‘বইমেলায় দাওয়াত না পেয়ে হতাশ ঢাকা’ (১৯-১১) শীর্ষক সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে এই চিঠি। এ কথা অনস্বীকার্য যে, ভাল বই সব সময়েই সুস্থ-সংস্কৃতি বিকাশের ধারক ও বাহক হয়ে এসেছে। শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, বাংলাদেশ থেকেও সারা বছর বহু ভাল বই প্রকাশিত হয়ে থাকে। সে সব বইয়ের আগ্রহী পাঠক এ পারে, অর্থাৎ ভারতেও রয়েছে। প্রসঙ্গত, কলকাতা বইমেলার মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন না করলেও, আজ আগরতলা বইমেলা জাতীয় বইমেলায় পরিণত হয়েছে। দিল্লি, মুম্বই, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, অসম, মণিপুর এবং বাংলাদেশ ও নেপাল এই মেলায় অংশগ্রহণ করে। আগরতলা বইমেলাকে কেন্দ্র করে শুধুমাত্র বাংলা বই নয়, মণিপুরি, ইংরেজি, হিন্দি-সহ বিভিন্ন ভাষার বই প্রকাশিত হচ্ছে প্রতি বছর। এই বইমেলায় প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে কয়েক জন প্রকাশক আমন্ত্রিত হয়ে বিনামূল্যে অংশগ্রহণ করার সুযোগও পেয়ে থাকেন।
অথচ, খোঁজ নিয়ে জেনেছি ত্রিপুরা থেকে কোনও প্রকাশনা সংস্থা বা সংগঠন কিন্তু বাংলাদেশ বইমেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ পায় না। শোনা যায়, এর কারণ, আন্তর্জাতিক ভিন্ন মুদ্রাব্যবস্থা নাকি ত্রিপুরা তথা ভারতের কোনও প্রকাশক বা পুস্তক বিক্রেতা সংস্থার বাংলাদেশ বইমেলায় অংশগ্রহণে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আর সেই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ভারতীয় বই প্রকাশ করে সে দেশে বাণিজ্য করে যাচ্ছে। অনেক প্রখ্যাত সাহিত্যিক এবং বিশিষ্ট প্রকাশনা সংস্থা বহু চেষ্টা সত্ত্বেও সেই নকল মুদ্রণ বন্ধ করতে পারেননি। বইকে ঘিরে অবিলম্বে এমন অসাধু ব্যবস্থা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।
বাঁধন চক্রবর্তী, আগরতলা, ত্রিপুরা
গণতন্ত্র লোপ
‘ধর্মনিরপেক্ষতা খারিজের পক্ষে ইউনূস সরকার’ (১৫-১১) সংবাদটি পড়ে কয়েকটি কথা মনে হল। বাংলাদেশে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান হাই কোর্টে নিজেদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশে ৯০ শতাংশ বাসিন্দা যখন ইসলাম ধর্মের অনুসারী, তখন রাষ্ট্রব্যবস্থার চরিত্রের সংজ্ঞায় ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ রাখা অর্থহীন। গণতান্ত্রিক বলে পরিচিত কোনও সরকারের প্রতিনিধির মুখে রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষতা সম্পর্কে এমন ব্যাখ্যা বিস্ময়কর— যেন আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের চরিত্র ধর্মনিরপেক্ষ হবে কি না তা সেই রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক কোন ধর্মের অনুসারী, তার উপর নির্ভর করে। সত্যিই কি তাই? সাধারণত আমরা জানি যে, আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলির চরিত্র নাগরিকদের ধর্মের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয় না। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষতা ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র যে কোনও ধর্ম থেকেই সমদূরত্ব বজায় রাখে। এখানে কোনও নাগরিকের ধর্মপালনে যেমন বাধা দেওয়া হয় না, তেমনই উৎসাহিতও করা হয় না। গণতন্ত্রে ধর্ম-বর্ণ-ভাষা নির্বিশেষে সব নাগরিকের সমান অধিকার।
ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে রাষ্ট্রনায়ক বা তার পরিচালকদের ক্ষেত্রেও ধর্ম সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত বিষয় হওয়া উচিত। সামাজিক রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডগুলি পরিচালিত হওয়ার কথা বৈজ্ঞানিক এবং অর্থনৈতিক যুক্তির ভিত্তিতে। তা না হলে রাষ্ট্র সকল নাগরিকের প্রতি সম-মনোভাব বজায় রাখতে সক্ষম হবে না। ঠিক এটাই লক্ষ করা যাচ্ছে ভারতের বর্তমান শাসকদের মধ্যে। হিন্দুত্ববাদী হিসাবে তাঁদের চিন্তাভাবনা ও মানসিকতার প্রভাব রাষ্ট্র পরিচালনার কাজকর্মে, প্রশাসনে প্রত্যক্ষ ভাবে পড়ছে, যা ভারতবাসী হিসাবে সব ধর্মের নাগরিকদের সমানাধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। তাঁদের আচরণ থেকেই সংখ্যালঘু ধর্মের সম্পর্কে সমাজের একাংশে বিদ্বেষের মনোভাব গড়ে উঠছে। এরই পরিণতি— দেশের নানা প্রান্তে মাঝে মাঝেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা।
মুহাম্মদ ইউনূস-দের মনে রাখা দরকার, যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের ঢেউয়ে চড়ে নতুন সরকার গঠিত হয়েছে, সেই আন্দোলন কোনও বিশেষ সম্প্রদায়ভিত্তিক আন্দোলন ছিল না। সব ধর্মের ছাত্রই সেই আন্দোলনে লড়াই করেছে, প্রাণ দিয়েছে। ক্ষমতায় বসে রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র বদলে দিয়ে ধর্মীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হবে সেই আন্দোলনের অপমান।
সমুদ্র গুপ্ত, কলকাতা-৬
দুর্নীতির শিকড়
‘দুর্নীতি বিদায়ের রাজনীতি’ (১৫-১১) শীর্ষক প্রবন্ধে তৃণাঞ্জন চক্রবর্তী দেশের দুর্নীতিরাজ দমন সম্পর্কে লিখেছেন, দুর্নীতিকে সমূলে বিনাশ করতে চাইলে সম্পদ উৎপাদন ও তার সুবণ্টন দরকার, বিশেষত গ্রামীণ ও প্রান্তিক জনগণের মধ্যে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য সুরক্ষার মতো একাধিক সমস্যাগ্রস্ত জরুরি বিষয় থেকে যাতে দুর্নীতির অভিশাপকে রোধ করা যায়, তিনি তারও বিস্তারিত বিশ্লেষণ নানা ভাবে করেছেন। প্রসঙ্গত, এ-যাবৎ অসংখ্য বড় মাপের আর্থিক কেলেঙ্কারির সাক্ষী থেকেছে এই দেশ— ২জি স্পেকট্রাম, পশুখাদ্য-মামলা, হাওয়ালা, কয়লা, ব্যাপম কেলেঙ্কারি ইত্যাদি। সেই সঙ্গে এই রাজ্যে সারদা-নারদা, শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ-দুর্নীতি, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে আর্থিক তছরুপের মামলা, কয়লা-বালি-গরুপাচার, সিন্ডিকেট-ব্যবসার ঘটনা তো রয়েছেই। তথ্য বলছে, কয়েক জন মুখ্যমন্ত্রী দুর্নীতির জন্য কারাদণ্ড ভোগ করেছেন। আবার কেউ কেউ দুর্নীতির অভিযোগে জেলে গেলেও তাঁঁদের অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এখন ছাড়া পেয়েছেন। এ বছর জানুয়ারিতে প্রকাশিত ‘দুর্নীতি উপলব্ধি সূচক’-এ দেখা যায়, ২০২৩ সালে ১৮০ দেশের তালিকায় ভারতের স্থান ৯৩তম, ২০২২-এ যা ছিল ৮৫। ফলে বোঝা যায় দীর্ঘকালীন অর্থনৈতিক দুর্নীতি কী ভাবে দেশের সার্বিক অগ্রগতির পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
এ দিকে, ২০১৬ সালে ৮ নভেম্বর ‘নোটবন্দি’ ঘোষণার ২২ মাস পর ‘রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া’ তাদের রিপোর্টে জানায় যে মোদী সরকারের ওই পদক্ষেপের পর নোটের ৯৯ শতাংশেরও বেশি ফিরে এসেছে ব্যাঙ্কে। কার্যত, এর দ্বারা কালো টাকার কোনও হদিস মেলেনি। এতে অসাধু কারবারিদের চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যটি যেমন ব্যর্থ হয়, তেমনই অনেক অসাধু এই সুযোগে তাঁদের কালো টাকা বেমালুম সাদা করে নেন। তথ্য বলছে, এমন অবিবেচকের মতো সিদ্ধান্ত শুধু ভারতীয় অর্থনীতির বৃদ্ধিই হ্রাস করেনি, দেশকে আর্থিক ক্ষতির মুখেও ঠেলে দিয়েছিল। এর বিরূপ প্রভাব পড়ে সাধারণ মানুষের রোজগারেও। এর দু’বছর পরই কেন্দ্রীয় সরকার চালু করে নির্বাচনী বন্ড। এটি এমন একটি প্রকল্প, যার মাধ্যমে বিভিন্ন সংস্থা বা ব্যক্তি নিজেদের পরিচয় প্রকাশ না করেই রাজনৈতিক দলগুলিকে অনুদান দিতে পারে। অভিযোগ, এই নির্বাচনী বন্ড আসলে নির্বাচনের প্রচারে রাজনৈতিক দলগুলোকে কালো টাকা পাঠানোর এক অস্বচ্ছ উপায়। ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস’ (এডিআর)-এর তথ্য অনুযায়ী, এই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে গত কয়েক বছরে সবচেয়ে বেশি লাভবান কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন শাসক দল। এই বছর ফেব্রুয়ারিতে দেশের সর্বোচ্চ আদালত নির্বাচনী বন্ডকে অসাংবিধানিক বলে রায় দেয়।
অন্য দিকে, এক সমীক্ষা বলছে, ২০১৭-১৮ থেকে ২০২১-২২, এই পাঁচ বছরে কর্পোরেটদের ১০ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি ঋণ মকুব করা হয়েছে। অর্থাৎ, সরকার ও শিল্পপতিরা একে অপরের ‘দেখভাল’ করেছেন। এমন অনৈতিক ও অসঙ্গত রাজনৈতিক বাতাবরণে দুর্নীতির ‘সমূলে বিনাশ’ কী ভাবে সম্ভব?
পৃথ্বীশ মজুমদার, কোন্নগর, হুগলি
অমিল ট্যাক্সি
এখন রাস্তায় হলুদ ট্যাক্সি প্রায় দেখাই যায় না। অবশ্য থেকেও লাভ হয় না। কোথাও যেতে বললে তারা অস্বাভাবিক ভাড়া চেয়ে বসে। চড়া ভাড়ার কারণে সব মানুষের পক্ষে অ্যাপ ক্যাবে যাতায়াত করা সমস্যার। তা হলে বিশেষ প্রয়োজনে ট্যাক্সিতে চড়তে হলে উপায় কী?
টুম্পা দাস, কলকাতা-৩২