নারীর প্রতি বৈষম্য নিয়ে তথ্যনিষ্ঠ লেখাটির (‘ছিল অধিকার, হল দাক্ষিণ্য’, ৩-৫) জন্য তহমিনা মণ্ডলকে অনেক অভিনন্দন। একশো দিনের কাজের মজুরিতে পুরুষের জন্য সরকারি বরাদ্দ ২১৩ টাকা, আর নারীদের জন্য তা মাত্র আশি থেকে দেড়শো। ওরা নারী, কম খেটে বেশি মজুরি নেয়— এই অভিযোগে টাকা কেটে নেওয়ার ঘটনা সর্বত্র। সবার জানা আছে যে, রাজ্যের বাইরে গিয়ে এখানকার অদক্ষ শ্রমিক আট ঘণ্টা কাজ করে রোজ ৭০০-৮০০ টাকা আয় করেন। সেখানে সরকার এই সামান্য মজুরি নির্ধারণ করেছে। তা-ও মেয়েদের বেলা কাটা হচ্ছে। সরকারি কর্মীদের এ কাজকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলা চলে না কি? আমাদের দেশের ৯০ শতাংশ লোক সরকারের ছাতার বাইরে থেকে ভিজে-পুড়ে রোজগার করছেন। পাশাপাশি, চুক্তির ভিত্তিতে সরকারি-বেসরকারি কাজে নিযুক্ত নিষ্ঠাবান ও দায়িত্বশীল কর্মীরা প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, এক-চতুর্থাংশ মাইনে পেলে স্থায়ী চাকুরেদের চাইতে তাঁরা আরও বেশি কাজ অধিকতর যত্ন সহকারে করে দেবেন। অতএব অধিক চুক্তিকর্মী নেওয়ার ফলে সরকারের কোষাগার যেমন বাড়বে, তেমনই সরকার সবার জন্য আরও অনেক প্রকল্পও নিতে পারবে। নব্বই শতাংশের জীবন যাপন হবে সহজতর। কেন্দ্রীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান প্রকল্পের মূল কথা ছিল, যে সব কর্মহীন লোকজন পঞ্চায়েতের কাছে কাজ চাইতে উপস্থিত হবেন, তাঁরা সবাই কাজ পাবেন। কাজ দিতে না পারলে তাঁকে ভাতা দিতে হবে। আউশ-আমন-বোরো মিলিয়ে প্রায় ন’মাস গ্রামের লোকেরা মাঠে কাজ করেন। তাই বাকি একশো দিনের জন্য কাজ দেবে সরকার। যেখানে জমি একফসলি, বা নগরাঞ্চলে যেখানে অদক্ষ শ্রমিক কাজ পান না, তাঁরা বেশি দিনও কাজ করতে পারেন। বাস্তবে কে কত কাজ পাচ্ছেন, তহমিনা তার আলোচনা করেছেন। কাজের মজুরির তুল্যমূল্য বিচার করলে দেখা যাবে, সদ্য চাকরি-পাওয়া এক জন গ্রুপ-ডি কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী রোজ শুধুমাত্র যা ভাতা পান, একশো দিনের কাজের মজুরি তার প্রায় অর্ধেক। কোন যুক্তিতে হয়?একশো দিনের কাজে মহিলাদের দিয়ে নর্দমা পরিষ্কার করানো হয়। এটা কাজের নামে অবমাননা নয় কি! বাড়িতে তিন-চার জন লোক এসে ঘণ্টাতিনেক সময়ে বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্ক সাফাই করে ২৫ হাজার টাকা নিয়ে যান। আর ওই মেয়েরা? স্বাধীনতার সওয়া-শতক পেরিয়ে নারীকে দিয়ে নর্দমা পরিষ্কার করানো হয়, আর মজুরি কাটেন এই ঘড়িবাবুরা।
বিমল জানাবেলদা, পশ্চিম মেদিনীপুর
জনকল্যাণকামী?
সম্প্রতি স্বাস্থ্য বিভাগে ১১,৫৫১ জন এবং খাদ্য বিভাগে ৩৪২ জন চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগের কথা ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। চুক্তিতে নিয়োগ বাজার অর্থনীতির এক মহান অবদান! এই অবদানকে কেন্দ্র এবং রাজ্যের সরকারগুলি কমবেশি কাজে লাগাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দু’টি বিষয় নিয়ে বেশি সমালোচনা হচ্ছে। এক, কাজের শর্ত এবং কাজের পরিবেশ, দুই, কাজের পারিশ্রমিক। এই দু’টি বিষয় নিয়েই ‘অবহেলার শ্রম’ (১-৫) সম্পাদকীয়তে আলোচনা হয়েছে। লেখা হয়েছে, “কিন্তু এখনও ভারতের মতো দেশে দশ জন শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে ন’জনের ক্ষেত্রেই কাজের শর্তগুলি অত্যন্ত কঠিন। কর্মক্ষেত্রে তাঁদের শারীরিক নিরাপত্তা, মজুরির হারও সুস্থ জীবনযাপন নিশ্চিত করতে পারে না।” কেন বাজার অর্থনীতির হাত ধরে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার চুক্তিতে নিয়োগকে প্রাধান্য দিচ্ছে, সেই বিষয় নিয়ে অন্তর্তদন্ত দরকার, নয়তো উত্তরণের পথ খুঁজে পাওয়া যাবে না। চুক্তিতে নিয়োগে সরকারের দু’দিক দিয়ে লাভ হচ্ছে। এক, আর্থিক সাশ্রয়। সরকারি হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণির স্থায়ী কর্মীর অন্যান্য সুযোগ সুবিধা-সহ মাসিক বেতন যেখানে ২২ হাজার টাকা, সেখানে চুক্তিতে ওই একই কাজে পাচ্ছে ৯ হাজার টাকা, অন্যান্য সুযোগ সুবিধা থেকেও সে বঞ্চিত হচ্ছে। কিসের ভিত্তিতে যে এই বেতন নির্ধারিত হচ্ছে, সে-ও এক রহস্য। সরকারের কর্মী নিয়োগের এই ব্যবস্থার সুযোগ নিচ্ছে বেসরকারি সংস্থাগুলো, কাজের আরও কঠিন শর্ত আরোপ করে আরও কম বেতনে কাজ করিয়ে নিতে পারছে, কাজের লোকের অভাব হচ্ছে না। ফলে বেসরকারি সংস্থাগুলোর আর্থিক শ্রীবৃদ্ধি প্রত্যাশাকে ছাপিয়ে যাচ্ছে, বিনিয়োগ বাড়ছে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বেসরকারি বিনিয়োগ যথেষ্ট আকর্ষণের ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। এতে সরকারের পরোক্ষ লাভ— বেকারত্ব কমছে। কিন্তু একটা বড় সংখ্যক কর্মী যে পারিশ্রমিক পাচ্ছে, তার দিকে তাকানোর সময় এসেছে। ‘নার্সারি বিভাগের জন্য বিএসসি-পাশ, ইংরেজিতে দক্ষ শিক্ষিকা চাই, বেতন তিন হাজার টাকা’— বহুল প্রচারিত সংবাদপত্রে এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রায়ই দেখা যায়। মফস্সলের বেসরকারি স্কুলগুলিতে বেতন তিন হাজার টাকা থেকে দশ হাজার টাকার মধ্যে। বেসরকারি নার্সিংহোমগুলিতে কর্মীদের পারিশ্রমিক অনুরূপ। সময়ের সঙ্গে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে, কর্মীদের ক্রয়ক্ষমতা ঠিক রাখার জন্য ডিএ ব্যবস্থা চালু আছে। রাজ্য সরকার স্থায়ী কর্মীদের ডিএ ব্যবস্থা রদ করার পথে যেখানে হাঁটছে, সেখানে চুক্তি-ভিত্তিক কর্মীদের অবস্থা যে আরও শোচনীয় হয়ে পড়বে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে বাড়ছে অপুষ্টি, শিক্ষায় পরিবারের ব্যয় কমছে, সামাজিক অবক্ষয় বাড়ছে। অথচ, রাজ্য সরকার স্থায়ী কর্মী সঙ্কোচন করে, চুক্তিতে স্বল্প বেতনে কর্মী নিয়োগ করে যে অর্থ সাশ্রয় করছে, তা বিভিন্ন প্রকার প্রকল্পে অনুদান ও ভর্তুকি দিচ্ছে সচ্ছল ও অসচ্ছল, সকলকেই। এতেই সরকার লাভ দেখছে, কারণ এই সব প্রকল্প ক্ষমতায় টিকে থাকার হাতিয়ার। এতে আরও অর্থের যে প্রয়োজন হয়ে পড়ছে, সেটা মেটাতে বাম আমলের থেকে ছ’গুণ বিক্রি বাড়ানো হয়েছে মদের। পাশাপাশি সরকারকে বাজার থেকে ঋণ গ্রহণ করতে হচ্ছে। বাম আমলের ঋণ যেখানে ২.৮৬ লক্ষ কোটি ছিল, তা বেড়ে হয়েছে ৫.৮৬ লক্ষ কোটি টাকা। এ রাজ্যকে জনকল্যাণকামী ভাবতে ধন্দ লাগে।
অসিত কুমার রায়ভদ্রেশ্বর, হুগলি
উৎপীড়নের অস্ত্র
তাজুদ্দিন আহ্মেদের ‘মোদীর দেশে বুলডোজ়ার’ (১০-৫) শীর্ষক প্রবন্ধ প্রসঙ্গে বলি, লেখক যথার্থই বলেছেন— সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর উৎপীড়নে সরকারি ব্যবস্থাপনার রূপক হিসেবে এটি আত্মপ্রকাশ করেছে। সত্যিই বুলডোজ়ার আজ হয়ে উঠেছে রাষ্ট্রযন্ত্রের ইস্পাত-হাত। শত্রু বা অবাধ্যকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার অপ্রতিরোধ্য যন্ত্র। হিন্দুত্ববাদী শক্তির আধিপত্য স্থাপনের জন্য আর ত্রিশূল বা তরোয়াল প্রয়োজন হচ্ছে না। ভারতের যে কোনও শহরেই বেআইনি বসতি ও নির্মাণ থাকে। কিন্তু বেছে বেছে বুলডোজ়ার কেন বার বার সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় হানা দিচ্ছে? আসলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সঙ্গে বার বার ‘অবৈধ’ ও ‘বহিরাগত’ তকমা জুড়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তাঁদের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতেই বুলডোজ়ার দরকার।
অভিজিৎ ঘোষ, কমলপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
মিড-ডে মিল
কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ উদ্যোগে মিড-ডে মিল প্রকল্প চলে। চাল সরবরাহ সরকার থেকে করা হয়। অন্যান্য খরচের জন্য প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষার্থী পিছু ৪.৯৭ টাকা, ও উচ্চ প্রাথমিকে ৭.৪৫ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু ডাল, আলু, আনাজ, ডিম, তেল, মশলা ও গ্যাসের খরচ পাঁচ টাকা থেকে সাড়ে সাত টাকার মধ্যে কুলোনো সম্ভব কি? একটা ডিম ন্যূনতম পাঁচ টাকা, ভোজ্য তেল ২০০ টাকার কাছে, গ্যাস সিলিন্ডার ১০০০ টাকারও বেশি। এই ভাবে চললে প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়তে পারে।
তমাল কুমার ঘোষ, ফরাক্কা ব্যারাজ, মুর্শিদাবাদ