করোনার কারণে প্রায় দু’বছর ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় তাদের ধারাবাহিক শিক্ষালাভে যে বিশাল ফাঁক তৈরি হয়েছিল, নতুন বছরে সেই ফাঁকটা সবেমাত্র ভরাট হতে শুরু করেছিল। আবার বিদ্যালয়ের পরিচিত পরিবেশে ফিরতে শুরু করেছিল ছোট ছোট ছেলেমেয়েগুলো। দীর্ঘ দিনের অনভ্যাসে পড়াশোনার প্রতি হারিয়ে যাওয়া আগ্রহটাও ফিরছিল ধীরে ধীরে। শিক্ষক-শিক্ষিকারাও অনেক দিন পর তাঁদের প্রিয় ছাত্রছাত্রীদের কাছে পেয়ে আবার নতুন উদ্যমে শিক্ষাদানের কাজে ব্রতী হতে শুরু করেছিলেন।
কিন্তু হঠাৎ বিদ্যালয়গুলিতে দীর্ঘমেয়াদি গরমের ছুটি পড়ে যাওয়ায় সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেল। পিছিয়ে গেল তাদের প্রথম সামেটিভ মূল্যায়নটাও। এমনিতেই এত দিন বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার মান প্রায় তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের ছেলেমেয়েদের অবস্থা খুবই খারাপ। শহুরে এলাকায় যদিও বা কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনলাইন ক্লাসের সুযোগ আছে, গ্রামাঞ্চলের ক্ষেত্রে সেই সুযোগটুকুও নেই। ফলস্বরূপ, গ্রামাঞ্চলে বিদ্যালয়-ছুটের প্রবণতা বাড়ছে, মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর পরেও যদি দীর্ঘ দিন বিদ্যালয় বন্ধ থাকে, তা হলে তার পরিণাম হবে ক্ষতিকর।
প্রচণ্ড গরমে ছাত্রছাত্রীরা যাতে কষ্ট না পায়, তার জন্য অবশ্যই গরমের ছুটির প্রয়োজন। কিন্তু এত দিন ছুটি? কয়েক দিন ধরে ঝড়বৃষ্টি হওয়ায় তাপমাত্রা এখন অনেকটাই কমেছে। আগের সেই অসহ্য গরম আর অতটা অনুভূত হচ্ছে না। তাই ছাত্রছাত্রীরা যাতে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ফের হারিয়ে না ফেলে, সেই জন্য মুখ্যমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, ওদের স্বার্থেই গরমের ছুটির মেয়াদ কমিয়ে আনা হোক।
অর্পিতা বিশ্বাস
ব্যান্ডেল, হুগলি
প্রস্তুতির সময়
সরকারি বিদ্যালয়গুলিতে অত্যধিক গরমের জন্য গ্রীষ্মের ছুটি এমন সময়ে ঘোষণা করা হল, যখন প্রথম মূল্যায়ন হয় আরম্ভ হওয়ার মুখে, নয়তো মাঝপথে। অতিমারিজনিত দীর্ঘ বিরতির পর নিয়মিত ক্লাস ও অনুশীলনের মধ্যে দিয়ে সবেমাত্র ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষাভীতি কাটতে শুরু করেছিল। কিন্তু গ্রীষ্মের ছুটি এগিয়ে আসায় সব তালগোল পাকিয়ে গেল। দীর্ঘ দেড় মাস ছুটির পর স্কুল খুলে প্রথম মূল্যায়ন পরীক্ষা ছাত্রছাত্রীদের মনোবল ভেঙে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। ছুটির আগে পরীক্ষা হয়ে যাওয়াটা খুবই দরকার ছিল। প্রয়োজনে স্কুল সকাল সকাল করা যেত। প্রথম মূল্যায়নের সময় পিছিয়ে যাওয়ার ফলে দ্বিতীয় মূল্যায়ন পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় কম থাকবে ছেলেমেয়েদের হাতে।
সৌম্য বটব্যাল
দক্ষিণ বারাসত, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
শুরু হোক ক্লাস
ভয়ঙ্কর গরমের কারণে স্কুল-কলেজে তড়িঘড়ি গরমের ছুটি ২ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত ঘোষণা করা হল। সাধারণত এই প্রচণ্ড গরম দীর্ঘস্থায়ী হয় না। তাই একটু ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করা যেত, অথবা চার-পাঁচ দিনের ছুটি দিয়ে এই অস্থায়ী অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মোকাবিলা করে, অবস্থা বুঝে পরবর্তী সময়ে ব্যবস্থা করা যেতে পারত। মনে রাখা উচিত, গত দু’বছর ধরে করোনাকালে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার অভ্যাসটা হারিয়ে গিয়েছে। তা ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন বেশি করে স্কুল-কলেজ খোলা রাখার ব্যবস্থা করা। এই অবস্থায় এ বারের গরমে ৪৫ দিন ছুটির ঘোষণা হঠকারী সিদ্ধান্ত বলেই বিবেচিত হতে পারে। বস্তুত, বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও ইতিমধ্যে এই নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন।
এবং ওই ঘোষণার পর পরই প্রচণ্ড গরমের ভাবটা বিদায় নিতে শুরু করে। এখন তো রীতিমতো মনোরম আবহাওয়া। যে হেতু এখনও কিছুটা সময় আছে, তাই গ্রীষ্মের ছুটি স্থগিত করে অবিলম্বে আবার ক্লাস শুরু করার কথা ভাবা যেতে পারে। আর গরমের ছুটিরও মেয়াদ কমিয়ে স্বল্পকালীন ছুটির ব্যবস্থা করা হোক।
তপন কুমার দাস
কলকাতা-১২২
সঠিক সিদ্ধান্ত
রাজ্য সরকার স্কুল-কলেজে গরমের ছুটি এগিয়ে আনার জন্য শিক্ষক ও অভিভাবকদের একাংশ দীর্ঘ ছুটি চাইছেন না (‘দেড় মাসের ছুটিতে আপত্তি অনেকের’, ২৯-৪) খবরটি প্রসঙ্গে কিছু কথা। প্রথমত, সেই সব শিক্ষক ও অভিভাবকের জেনে রাখা উচিত, গ্রীষ্মের ছুটি সব জেলাতেই কমবেশি প্রায় এক মাস থাকে। সেই ছুটি ১৫ মে ধার্য করার কথা ছিল। অর্থাৎ, পঁয়তাল্লিশ দিন নয়, বরং দু’সপ্তাহের মতো ছুটি বেড়েছে। যদিও এটার মধ্যে একটু অর্ধসত্য বিদ্যমান। কারণ এর মাঝে একাধিক ছুটি, যেমন ইদের দু’দিন, রবীন্দ্রজয়ন্তী, বুদ্ধপূর্ণিমা পড়েছে। ফলে ওই দিনগুলোতে স্কুলে পঠনপাঠন বন্ধই থাকত।
এ বার প্রশ্ন হল গরমের জন্য যে ছুটি বরাদ্দ, সেই গরম যদি নির্ধারিত সময়ের আগেই ৪০ ডিগ্রির পারদ ছুঁয়ে ফেলে, তা হলে তা শিক্ষাবর্ষে প্রভাব ফেলতে বাধ্য। যেখানে প্রায় প্রতি দিন আবহাওয়া দফতর প্রচণ্ড গরমের সতর্কতা জারি করছিল, সেখানে মর্নিং স্কুল হলেও শিক্ষার্থীদের মিড-ডে মিল খাইয়ে ছুটি দিতে দিতে প্রায় সাড়ে এগারোটা বেজে যাচ্ছিল। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের জন্য তা সুখকর হচ্ছিল না। কিছু দিন আগে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মৃত্যুর পর প্রাথমিকের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে নাক দিয়ে রক্ত পড়া, ডিহাইড্রেশন, খাওয়ার পর বমি করে ফেলার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছিল। তাই এই সিদ্ধান্ত নিতেই হত। কোভিডের সময়েও এই সরকার প্রাধান্য দিয়েছিল শিশুদের স্বাস্থ্য। ফলে এ বারেও গ্রীষ্মের ছুটি এগিয়ে আনার পিছনে মাত্রাতিরিক্ত গরম ছাড়া আর কোনও কারণ নেই।
শিক্ষক, অভিভাবকদের অনেকে দাবি করেছেন, প্রথম মূল্যায়ন পরীক্ষাটা নিয়ে ছুটি হতেই পারত। কিন্তু ছুটির মধ্যেও মূল্যায়নের ব্যবস্থা আমরা দেখেছি লকডাউনের সময় অ্যাক্টিভিটি টাস্কের মধ্যে দিয়ে। স্কুল খোলার পরই পরীক্ষা নিয়ে তার পর পরবর্তী পর্বের মূল্যায়নের জন্য ছাত্রছাত্রীদের তৈরি করাই যায়। ফলে সরকারের গ্রীষ্মের ছুটি এগিয়ে আনা একদম সঠিক সিদ্ধান্ত।
প্রণয় ঘোষ
কালনা, পূর্ব বর্ধমান
কঠিন প্রশ্ন
আজ থেকে বছর পঞ্চাশ আগেও স্কুলে এবং স্কুলজীবনের শেষে পরীক্ষা দিতে হত। তার প্রশ্নপত্র সব সময় সহজও হত না। সে ব্যাপারে অভিভাবক বা শিক্ষক, কারও কাছে অভিযোগ করার কোনও রাস্তা ছিল না। এখন কিন্তু আছে। একশো নম্বরের প্রশ্নপত্রে দশ নম্বরের প্রশ্ন যদি ‘শক্ত’ হয়, তা হলে ফেসবুক, টুইটার তো বটেই, সংবাদপত্রও ভরে যায় অভিযোগের খবরে। প্রশ্ন সহজ হবে, এমন শর্তেই কি ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষায় বসতে রাজি হয়েছিল? দেখে অবাক লাগে যে, উচ্চ মাধ্যমিকের পদার্থবিদ্যার প্রশ্নের কাঠিন্য এবং গণধর্ষণের পরে খুনের ভয়াবহতা একই দিনে, একই পাতায়, একই পরিমাণ জায়গা পায় (‘কঠিন প্রশ্নপত্র’, “‘গণধর্ষণ’ করে খুন”, ২৩-৪)! আমরা এগিয়ে চলেছি?
দেবাশিষ মিত্র
কলকাতা-৭০
ঘর চাই
আমি ও আমার স্বামী ৬৩ বছর ধরে গোবরাপুর গ্রামে জীর্ণ কুঁড়ে ঘরে থাকছি। দিনমজুরের কাজ করি। সরকারি অনুদানে একটি ঘর পাওয়ার জন্য বিডিও অফিস, এমএলএ থেকে পঞ্চায়েত প্রধান— সবার কাছে দরবার করেও এখনও কিছু হয়নি। আমার আবেদন, কোনও নিরপেক্ষ তদন্ত করে আমার বর্তমান অবস্থার সঠিক মূল্যায়ন করা হোক।
সবিতা দাস
গোবরাপুর, উত্তর ২৪ পরগনা