Brahmo Samaj

সম্পাদক সমীপেষু: ব্রাহ্ম সমাজ প্রতিষ্ঠাতা

রামমোহন রায় ‘ব্রাহ্ম সমাজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন’, সর্বত্র এই যে বাক্যটি ব্যবহার হয়, সেটি তথ্যগত ভাবে ঠিক নয়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২২ ০৫:০২
Share:

যুগপ্রবর্তক শব্দটির যদি কোনও অর্থ থাকে, তা হলে তা রামমোহন রায়ের ক্ষেত্রে সুপ্রযুক্ত। তাঁর সার্ধদ্বিশতবর্ষে বাঙালি সমাজ তাঁকে যে ভাবেই স্মরণ করুক না কেন, বাঙালি সমাজের প্রতি তাঁর অবদানের তুলনায় তা কিছুই নয়।কিন্তু এই অবকাশে একটি তথ্য পেশ করা দরকার। রামমোহন রায় ‘ব্রাহ্ম সমাজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন’, সর্বত্র এই যে বাক্যটি ব্যবহার হয়, সেটি তথ্যগত ভাবে ঠিক নয়। ‘কলকাতার কড়চা’ বিভাগেও প্রকাশিত হয়েছে, ‘১৮২৮ সালে রামমোহন প্রতিষ্ঠিত ব্রাহ্ম সভা বা ব্রাহ্ম সমাজ’ (২১-৫)। ইতিহাসের তথ্য কিন্তু বলছে, এই দু’টিকে আলাদা করা দরকার। এবং ব্রাহ্ম সমাজের প্রতিষ্ঠাতা কে, বললে উত্তর হওয়া উচিত— দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (ছবি)।ইতিহাসবিদ সুশোভন সরকারের গবেষণা-প্রসূত তথ্য অনুসরণ করে দেখা যাক। আত্মীয় সভার কাজকর্ম নিয়ে সন্তুষ্ট হতে না পেরে ২০ অগস্ট ১৮২৮ সালে রামমোহন রায় এবং তাঁর সহকারীরা প্রতিষ্ঠা করেন ব্রাহ্ম সভা। একটি নিয়মিত উপাসনাস্থলও তৈরি হয় ১৮৩০ সালের জানুয়ারিতে, রামমোহনের ধর্মমতের উপর ভিত্তি করে। ব্রাহ্ম ধর্মসংস্কার আন্দোলনের প্রাথমিক সূত্রগুলি তৈরি হয় এখানেই। প্রতিবাদের ঝড় ওঠে এক দিকে হিন্দু সমাজে এবং অন্য দিকে ইয়ং বেঙ্গল সোসাইটির নেতৃত্বে। রামমোহনের প্রয়াণের পর ব্রাহ্ম সভার অবস্থা দাঁড়ায় মৃতপ্রায়। কিছু কাল পর দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর সেই ব্রাহ্ম সভাকে আবার নবরূপে জন্ম দেন। একটি প্রতিষ্ঠান হিসাবে ‘ব্রাহ্ম সমাজ’ তৈরি হয় ১৮৪৩ সালের ডিসেম্বরে— বাংলা তারিখ, ৭ পৌষ।রামমোহনের ব্রাহ্ম সভা আর দেবেন্দ্রনাথের ব্রাহ্ম সমাজের মধ্যে সাংগঠনিক পার্থক্য তো ছিলই, কিছু মতাদর্শগত তফাতও ছিল। দেবেন্দ্রনাথের ব্রাহ্ম সমাজ আন্দোলনের একটি স্পষ্ট উদ্দেশ্য ছিল (সুশোভন সরকারের ভাষায় ‘আ শার্প এমফ্যাসিস’)— ইয়ং বেঙ্গলের বিপরীতে ভারতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির উপর জোর দেওয়া। দেবেন্দ্রনাথের নেতৃত্বে যে মিশনারি-বিরোধী আন্দোলন তৈরি হয়, তার সঙ্গে নৈকট্য ছিল রাধাকান্ত দেব চালিত রক্ষণশীল হিন্দু গোষ্ঠীরও। ফলে ইতিহাস-মতে, ব্রাহ্ম সমাজের প্রতিষ্ঠাতা রূপে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামটি বলাই সঙ্গত। তিস্তা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা-৯১

Advertisement

সাম্যের সন্ধান

‘কেন আজ তাঁকে দরকার’ শীর্ষক প্রবন্ধটিতে (৪-৫) দীপঙ্কর ভট্টাচার্য লিখেছেন, “...আজ চার দিকে আবার ফ্যাসিবাদ ও যুদ্ধের নাগিনীদের বিষাক্ত নিঃশ্বাস। এই কঠিন সময়ে বিপন্ন মানবজমিনে সোনা ফলাতে আবার সেই সাম্যের কারিগরকে (মার্ক্স) চাই।” প্রশ্ন, সভ্যতার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত কখন, কোন সময়ে রাষ্ট্রজীবনে ফ্যাসিবাদ ছিল না? সমাজ শোষণমুক্ত ছিল কোন ব্যবস্থায়— রাজতন্ত্র, ধনতন্ত্র, সামন্ততন্ত্র, সমাজতন্ত্র বা কমিউনিজ়ম?সোভিয়েট রাশিয়ার যে রেড আর্মি হিটলারের অত্যাচার থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পূর্ব ও মধ্য ইউরোপের দেশগুলিকে বাঁচিয়েছিল, যুদ্ধের পরে সেই রক্ষকই ভক্ষক হয়ে যায়। তারা ইউরোপের ওই সব দেশ থেকে সম্পদ লুট করতে থাকে। এমনকি সোভিয়েট ইউনিয়নে থাকা মধ্য এশিয়ার দেশগুলি থেকেও সম্পদ নিয়ে মস্কোর ভান্ডারে জমা করে। কোথায় গেল সাম্যবাদ, কমিউনিস্ট আদর্শ? তথাকথিত সোভিয়েট দেশগুলি স্বৈরাচারী রাশিয়া থেকে নিজেদের মুক্তি ঘোষণা করে ১৯৮৯ সালের পরে স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্ররূপে আত্মপ্রকাশ করে। আজকের রাশিয়া বা চিনের মধ্যে সাম্য বলে কিছু আছে কি? পুতিন বা চিনফিং কোন অর্থে সাম্যবাদী? চিন বা রাশিয়ার বৈদেশিক নীতি আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী নীতির থেকে কত আলাদা?চিন, রাশিয়া, ভিয়েতনাম-সহ পৃথিবীর ২১টি তথাকথিত কমিউনিস্ট দেশে ভ্রমণ করার এবং সেখানকার মানুষের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছে এই পত্রলেখকের। ওই সব দেশে কোথাও সাম্যের ছিটেফোঁটাও চোখে পড়েনি। বরং ভারত-সহ পৃথিবীর বহু দেশে যে বাক্‌স্বাধীনতা আছে, ওই দেশগুলির মানুষের তা-ও নেই। তাত্ত্বিক পণ্ডিত বামপন্থীরা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার তাগিদে আজও মার্ক্সবাদ বা সাম্যবাদের চর্চা করেন। আলোচ্য প্রবন্ধটি তারই দৃষ্টান্ত।কুমার শেখর সেনগুপ্তকোন্নগর, হুগলি

Advertisement

বাম ঐক্য

কার্ল মার্ক্সের ২০৫তম জন্মদিনের আগে ‘কেন আজ তাঁকে দরকার’ প্রবন্ধটি প্রকাশ করার জন্য ধন্যবাদ। ভারতের সম্পদ মুষ্টিমেয় মানুষের হাতে পুঞ্জীভূত হচ্ছে, ধনী আরও ধনী হচ্ছে, গরিব আরও গরিব। এই ব্যবস্থার পরিবর্তনের জন্য তাঁর দর্শনই একমাত্র বাঁচার পথ। কিন্তু এটা দুঃখের হলেও সত্য যে, আমাদের দেশে বামপন্থী আন্দোলন গড়ে তোলার মতো অনুকূল পরিস্থিতি থাকা সত্ত্বেও গরিব, মেহনতি মানুষের লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিতে পারছে না বামপন্থী দলগুলো। ফিদেল কাস্ত্রো যখন ভারতে এসেছিলেন, তিনি ভারতের বাম নেতাদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, “আপনাদের দেশে এতগুলো কমিউনিস্ট পার্টি কেন?” প্রশ্নটা সেখানেই। কার্ল মার্ক্সের দর্শনকে সঠিক ভাবে প্রয়োগ করতে হলে সবার আগে বাম ঐক্যের দরকার। তবেই শ্রমজীবী মানুষের লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।শেষাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায়ভদ্রেশ্বর, হুগলি

শ্রেণি নয়, জাত

‘কেন আজ তাঁকে দরকার’ প্রবন্ধটির মূল সুরটি যেন এলোমেলো হয়ে গেল। ভারতে কার্ল মার্ক্সকে আজও কেন দরকার, সেই কারণটা অনুল্লিখিত রয়ে গেল। বিশ্বের অন্যান্য দেশে মার্ক্সের শ্রেণিতত্ত্ব চললেও ভারতের নিরিখে শ্রেণিতত্ত্ব অচল পয়সা। শ্রেণি নয়, জাতপাতই মূল বিচার্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। মার্ক্স সাহেবও সেটি উপলব্ধি করেছিলেন। ২৫ জুন, ১৮৫৩ ব্রিটিশ রুল ইন ইন্ডিয়া গ্রন্থে তিনি বললেন, ভারতের অগ্রগতি ও শক্তিলাভে সবচেয়ে বড় বাধা জাতপাত। তিনি সুদক্ষ ডাক্তারের ন্যায় মূল অসুখ ধরতে পারলেন, কিন্তু অসুখ সারানোর ওষুধ দিতে পারলেন না। তার পরেও যতটুকু মার্ক্সবাদ ভারতে আনা হল, সবটুকুকেই শ্রেণিতত্ত্বের শিকলে বেঁধে ফেলা হল। ঠিক যে ভাবে সাম্যবাদের প্রবক্তা গৌতম বুদ্ধকে আত্তীকরণ ও হজম করে ফেলেছে ব্রাহ্মণ্যবাদের সৃষ্টিকর্তারা, সেই রূপ মার্ক্সকেও নিজেদের মতো করে, নিজেদের প্রয়োজনে ‘মার্কেটিং’ করে গিয়েছেন, এবং আজও করছেন ব্রাহ্মণ্যবাদের হর্তাকর্তারা। তাঁরা মার্ক্সবাদী হননি, মার্ক্সবাদী সেজেছেন। এই বঙ্গের এক প্রয়াত বাম মন্ত্রীর ভাষ্য ছিল, “আমি আগে ব্রাহ্মণ, পরে কমিউনিস্ট।” এই ভাষ্য ভারতের কমিউনিস্ট নেতৃত্বের প্রায় একশো শতাংশেরই। মার্ক্সের কথার আট দশক পরেও তৎকালীন চিনা কমিউনিস্ট পার্টি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বদের অনুরোধ করেন জাতব্যবস্থার বিরুদ্ধে সর্বশক্তিতে লড়াই করতে। সেই কথা অবশ্য শোনা হয়নি। এখানে আরও একটি বিষয়ের কথা উল্লেখ করলে অপ্রাসঙ্গিক হবে না। বাবাসাহেব আম্বেডকরের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও লড়াইয়ের ফলে লন্ডনের গোলটেবিল বৈঠক থেকে অস্পৃশ্য সমাজের মানুষ যে সকল রাজনৈতিক অধিকার অর্জন করলেন, সেই অধিকারের বিরুদ্ধে পুরোদস্তুর মাঠে নেমে পড়েছিলেন তৎকালীন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির ১৮ জন শীর্ষস্থানীয় নেতা। তাঁরা যে কেবলমাত্র রাজনৈতিক অধিকার অর্জনের বিরুদ্ধে ছিলেন তা-ই নয়, বাবাসাহেবের নেতৃত্বে যে অস্পৃশ্যতা-বিরোধী আন্দোলন চলছিল, তারও ঘোর বিরোধী ছিলেন। ভারতের মাটিতে প্রকৃত সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠা করতে হলে গৌতম বুদ্ধের দর্শনকেই প্রয়োগ করতে হবে। ভারতের কমিউনিস্টরা বাবাসাহেবের বুদ্ধ অর কার্ল মার্ক্স বইটি পড়ে নিতে পারেন।সমীরণ বিশ্বাসচাকদহ, নদিয়া

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement