Editorial News

জীবনরেখা কি হয়ে উঠবে দুঃস্বপ্নের রেখা

তি দিন গড়ে প্রায় সাড়ে ছয় লক্ষ যাত্রী বহন করা কলকাতা মেট্রোকে অনায়াসে কলকাতার গণপরিবহণ ব্যবস্থার জীবনরেখা বলা যায়। এ কী অবস্থা সেই জীবনরেখার!

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:৫৩
Share:

খুব বড়সড় বিপর্যয় ঘনিয়ে এলে তা রোখার মতো বা তার মোকাবিলা করার মতো পরিকাঠামো বা প্রস্তুতি কী আদৌ রয়েছে কলকাতা মেট্রোর? নিজস্ব চিত্র।

কলকাতার গণপরিবহণ ব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল মেট্রো রেল। এখনও পর্যন্ত মূলত উত্তর শহরতলির সঙ্গে দক্ষিণ শহরতলিকে জুড়েছে কলকাতা মেট্রো, শহরের যে কোনও প্রান্তে পৌঁছনো যায় না মেট্রো চ়়ড়ে। তবু প্রতি দিন গড়ে প্রায় সাড়ে ছয় লক্ষ যাত্রী বহন করা কলকাতা মেট্রোকে অনায়াসে কলকাতার গণপরিবহণ ব্যবস্থার জীবনরেখা বলা যায়। এ কী অবস্থা সেই জীবনরেখার! কোনও না কোনওভাবে বিভ্রাট লেগেই রয়েছে কলকাতার মেট্রো রেলপথে নিত্য দিন। হয়রানি, দুর্ভোগ, আতঙ্ক যেন নিশ্চিত উপরি পাওনা হয়ে দাঁড়িয়েছে মেট্রো যাত্রীদের জন্য।

Advertisement

গত একটা সপ্তাহের ঘটনাপ্রবাহের দিকে তাকানো যাক। কখনও আগুন লেগে যাচ্ছে রেকে, কখনও রেক বিকল হয়ে দরজা খুলছে না দীর্ঘক্ষণ, কখনও আত্মহত্যার চেষ্টার জেরে থমকে যাচ্ছে মেট্রো চলাচল। দুর্ভোগ যেন নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে মেট্রো যাত্রীদের জন্য! রবীন্দ্র সদন এবং ময়দান স্টেশনের মাঝে যে দিন আগুন লেগে গেল এসি রেকে, যাত্রীরা সে দিন প্রায় নরকদর্শন সেরে ফেলেছেন। আগুন নিজে থেকে না নিভে গেলে কী হতে পারত কারও জানা নেই। ধোঁয়ায় ভরে যাওয়া কামরা থেকে সহজে ধোঁয়া বার করার কোনও উপায় নেই। দুই স্টেশনের মাঝে দরজা খুলে দেওয়ার বন্দোবস্ত নেই। বিপর্যয়ের খবর এলেই তত্ক্ষণাত্ তার মোকাবিলা করার মতো পরিকাঠামো নেই। অতএব অন্ধকার সুড়ঙ্গে গ্যাসচেম্বার হয়ে ওঠা কামরা থেকে মুক্তি পেতে যাত্রীদেরই ভাঙতে হল কাচের জানালা, সেই জানালা দিয়ে লাফিয়ে নামতে গিয়ে জখম হতে হল অনেককে, ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়তে হল তার চেয়েও বেশি সংখ্যককে, আতঙ্কে বিহ্বল হয়ে পড়তে দেখা গেল একের পর এক যাত্রীকে। আর এত কাণ্ডের পর মেট্রো রেলের ছোট্ট বিবৃতি ঘটনাকে লঘু করে দেখানোর একটা ব্যর্থ চেষ্টায় পর্যবসিত হল। এ তো গেল একটা দিনের কথা। সময়ে মেট্রো না চলা, দরজা বিকল হয়ে যাওয়া, রেক বিগড়ে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাওয়া— এই ধরনের ঘটনা যেন অনেক বেশি করে চোখে পড়ছে কলকাতা মেট্রোয় সম্প্রতি। আর মেট্রোর যাত্রাপথে নানা স্টেশনে একের পর এক আত্মহত্যার চেষ্টা বার বার পরিষেবা স্তব্ধ করে দেওয়া সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত এই প্রবণতা রোখার মতো কোনও কৌশল ছকে নিতে পারলেন না মেট্রো কর্তৃপক্ষ। অতএব, দুর্ভোগ যেন নিত্যসঙ্গী কলকাতার জীবনরেখায়।

এ কথা ঠিক যে, এখনও পর্যন্ত খুব বড়সড় বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়নি কলকাতার মেট্রোর যাত্রীদের। দুর্ভোগ বা হয়রানির পরিমাণ বাড়লেও যাত্রীদের কোনও বড়সড় ক্ষতির মুখে হয়তো এখনও সে ভাবে পড়তে হয়নি। কিন্তু খুব বড়সড় বিপর্যয় ঘনিয়ে এলে তা রোখার মতো বা তার মোকাবিলা করার মতো পরিকাঠামো বা প্রস্তুতি কী আদৌ রয়েছে কলকাতা মেট্রোর? যাত্রীদের নিরাপত্তা কতটা সুনিশ্চিত কলকাতার এই গণপরিবহণ ব্যবস্থায়? প্রায় নিত্য দিনের দুর্ভোগ বা হয়রানি রুখতে মেট্রো কর্তৃপক্ষ সত্যিই কি আন্তরিক? কোনও আপত্কালীন পরিস্থিতির মোকাবিলা করার মতো আধুনিক বন্দোবস্ত আদৌ কি রয়েছে কলকাতা মেট্রোর? এই সব প্রশ্নের কোনও সদুত্তর মেট্রো কর্তৃপক্ষের কাছে রয়েছে বলে মনে হয় না। সদুত্তর খোঁজার উদগ্র চেষ্টা রয়েছে বলেও প্রতীত হয় না।

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

আরও পড়ুন: দমদমে ঝাঁপ, কবি নজরুলে এসি রেক বিকল, দুর্ভোগে মেট্রো যাত্রীরা

কলকাতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জীবনরেখাটা এ ভাবেই কি দুর্ভোগ আর দুঃস্বপ্নের নামান্তর হয়ে উঠবে? কর্তৃপক্ষের কাছে জবাবটা চাওয়ার সময় এসে গিয়েছে এ বার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement