সম্পাদক সমীপেষু: কী হয়েছিল কী হয়নি

প্রথমত এই সাক্ষাৎকার যিনি দিয়েছেন, তিনি যে ভাবে অজিতেশের মৃত্যুকালীন ঘটনার এবং কারণের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন, তা একমাত্র এমন কারও পক্ষেই দেওয়া সম্ভব যিনি সেই মুহূর্তে সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৮ ০১:১৭
Share:

অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনের অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত আমি তাঁর সঙ্গে ছিলাম। অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনের সব সুখ-দুঃখ, ব্যথা-যন্ত্রণা সংগ্রামের সঙ্গে জড়িয়ে, সব ঘটনার সাক্ষী হয়ে আজও আছি। অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর শেষ নিঃশ্বাসটুকুও ত্যাগ করেছেন আমারই হাত ধরে। কিন্তু সম্প্রতি এই সংবাদপত্রে প্রকাশিত (রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে) লিখিত প্রতিবেদন (‘চেহারাটা যেমন বিরাট ছিল...’, পত্রিকা, ১৯-৫) পড়ে আমি বিস্মিত এবং ক্ষুব্ধ।

Advertisement

প্রথমত এই সাক্ষাৎকার যিনি দিয়েছেন, তিনি যে ভাবে অজিতেশের মৃত্যুকালীন ঘটনার এবং কারণের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন, তা একমাত্র এমন কারও পক্ষেই দেওয়া সম্ভব যিনি সেই মুহূর্তে সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ঘটনা হল, সেখানে ছিলাম একমাত্র আমি। সাক্ষাৎকার যিনি দিয়েছেন, তিনি সেখানে তো দূরের কথা, কয়েক মাইল দূরত্বেও ছিলেন না। তিনি বলেছেন, ১২টা রুটি আর ঠান্ডা মাংস খেয়ে অজিতেশ অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রশ্ন এই, ১২টা রুটি উনি কী করে গুনে দেখলেন বহু বহু দূর থেকে? মাংসটা যে ঠান্ডা, সেটাই বা কী করে বোঝা গেল? কোন মন্ত্রবলে? দ্বিতীয়ত, সাক্ষাৎকার-দাতা ঠান্ডা মাংসের কারণ হিসেবে বলেছেন, কেউ ছিল না খাবার গরম করে দেওয়ার মতো।

অজিতেশের জীবনে যত দিন আমি এসেছি, তার আগে কবে কোথায় কোনখানে তিনি ১২টা রুটি খেয়েছেন, আমার জানা নেই। কিন্তু ওঁকে কোনও দিন ১২টা রুটি খেতে দেখিনি। অজিতেশের উচ্চ রক্তচাপ ছিল। তখনকার বিখ্যাত ডাক্তার হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞ সুনীল সেন ওঁর চিকিৎসা করতেন। ওঁর সুগারের সমস্যা না থাকা সত্ত্বেও ডক্টর সুনীল সেন ওঁর দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা তৈরি করে দিয়েছিলেন, যাতে পাঁচটার বেশি রুটি ওঁর বরাদ্দ ছিল না। এ নিয়ে একটা রুটি বেশি খাওয়ার বায়নাও করেননি অজিতেশ। ডাক্তারের কথা তিনি পালন করতেন বেদবাক্যের মতো। তেমনই ছিল আমার রান্নাবান্নায় সাহায্যকারিণী সুভদ্রা। সুভদ্রা আধখানা রুটিও বেশি বানাত না ওর কাকুর জন্য।

Advertisement

দ্বিতীয় প্রসঙ্গ— বাড়িতে কেউ না থাকার ব্যাপার। সে দিন দুর্গাপুজোর সপ্তমী। সুজাতা সদনে ‘এই অরণ্যে’ নাটকের শেষে অজিতেশ আমাকে তুলে নেওয়ার জন্য শ্যামবাজারে আমার বাপের বাড়ি আসেন। গাড়িতে ছিলেন দুজন। নাটকটির পরিচালক তপেন্দু গঙ্গোপাধ্যায় আর অভিনেতা গৌতম চক্রবর্তী। অজিতেশ ওঁদের দুজনকে পাইকপাড়া এবং লেকটাউনে নামিয়ে দিয়ে আমাকে নিয়ে বেলেঘাটায় পৌঁছন। ঘড়িতে তখন রাত ১১টা। পাড়ার বিখ্যাত দুটি ক্লাব ‘সন্ধানী’ আর ‘নবমিলন’। ‘সন্ধানী’র ছেলেরা অজিতেশের গাড়িটা আটকে ওঁকে অনুরোধ করে কিছু ক্ষণের জন্য প্যান্ডালে থাকতে। অজিতেশ ‘কাল আসব’ কথা দিয়ে বাড়ি চলে আসেন। সঙ্গে আমি। সন্ধানীর উপস্থিত ছেলেরা সবাই এই ঘটনার সাক্ষী। আমার প্রশ্ন, দু’পা এগিয়ে চার তলা উঠতে উঠতে আমি কোথায় অদৃশ্য হয়ে গেলাম, যে অজিতেশকে বাড়িতে খাবার গরম করে দেওয়ারও কেউ রইল না!

তৃতীয়ত সাক্ষাৎকার-দাতা বলেছেন, সারা রাত হজমের গোলমাল মনে করে ওরা (‘ওরা’টা কারা, তা আমি বুঝতে পারছি না, কারণ বাড়িতে কোনও বহুবচনের অস্তিত্ব ছিল না, ছিলাম আমি আর অজিতেশ) সারা রাত পেটে তামার পয়সা বুলিয়ে কাটিয়ে দেয়, ডাক্তার না ডেকে। হায় ভগবান! কোথায় পাব সারাটা রাত? একটা পঁয়তাল্লিশ মিনিটের মধ্যে তো সব শেষই হয়ে গিয়েছে। সাড়ে বারোটা নাগাদ যখন ওঁর শরীর খারাপ বোধ হয়, আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করে ছেলেদের ডাকাডাকি করি। পুজোর দিন পাড়ায় ছেলেদের অভাব ছিল না। ‘সন্ধানী’, ‘নবমিলন’-এর ছেলেরা দৌড়ে আসে চার তলায়। দলে দলে ছেলেরা ছুটে আসতে থাকে। মুখে একটাই কথা ‘অজিতেশদার শরীর খারাপ’। যে যেখান থেকে পারে ডাক্তার আনতে ছোটে। কিছু ক্ষণের মধ্যে পাঁচ-ছয় জন ডাক্তারও এসে পড়েন। ঘুমন্ত ডাক্তারকেও তুলে নিয়ে এসেছে ছেলেরা, যাঁরা জামা-প্যান্টটাও ঠিকমতো পরে উঠতে পারেননি। কিন্তু কারওই কিছু করার ছিল না। আমি ডাক্তারদের জনে জনে জিজ্ঞেস করেছি, ‘কী করতে হবে বলুন, কোথায় নিয়ে যেতে হবে?’ ওঁরা নীরবে মাথা নিচু করে থেকেছেন। তার পর পাড়ার ছেলেরাই সারা রাত গাড়ি নিয়ে পাগলের মতো ছোটাছুটি করেছে সারা শহর, যেখানে যেখানে খবর পৌঁছে দিতে হবে।

অথচ সাক্ষাৎকার-দাতা তখন দিব্যদৃষ্টিতে দেখছেন কে সারা রাত অজিতেশের পেটে তামার পয়সা বুলিয়ে দিচ্ছে!

রত্না বন্দ্যোপাধ্যায় ই-মেল মারফত

রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তের উত্তর:

ওই শোকময় দিনে যখন অজিতেশের ওখানে যাই, সেখানে উপস্থিত কয়েক জনের মুখ থেকে এই কথাগুলো আমি শুনতে পাই। শনিবারের পত্রিকায় প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে সেই কথাগুলোই আমি বলেছি। ৩৪ বছর আগেকার কথা স্মরণে যতটুকু ছিল, সেখান থেকেই কথাগুলো বলা। সেখানে বিস্মরণ হয়ে থাকতেই পারে। কিন্তু কাউকে দুঃখ দেওয়ার জন্য কিছু বলতে চাইনি। বন্ধুর প্রতি ভালবাসা থেকেই সব কথা বলা। যদি কেউ আমার কথায় আঘাত পেয়ে থাকেন, আমি দুঃখিত।

বিদ্যায় বৈষম্য

‘স্কুলের সঙ্গে দূরত্ব কমুক সমাজের, উদ্যোগী রাজ্য’ (২০-৩) শীর্ষক প্রতিবেদন প্রসঙ্গে কয়েকটি কথা জানাতে চাই। অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের সাম্প্রতিক লেখা ‘দ্য কান্ট্রি অব ফার্স্ট বয়’ বইটিতেও বিদ্যাচর্চার ক্ষেত্রে বৈষম্যের কথা উল্লিখিত হয়েছে। আজ থেকে প্রায় ৫৫/৫৬ বছর আগের কথা। আমাদের গ্রামে যে প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল, আমরা গ্রামের সকলেই সেখানে পড়াশোনা করতাম। গ্রামের ডাক্তারবাবুর ছেলে, সেই সময়ে গ্রামের একমাত্র রিকশাচালকের ছেলে এবং আমি— সহপাঠী ছিলাম। আমার বাবা ছিলেন একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। আমাদের সকলের পঠনপাঠনে কিন্তু ওই ডাক্তারবাবু, আমার বাবার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান ও নজরদারি থাকত। যার সুফল আমাদের সব সহপাঠী পেত। উল্লেখ্য যে ওই রিকশাচালকের ছেলে খড়্গপুর আইআইটি থেকে বি টেক পাশ করে সুপ্রতিষ্ঠিত আর আমার সহপাঠী ডাক্তারবাবুর ছেলে তার কর্মজীবন সম্প্রতি শেষ করেছে একটি আধাসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে। আমিও আমার প্রশাসনিক কর্মজীবন থেকে অবসর নিয়েছি। ইদানীং লক্ষ করছি, আমাদের পরিবারের ছেলেমেয়ে আর রিকশাওয়ালা, খেতমজুরের ছেলেমেয়েরা একই বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে— তা প্রায় বিরল। আমার প্রশাসনিক কাজের দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় উপলব্ধি করেছি, শুধু প্রতিষ্ঠান তৈরি করলেই কাজ শেষ হয় না। অত্যন্ত প্রয়োজন হল তার সর্বজনীন স্বীকৃতি ও গ্রহণযোগ্যতা।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির উৎকর্ষের ক্ষেত্রে সামাজিক রীতিরও বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু লিখেছেন, একই অর্থনৈতিক ও আইনি পরিকাঠামোর মধ্যে থেকেও সামাজিক রীতির ফারাকের জন্য মহারাষ্ট্রে শিক্ষকদের বিদ্যালয়ে ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা অন্য কিছু রাজ্যের তুলনায় কম। মহারাষ্ট্রে যে হেতু কম সংখ্যক শিক্ষক ফাঁকি দেন, তাই সমাজ এটিকে ঘোরতর অন্যায় বলে মনে করে। ফলে বিদ্যালয়ে ফাঁকি দেওয়ার সামাজিক মূল্য এত বেশি যা সকলকে এ কাজ থেকে বিরত রাখে। সব সরকারি পরিষেবার ক্ষেত্রে এই সামাজিক রীতির বড় ভূমিকা থাকে।

অরবিন্দ ঘোষ কলকাতা-১০৬

সত্যজিতের গল্প

‘পুস্তক পরিচয়’ বিভাগে (১৫-৪) লেখা হয়েছে, সত্যজিৎ রায়ের প্রথম মৌলিক গল্প ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়রি’| ওটি তাঁর প্রথম মৌলিক বাংলা গল্প। তার অনেক আগে তিনি দুটি ইংরেজি গল্প লেখেন: Abstraction এবং Shades of Grey. এগুলি প্রকাশিত হয় অমৃতবাজার পত্রিকার ক্রোড়পত্রে, ১৮ মে ১৯৪১ ও ২২ মার্চ ১৯৪২।

সৌরিত দে চুঁচুড়া, হুগলি

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement