির্বাচনে সে কথা ঠিক। কিন্তু দিনের শেষে তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী, সে কথাও নিশ্চয়ই ভুললে চলে না। করকরের সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য যে অনুমোদন করা হচ্ছে না, বিজেপিই স্পষ্ট করে দিয়েছিল সে কথা। টেলিভিশন সাক্ষাত্কারে প্রজ্ঞার প্রার্থী পদের পক্ষে জোরদার সওয়াল করার সময় মোদী যদি করকরের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর কথাটাও মনে রাখতেন, ভাল হত। মনে রাখতে পারলেন না, না কি ইচ্ছাকৃত এড়িয়ে গেলেন প্রসঙ্গটা, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেল। অতএব তাঁর জাতীয়তাবাদ কতটা খাঁটি, সে প্রশ্ন তোলার সুযোগও তাঁর বিরোধীদের সামনে রয়ে গেল।

আরও পড়ুন: জবাব দিতেই প্রজ্ঞাকে প্রার্থী, দাবি প্রধানমন্ত্রীর

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement