ফেলুদা বলেছিল, কোনও খুনি ‘এপ’ নাকি মানুষের পূর্বপুরুষ, তাই মানুষের মধ্যে একটা জিঘাংসা থেকে গিয়েছে, যা কালের প্রবাহেও লুপ্ত হয়নি। সম্প্রতি একটা এনকাউন্টার হয়েছে, বহু অপরাধে অভিযুক্ত বিকাশ দুবে মারা গিয়েছে। মানুষ তাৎক্ষণিক বিচার পছন্দ করে। তা হলে আপত্তি কোথায়?
আপত্তিটা এখানেই যে, এটা ভারত, কোনও বর্বর দেশ নয়। এখানে সুনির্দিষ্ট বিচার ছাড়া কোনও কিছু করার নিয়ম নেই। এনকাউন্টারে কিছু নরপিশাচকে যমালয়ে পাঠানো গেলেও আট জন শহিদ পুলিশকর্মী, যাঁরা বিকাশ দুবের জন্য প্রাণ হারিয়েছিলেন, তাঁরা তো বিচার পাবেন না। অথবা কিছু দিন আগে ধর্ষিত ও অগ্নিদগ্ধ প্রিয়ঙ্কা রেড্ডির ঘটনা মনে রেখে বলা যায়, নির্যাতিত মেয়েরা সুবিচার পাবেন না তাঁদের ধর্ষক-খুনিরা যদি পুলিশ এনকাউন্টারে প্রাণ হারায়। পুলিশ কেন গুলি করেছে? খুনের অপরাধের শাস্তি দিতে, না কি অপরাধী পুলিশের হেফাজত থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য? যদি দ্বিতীয়টাই সত্যি হয়, তা হলে শহিদ পুলিশকর্মীরা বিচার পেলেন কী ভাবে?
যদি এই এনকাউন্টার একটা নিয়মে পরিণত হয়ে যায়, তা হলে যেমন অনেক নিরপরাধ মানুষ এর শিকার হবেন, তেমনই সাধারণ মানুষ বিচারব্যবস্থার উপর আস্থা হারাবেন। এই ঘটনাগুলিকে প্রথা হয়ে ওঠা থেকে আটকাতে হবে।
সাঈদ আনোয়ার
বর্ধমান
হিংসাই পথ?
কানপুরের ত্রাস বিকাশ দুবেকে পুলিশ হত্যা করল, না কি সে এনকাউন্টারে মারা গেল, আমরা ঠিক জানি না। উত্তরপ্রদেশ তথা ভারতের মানুষ সেটা জানতেও চায় না। সে যে খতম হয়েছে, এটাই বড় প্রাপ্তি। বিরোধী দলগুলি, বিদ্বজ্জন, গণমাধ্যম এই হত্যা বিষয়ে প্রশ্ন তুলতেই পারে। কিছু অরাজনৈতিক মানুষও এই মৃত্যুর কারণ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করতে পারে। কিন্তু দেশের অধিকাংশ মানুষ পুলিশের এই কাজকে সমর্থন করে।
কিছু দিন আগে তেলঙ্গানায় এক তরুণী পশু চিকিৎসককে নির্মম অত্যাচার করে নৃশংস ভাবে খুন করে দুর্বৃত্তরা। পুলিশ চার জনকে পাকড়াও করে এবং পুলিশের সঙ্গে ‘এনকাউন্টার’-এ তাদের মৃত্যু ঘটে। সারা দেশে এ নিয়ে হইচইও হয়। কিন্তু তেলঙ্গানার অগণিত মানুষ এনকাউন্টারে অংশ নেওয়া পুলিশকে মালা পরিয়ে তাদের মতামত কোন দিকে তা জানিয়ে দেয়।
‘মারের বদলে মার হবে’— এ সব কথা আজকাল হামেশাই রাজনৈতিক নেতারা প্রকাশ্যে বলছেন। হিংসাকে এখন সব রাজনৈতিক দলই সুযোগ অনুযায়ী অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। সাধারণ মানুষও তাই পুলিশের খতম অভিযানে নৈতিকতার প্রশ্ন তোলে না। বরং সঙ্গে সঙ্গে বিচার পাওয়া গেল জেনে খুশি হয়। পুলিশের এই কাজ যে দেশের গণতন্ত্র ও বিচারব্যবস্থাকে ক্রমশ পঙ্গু করে দেবে, প্রশাসনের কর্তারা তা উপলব্ধি করেন। কিন্তু তাঁরা নিজেরাই তো চোরাবালিতে আটকে আছেন।
স্বপন কুমার ঘোষ
কলকাতা-৩৪
বিচ্যুতির নজির
অসংখ্য বিকাশ দুবে সারা ভারতে ছড়িয়ে আছে, যাদের কাছে সাধারণ মানুষ অসহায়। যাদের নির্দেশে অনেক সময় জমি-ভিটে ছেড়ে দিতে হয়। যাদের বাহিনীর তাণ্ডব দেখেও চোখ বুজে থাকতে হয়। প্রতিবাদ করলে জোটে লাঞ্ছনা অথবা পরপারের ঠিকানা। অথচ আশ্চর্য যে, তাদের বিরুদ্ধে না থাকে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিবাদ, না থাকে মানবাধিকার কর্মীদের আন্দোলন। তাদের শুধু আওয়াজ শোনা যায় গুন্ডা-নেতাদের মৃত্যুর পরে। ভারতের ইতিহাসে এমন কি কোনও নজির আছে যে, কোনও কুখ্যাত অপরাধীর শাস্তি হলে তার সঙ্গে যোগসাজশ থাকার জন্য কোনও বড় নেতা বা মন্ত্রীরও শাস্তি হয়েছে? অতীতে হয়নি এবং আজও হয় না। নীতির বাইরে গিয়ে কোনও কাজের ফলে যদি লক্ষ লক্ষ মানুষের মুখে হাসি ফোটে, তারা যদি বুকে বল পায়, শান্তিতে বাঁচার পথ খুঁজে পায়, তা হলে কি সেটা গুরুতর অপরাধ? প্রাচীন মহাকাব্য রামায়ণ, মহাভারতেও ধর্ম ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য নীতি-বিচ্যুতির অনেক নজির আছে। আজকের যুগে এ কথা সমান ভাবে প্রযোজ্য।
তরুণ কুমার রায়
কলকাতা-৯৯
আর বিকাশ নয়
কাউকে যদি মাফিয়া তৈরি করা যায়, তা হলে তাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেন নেতারা। বিকাশ দুবের ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছিল। তাকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির নেতা নিজেদের গদি বহাল রেখেছিলেন। ছাত্রাবস্থা থেকেই বিকাশ বেপরোয়া কাজকর্মের জেরে অনেক নেতার প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেছিল। সকলেই সুযোগ খুঁজছিল তাকে কাজে লাগানোর। বিকাশও কখনও জনতা দল, কখনও বিজেপি, কখনও বা বিএসপি দলের ছত্রচ্ছায়ায় থাকত। তবে চৌবেপুরের বিধায়ক হরিকিষেণ শ্রীবাস্তব ছিলেন তার রাজনৈতিক গুরু। সেই সূত্রেই নিজের গ্রাম বিকরু এবং লাগোয়া বেশ কিছু এলাকায় তার অখণ্ড দাপট ছিল। তার কথাই ছিল শেষ কথা, আর সেটাকেই কাজে লাগিয়েছে ক্ষমতাসীন দলগুলো। থানায় ঢুকে অনেক পুলিশকর্মীর সামনে বিজেপির মন্ত্রীকে খুন করার পরেও তার বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষী দেয়নি! বন্দুকের জোরে সে ঠিক করত পঞ্চায়েতে কে জিতবে। বিকাশ সমান্তরাল প্রশাসন চালাত, বিকরু-র আশেপাশের হিমঘর ও ইটভাটায় বসত বিকাশের দরবার।
বিকাশের কার্যকলাপ প্রশাসন এবং সব রাজনৈতিক দলের নখদর্পণে ছিল। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের প্রশ্রয়ের হাত বিকাশের মাথায় থাকায় কেউ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা করার সাহস দেখায়নি। ফলে রাজনৈতিক আখের গোছানোর জন্য বিকাশদের মতো মাফিয়া তৈরি করে জঙ্গলরাজ কায়েম করা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার একটা অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের সমাজে। রাজনৈতিক দলগুলো কলুষমুক্ত হোক, তাদের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য আর যেন কোনও বিকাশকে তৈরি করতে না হয়।
পরেশ নাথ কর্মকার
রানাঘাট, নদিয়া
লুম্পেনগিরি
একাধিক কিস্তিতে প্রকাশিত ‘ত্রাসের ঘর’ ও ‘দাদার দাপট’ শীর্ষক সময়োচিত ও নির্ভীক প্রতিবেদনগুলি এ রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতির সঙ্গে শাসক দলের ভণ্ড ও অসাধু রূপটিকে জনসমক্ষে তুলে ধরেছে। এ জাতীয় বলিষ্ঠ প্রতিবেদন সমাজবিরোধীদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার শক্তি ও সাহস জোগায়।
গ্রামাঞ্চলে দরিদ্র মানুষ লুম্পেনদের ভয়ে তটস্থ। থানায় এফআইআর দাখিল করা তো দূরের কথা, লুম্পেনদের বিরুদ্ধে সাধারণ অভিযোগ করার সাহস তাদের নেই। আশ্চর্য এই যে, সংবাদপত্রের পাতায় এত অভিযোগের খবর, তবু পুলিশ-প্রশাসনের হুঁশ নেই। এ দেশে বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করে এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেয়। লুম্পেনদের জুলুমবাজির বিরুদ্ধে পুলিশ-প্রশাসনেরও একই ভূমিকা পালন করা উচিত, এবং আইনে সে রকম ব্যবস্থাও আছে। কিন্তু এই রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসন এ ব্যাপারে নিষ্ক্রিয়। একটু খোঁজ নিলেই জানা যায়, টোটো-পিছু তিরিশ হাজার টাকা দক্ষিণা না দিলে টোটো রাস্তায় নামে না। শহর ও শহরতলিতে নতুন ফ্ল্যাট-বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সিন্ডিকেট থেকে বেশি দামে অত্যন্ত নিম্নমানের সামগ্রী কেনা বাধ্যতামূলক। নইলে হয়রানি, মারধর, কাজ বন্ধ এমনকি ওয়ান শাটারের কেরামতি পোহাতে হবে। সঙ্গে বর্গফুট মেপে তোলার ব্যবস্থা তো আছেই। সব পুলিশ-প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘটছে। জোটবদ্ধ প্রতিবাদ খুবই জরুরি।
কুমার শেখর সেনগুপ্ত
কোন্নগর, হুগলি
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।